বিদ্যুৎ উন্নয়ন অব্যাহত

জাতীয় গ্রিডে কুতুবদিয়া

প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

দেশে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অনেক আগেই অর্জিত হয়েছে। তার পরও এর উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রয়েছে। সারাদেশকে বিদ্যুতের আওয়তায় আনা সম্ভব হলেও তা জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। বিশেষ করে বেশ কয়েকটি দ্বীপ অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়েছিল। এর মধ্যে কুতুবদিয়া দ্বীপ অন্যতম। কুতুবদিয়া একটি উপজেলা। ডাবল সারকিট সাবমেরিন লাইন স্থাপনের ফলে কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিড থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে। দেশের অন্যান্য এলাকার মত কুতুবদিয়াবাসী জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ পাবে জেনে আনন্দ প্রকাশ করেছে।

সারাদেশ এখন জাতীয় গ্রিডের আওতায়। সবাই সমভাবে বিদ্যুৎ পাবে। কেউ বঞ্চিত হবে না। আগে কুতুবদিয়ায় জেনারেটরের মাধ্যমে কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ দেওয়া হতো। পরে হাওয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে বিদ্যুৎ দেয়ার চেষ্টা করা হয়; কিন্তু সেটাও তেমনভাবে সফল না হলে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। এখন আর কুতুবদিয়াবাসীকে বিদ্যুতের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। জাতীয় গ্রিড থেকেই তারা বিদ্যুৎ পাবে। ঘরে ব্যবহার করার পরেও তারা শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে। এই বিদ্যুতের ফলে কুতুবদিয়া দ্বীপ আর দ্বীপ থাকবে না। শিল্প, কলকারখানার এক আধুনিক এলাকায় পরিণত হবে। জাতীয় অর্থনীতিতেও কুতুবদিয়া ভূমিকা রাখতে পারবে। বিদ্যুৎ পাওয়ার ফলে কুতুবদিয়া আর কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার ফলে কুতুবদিয়ায় পর্যটন শিল্প গড়ে উঠবে। বিভিন্ন দেশের দ্বীপ অঞ্চলগুলো পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়। আমরা যদি আমাদের দ্বীপগুলোকে বিদেশি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করতে পারি, তাহলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে আমরা লাভবান হতে পারব। যে কোনো উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ অপরিহার্য। তাই আমরা এখন কুতুবদিয়াসহ আরও যেসব দ্বীপ আছে, সেখানে উন্নয়ন কাজ শুরু করতে পারি বিদেশি পর্যটকদের জন্য। সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া এখন উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যাবে। বলা দরকার যে, সারাদেশকে বিদ্যুতের আওতায় আনার জন্য সরকার ২০১৯ সালে কুতুবদিয়ার জন্য ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর পর ২০২০ সালে কুতুবদিয়া, হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপকে শতভাগ নির্ভরযোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য সরকার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। এই তিনটি দ্বীপকে আলোকিত করার জন্য ৭২০ কিলোমিটার সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন স্থাপন করা হচ্ছে, যা অচিরেই শেষ হবে।

বিদ্যুৎ উন্নয়নের চাবিকাঠি। বিদ্যুৎ ছাড়া কোনো কিছুই সম্ভব নয়। তাই বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই বিদ্যুৎ নিয়ে চিন্তা করে এবং যে কোনো মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাতে সফল হয়। এমনটি হয়েছিল বলেই আজ সারাদেশ বিদ্যুতের আওতায় আসতে পারল।

প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জিত হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা প্রথম দিকে তা সামাল দিতে না পারলেও এখন তা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। এখন প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। অচিরেই আরও স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আমরা আশা করব, সরকার বিদ্যুৎ যেভাবে সরবরাহ করতে পারছে তা যেন অব্যাহত থাকে এবং গ্রাহক পর্যায়ে যেন দাম কমিয়ে আনা যায়- সে ব্যাপারে বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা আমরা যেভাবে মোকাবিলা করে টিকে আছি, তাতে এ টেকসই ব্যবস্থা আরও সহজ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।