মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পে সংকট

দ্রুত সমাধান জরুরি

প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সভ্যতার অগ্রগতি তথা শিক্ষা মনন বিকাশে মুদ্রণ ও প্রকাশনার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অথচ কঠিন সময় পার করছে দেশের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্প। এলসি জটিলতায় সংকট চরম রূপ ধারণ করেছে। মুদ্রণ সংশ্লিষ্ট কাঁচামাল আমদানি করতে পারছেন না আমদানিকারকরা। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের খরচ। সরাসরি যার প্রভাব পড়েছে ভোক্তা পর্যায়ে। ফলে সংকট আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তথ্য অনুযায়ী, বাজারে দীর্ঘদিন ধরে কাগজের সংকট চলছে। চাহিদা অনুযায়ী মিলারদের কাছে পণ্য পাচ্ছেন না তারা। এতে করে পণ্যের দামও বেড়েছে। নতুন করে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ায় কাগজের দাম আরও বৃদ্ধির শঙ্কা করছেন তারা। আর বলাই বাহুল্য, উদ্ভূত এই সংকট হঠাৎ সামনে আসেনি, এই নিয়ে মিডিয়া এবং সংশ্লিষ্টরা তাদের উদ্বেগের কথা প্রকাশ করে এলেও কার্যত কোনো সমাধান লক্ষ করা যায়নি। কাগজ সংকটে এবার শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে তাদের পাঠ্যবই হাতে পায়নি, অনেক স্কুল এখনও পুরোপুরিভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে হিমশিম খাচ্ছে। আর এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, বছরের শুরুতে কাগজের অনেক চাহিদা থাকে। শিক্ষার্থীরা নতুন স্কুল-কলেজে ওঠার কারণে এই চাহিদা বাড়ে। তবে চাহিদা থাকলেও এবার কাগজ সরবরাহ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। আর একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই ছাপাতেও প্রকাশকদের চাপে থাকতে হচ্ছে। এভাবে বইয়ের দাম যেমন বাড়ছে, তেমনি শিক্ষার্থীদের অধিক দামে কাগজ ও খাতা কিনতে হচ্ছে, যা অনভিপ্রেত।

উল্লেখ্য, কাগজ তৈরির প্রধান কাঁচামাল মণ্ড বা ভার্জিন পাল্প। এটি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। তবে বর্তমান ডলার সংকটে প্রয়োজনীয় পাল্প আমদানি করা যাচ্ছে না। সংগত কারণেই আমদানিকারকরা বলছেন, এলসি জটিলতা না কমলে বাজারে কাগজের সংকট ঠিক হবে না। আর কাগজের এই সংকট সরাসরি মুদ্রণ শিল্পে প্রভাব ফেলবে- এটাই স্বাভাবিক। কারণ এই শিল্পের প্রধান কাঁচামাল কাগজ। কাঁচামাল না হলে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান চালানোর কোনো সুযোগ নেই। কাগজ পাওয়ার পর কালি, প্লেট, গ্লু আমদানি করতে হয়। তবে ডলার সংকটে এসব কাঁচামাল আমদানিও করা যাচ্ছে না। এতে এই শিল্পে বড় ধাক্কা লাগার উপক্রম তৈরি হয়েছে। শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কাও করেছেন মুদ্রণ শিল্প সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এখন অনেক প্রতিষ্ঠান খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। স্মর্তব্য, করোনার মধ্যে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এখন আবার সেই পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। লেখা ও ছাপার কাগজে শুল্কহার না কমালে এই সমস্যা দীর্ঘায়িত হবে বলে ধারণা। আরেকটি ভয়াবহ তথ্য হলো, কাগজ সংকটে পত্রিকা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে গেছে। অথচ বাস্তবতা হলো, এখন কাগজের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। কারণ বিদেশে পণ্যের দাম অনেক কমেছে। বিদেশে পাল্পের দাম অনেক কম। কিন্তু এলসি হচ্ছে না বলে এই সুবিধা দেশের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্প ভোগ করতে পারছে না। ফলে ভোগান্তি পোহাচ্ছে ভোক্তারা।

মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্প তো বটে, সৃজন-মননশীলতার বাহন গ্রন্থ প্রকাশ, শিক্ষা কার্যক্রম সুগম এবং সংবাদপত্রের প্রকাশ নির্বিঘ্ন করতে অবশ্যই উদ্ভূত সংকটের সমাধান জরুরি। এ জন্য প্রথমেই এলসি জটিলতা কমাতে হবে। আর গ্যাস-বিদ্যুৎতের দাম বাড়লে যে এর সর্বগ্রাসী প্রভাব সর্বত্র বিস্তারিত হয়, মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পেও তা লক্ষণীয়। তাই যখন তখন গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো থেকে সরে আসতে হবে। মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের স্বাভাবিক গতি রক্ষায় জরুরিভিত্তিতে কাগজ এবং সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানির ব্যবস্থা করা দরকার। এই নিয়ে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে- এটাই প্রত্যাশা।