স্মার্ট কৃষিব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে

রেজাউল করিম খোকন, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ও কলাম লেখক

প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বর্তমানে আমরা এমন এক যুগসন্ধিক্ষণে অবস্থান করছি, যাকে সহজেই ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব’ বা ‘ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন’ বা ‘ফোর আইআর’ বা ‘ইন্ডাস্ট্রি ফোর পয়েন্ট জিরো’র শুরুর লগ্ন বলা যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষি খাতে, বিশেষত বাংলাদেশের কৃষিতে ফোর আইআরের প্রভাব, সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ এবং তা মোকাবিলায় আমাদের করণীয় কী? কৃষি খাতের আঙ্গিকে বলা যায়, এ প্রযুক্তি পরিবেশের ওপর ন্যূনতম প্রভাব ফেলে কম খরচে অধিক ফলন ও পুষ্টি নিশ্চিত করে। সে বিবেচনায় উন্নত বিশ্বের কৃষিব্যবস্থা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। ভবিষ্যতে কৃষি খাতে এর ব্যবহার কল্পনাতীতভাবে বাড়বে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আর এর প্রভাব বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থায়ও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা যদি এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে না পারি, তাহলে পিছিয়ে পড়ব, সন্দেহ নেই। এ কথা স্পষ্ট, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ফলে একদিকে যেমন কৃষিসংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগের ধরনের পরিবর্তন হবে, অন্যদিকে তেমন সরকার তথা জনগণের ওপরও এর বিশাল প্রভাব পড়বে। আবহাওয়া, জলবায়ু ও পরিবেশ ঠিক রেখে কম খরচে মানসম্পন্ন ও নিউট্রিশনসমৃদ্ধ কৃষিপণ্য উৎপাদনে চাপ তৈরি হবে, রোবটের ব্যাপক ব্যবহার কৃষিতে, বিশেষ করে উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ খাতে কর্মসংস্থান সংকুচিত করবে। ট্র্যাডিশনাল সেমি স্কিলড বা ননস্কিলড জনবল কাজ হারাবে। পাশাপাশি এ কথাও সত্যি, ফোর আইআর সংশ্লিষ্ট আরও অনেক নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। কৃষি খাত ছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রকৌশল, আমদানি-রপ্তানি সব ক্ষেত্রে ব্যবসার ধরন পাল্টে যাবে। স্বাভাবিকভাবেই সরকারি কার্যক্রমে এর ধাক্কা এসে লাগবে এবং সে অনুযায়ী প্রশাসন ও রাষ্ট্রযন্ত্র প্রভাবিত হবে। কাজেই আমাদের উচিত হবে, এখন থেকেই সিরিয়াসলি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী বিশাল জনবল গড়ে তোলার নিমিত্তে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেয়া।

বরাবরই আমাদের কৃষিতে কিছু প্রচলিত চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন কৃষিজমি হ্রাস, আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষিজমির ক্ষুদ্রায়তন, কৃষিশ্রমিক-সংকট, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি। পাশাপাশি ফোর আইআর বাস্তবায়নে বেশ কিছু নতুন চ্যালেঞ্জ আবির্ভূত হয়েছে, যেমন ১. প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব, ২. নলেজ গ্যাপ, ৩. ধীরগতির ইন্টারনেট, ৪. দেশীয় হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের অভাব, ৫. কৃষক পর্যায়ে ট্যাব/স্মার্টফোনের অভাব, ৬. আইনগত জটিলতা, ৭. মোটিভেশনের অভাব ইত্যাদি। কৃষি মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুতের কাজ হাতে নিয়েছে। এটুআইয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে কৃষি মন্ত্রণালয়াধীন সব দপ্তর বা সংস্থা থেকে তিন ক্যাটাগরিতে প্রস্তাবিত কার্যক্রম যাচাই-বাছাইপূর্বক কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে। এ কথা বলতেই হয়, এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয় স্পষ্টত এগিয়ে আছে এবং শিগগিরই একটি পরিপূর্ণ কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়ে কার্যক্রম শুরু করতে পারবে বলে আশা করা যায়। আমাদের মনে রাখতে হবে, ২০৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে প্রায় ৯৭০ কোটি এবং বাংলাদেশের জনসংখ্যা হবে প্রায় ২২ কোটি; কাজেই এ বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার বিষয়টি মাথায় রেখে, এসডিজিকে সামনে নিয়ে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি ফোর পয়েন্ট জিরোর কর্মপরিকল্পনা ঢেলে সাজাতে হবে। আশা করা যায়, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের কৃষি খাত স্পষ্টত এগিয়ে থাকবে।

বহুমুখী কৃষিপণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য একটি বৈচিত্র্যময় কৃষিপণ্যেরও হাব হয়ে উঠতে পারে। তার জন্য দরকার স্মার্ট কৃষি ও তার সফল বাস্তবায়ন। কৃষি বাংলাদেশের উন্নয়নের ভিত্তিমূল। কৃষির ওপর ভিত্তি করেই বহু দেশে শিল্পবিপ্লব ঘটেছে। আমাদের দেশেও তা-ই হয়েছে। স্মার্ট এগ্রিকালচার বা ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার অনেকের কাছে বেশ পরিচিত টার্ম হলেও কৃষক পর্যায়ে এটির ধারণা এখনও বেশ অস্বচ্ছ। এটিকে পরিচিতি করানোর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর। কৃষিতে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব তথা ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে বেশ আগেই। এসব প্রযুক্তিগত সুফল সম্প্রতি কৃষিতে জাগরণ সৃষ্টি করেছে। ধীরে ধীরে এর ব্যাপকতা আরও বাড়বে। বর্তমানে বহু অনলাইন পরিষেবা বাড়ছে। এসবের প্রভাবে কৃষি অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। বিপুলসংখ্যক প্রযুক্তিপ্রেমী তরুণ-যুবক কৃষি ব্যবসায় উদ্যোক্তা হচ্ছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ইত্যাদির মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আবির্ভাবের কারণে ভবিষ্যতে এর প্রভাব কৃষিতেও পড়বে। সব স্তরের কৃষক ডিজিটাল জীবনধারায় অভ্যস্ত হয়ে উঠবে একসময়। আর তখনই স্মার্ট কৃষিই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার নিয়ামক হিসাবে কাজ করবে। এবার আসা যাক মূল কথায়, ‘স্মার্ট ফার্মিং বা কৃষি’ বলতে আমরা কী বুঝি? বিদ্যমান কৃষিব্যবস্থার সঙ্গে এর পার্থক্যই-বা কী? স্মার্ট কৃষির উপকারিতাই-বা কী? ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে ‘স্মার্ট কৃষি’ কতটুকু অবদান রাখবে? স্মার্ট এগ্রিকালচার একটি মোটামুটি নতুন শব্দ। ‘স্মার্ট’ হলো সুনির্দিষ্ট, পরিমাপযোগ্য, অর্জনযোগ্য, প্রাসঙ্গিক এবং সময়ভিত্তিক লক্ষ্যগুলোর পাঁচটি উপাদানের সংক্ষিপ্ত রূপ। স্মার্ট ফার্মিং বিশেষজ্ঞ অ্যাঞ্জেলা শুস্টারের মতে, বিশ্ব জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য কম পরিমাণে বেশি খাদ্য উৎপাদনে স্মার্ট ফার্মিংয়ের গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষ করে, স্মার্ট ফার্মিং প্রাকৃতিক সম্পদ ও ইনপুটগুলোর আরও দক্ষ ব্যবহার, জমির উত্তম ব্যবহার এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধি করতে সক্ষম করে তোলে। স্মার্ট এগ্রিকালচার শব্দটি খামারে ইন্টারনেট অব থিংস, সেন্সর, লোকেশন সিস্টেম, রোবট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো প্রযুক্তির ব্যবহারকে বোঝায়। চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো শস্যের গুণমান এবং পরিমাণ বৃদ্ধি করা এবং ব্যবহৃত মানবশ্রমকে অপটিমাইজ করা।

স্মার্ট এগ্রিকালচারের তিনটি প্রধান উদ্দেশ্য হলো, টেকসই কৃষি উৎপাদনশীলতা এবং আয় বৃদ্ধি করা; জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এবং স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করা এবং যেখানে সম্ভব গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস অথবা অপসারণ করা। স্মার্ট ফার্মিং স্প্রে অপচয় কমানো থেকে জ্বালানি অর্থনীতির উন্নতি সাধন করতে পারে। স্মার্ট কৃষিতে ব্যবহৃত প্রযুক্তির উদাহরণ হলো : যথার্থ সেচ এবং সুনির্দিষ্ট উদ্ভিদ পুষ্টি; গ্রিনহাউজে জলবায়ু ব্যবস্থাপনা এবং নিয়ন্ত্রণ; সেন্সর-মাটি, জল, আলো, আর্দ্রতা, তাপমাত্রা ব্যবস্থাপনার জন্য সফটওয়্যার প্ল্যাটফরম; অবস্থান সিস্টেম- জিপিএস, স্যাটেলাইট, যোগাযোগ ব্যবস্থা, মোবাইল সংযোগ; রোবট; বিশ্লেষণ এবং অপটিমাইজেশান প্ল্যাটফরম আর এ সব প্রযুক্তির মধ্যে সংযোগ হলো ইন্টারনেট অব থিংস। আর এটি সেন্সর এবং মেশিনের মধ্যে সংযোগের জন্য একটি প্রক্রিয়া, যার ফলে একটি সিস্টেম, যা প্রাপ্ত ডেটার ওপর ভিত্তি করে খামার পরিচালনা করে থাকে। এসব ব্যবস্থার জন্য কৃষকরা তাদের খামারের প্রক্রিয়াগুলো নিরীক্ষণ করতে পারে এবং দূর থেকে কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

স্মার্ট ফার্মিংয়ের আরও সুবিধার মধ্যে রয়েছে স্যাটেলাইট অটোগাইডেন্স সিস্টেম ব্যবহার করে উন্নত নির্ভুলতা, কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি, জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি, ভোগ্যপণ্য হ্রাস, ফলন বৃদ্ধি, চালকের চাপ কম, ব্যবহারের সহজতা; সহজ রেকর্ডিং এবং রিপোর্টিং; সহজ আর্থিক পূর্বাভাস; টেকসই উন্নত ব্যবস্থাপনা; গ্রিনহাউজ অটোমেশন, শস্য ব্যবস্থাপনা, গবাদি পশু পর্যবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা, যথার্থ চাষ, কৃষিতে ড্রোনের ব্যবহার, স্মার্ট ফার্মিংয়ের জন্য ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণ, অ্যান্ড-টু-অ্যান্ড ফার্ম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইত্যাদি। কীভাবে স্মার্ট ফার্মিং খাদ্যের ভবিষ্যৎ পরিবর্তন আনতে পারে সেটিও অনেকের প্রশ্ন।

একটি প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় স্মার্ট ফার্মিং অন্য কোন কোন সুবিধা আনতে পারে? সেই প্রশ্নটিও থেকে যায় অনেকের কাছে। প্রচলিত সাপ্লাই চেইনগুলো কৃষকদের গ্রাহকের প্রয়োজনীয়তার তুলনায় তাদের পণ্য কীভাবে কাজ করে, সে সম্পর্কে তাদের কাছে কম তথ্যই থাকে। কিন্তু স্মার্ট ফার্মিংয়ে তথ্যের দক্ষ ও ন্যায়সংগত প্রবাহকে সক্ষম করে তোলে এবং আরও ভালো সিদ্ধান্ত নেয়ার সুবিধার্থে সরবরাহ-শৃঙ্খলের সব অ্যাক্টরের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ তৈরি করে দেয়। এতে অ্যাক্টরদের ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় থাকে এবং পুরো সরবরাহ-শৃঙ্খলজুড়ে লাভকে আরও সুষমভাবে পুনর্বণ্টন করার সুযোগ করে দিয়ে একটি উইন-উইন পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়। সাপ্লাই চেইন (যেমন- প্রসেসর এবং ভোক্তাদের), তারা তাদের গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে তাদের উৎপাদনব্যবস্থা পরিবর্তন করার সুযোগ চিহ্নিত করতে পারে। যার ফলে তাদের পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পায়। গ্রাহকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করা কৃষিব্যবসায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা ভবিষ্যতে টেকসই ক্ষমতা পাবে এবং স্মার্ট ফার্মিং এটির অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে। স্মার্ট ফার্মিং কৃষকদের পানি, ভৌগোলিক অবস্থা, দৃষ্টিভঙ্গি, গাছপালা এবং মাটির প্রকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে। এটি কৃষকদের তাদের উৎপাদন পরিবেশের মধ্যে দুষ্প্রাপ্য সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং পরিবেশগত ও অর্থনৈতিকভাবে টেকসই পদ্ধতিতে এগুলো পরিচালনা করতে সাহায্য করে। এটি কৃষকদের সময়মতো তাদের পণ্যের পরিমাণ ও গুণমান নিরীক্ষণ করতে এবং প্রয়োজনে তাদের উৎপাদন কৌশলগুলো সামঞ্জস্য বিধান করতে সক্ষমতা প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে ফসল এবং চারণভূমির স্বাস্থ্য নির্ধারণ করতে পারে, কীটপতঙ্গ এবং রোগ শনাক্ত করতে পারে। অতিরিক্ত ডেটা থাকার সুবাদে কৃষক উৎপাদনের ক্ষতি ও বর্ধিত খরচ রোধ করতে সময়োপযোগী লক্ষ্যযুক্ত কৌশল বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়। সর্বোপরি, এটি সাধারণ জনগণের কাছে খাদ্য এবং অন্যান্য কৃষিপণ্যের সরবরাহকে নিরবচ্ছিন্ন ও বেগবান করে তোলে এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনা উন্নত করে। এসব কাজের জন্য কৃষিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। তাই দেশের কৃষক ও কৃষিকে স্মার্ট করে গড়ে তুলেই হোক আগামী দিনের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’।