ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প

হতবিহ্বল বিশ্বমানবতা
তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প

সোমবারের ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে তুরস্ক ও সিরিয়া। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। প্রতি আপডেটেই শত শত নতুন মৃত্যু যুক্ত হচ্ছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এই সম্পাদকীয় লেখার সময় দুই দেশে প্রায় ৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ ভূমিকম্পে। আহত হয়েছেন আরও ২০ হাজারের বেশি। বিশাল সংখ্যক মানুষ এখনও নিখোঁজ। এখন সেখানে বিরাজ করছে মানবতার আর্তনাদ। চারদিকে ধ্বংসযজ্ঞ। মানুষ অসহায় চিৎকারে বুক ফাটাচ্ছে। তাদের সান্ত¦না দেয়ারও যেন কেউ নেই। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন অসংখ্য মানুষ। তাদের পরিণতি জানা যায়নি। তবে সময় যত পার হচ্ছে, তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা তত ক্ষীণ হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আসছে বাঁচার আকুতি। সরকারি হিসাবের বাইরে নিহতের সংখ্যা বহুগুণ বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যারা বেঁচে আছেন, তাদের সামনে কেয়ামতের আলামত। এ অবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্কতা দিয়েছে যে, দুই দেশে নিহতের সংখ্যা ২০,০০০ দাঁড়াতে পারে। সংস্থাটি আরও অনুমান করছে, তুরস্ক ও সিরিয়াজুড়ে আড়াই কোটিরও বেশি মানুষ এ ভূমিকম্পের শিকার হয়েছেন। দুটি দেশেই হাজার হাজার ভবন ধসে পড়েছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষদের বাঁচাতে উদ্বারকর্মীরা প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। মানবতার এই আর্তনাদে বিশ্ববাসীর সঙ্গে আমরাও শোকাহত, সহমর্মী।

বর্তমান বিশ্ব এখন চরম এক অস্থিরতা বিরাজ করছে। একের পর এক যুদ্ধ, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে উত্তেজনা, স্নায়ুযুদ্ধ ও আস্থাহীনতা, বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে শক্তি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা আর বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্বকে বিশেষ এক সন্ধিক্ষণে উপনীত করেছে। আর দেশে অভ্যন্তরীণ টানাপড়েন তো রয়েছেই। উপরন্তু যে ঘটনাটি বিশ্বকে আরও অস্থির করে তুলেছে তাহল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বিশ্বব্যাপী চরম পরিবেশ বিপর্যয় মানবজাতির জন্য উদ্বেগ তৈরি করেছে। এই অবস্থায় তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প শুধু ওই দুটি দেশের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্য আরেক উৎকণ্ঠা তৈরি করল। এখন দেখার বিষয়, এ বিপর্যয় থেকে মানবজাতি কীভাবে নিজেদের উত্তরণ ঘটাতে পারে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বিপর্যস্ত দুটি দেশের জন্য মানবিক সহায়তা জরুরি হয়ে পড়েছে। সেখানে এখন চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। চিকিৎসা দেয়ার মতো কর্মী খুঁজে পাওয়াই মুশকিল হয়ে পড়েছে। শুধু সিরিয়াই ৪০ লাখ মানুষ মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন দেশ থেকে ত্রাণ এবং উদ্ধারকর্মীরা যাচ্ছেন, তবে সেটা এখনও পর্যাপ্ত নয় বলে প্রতীয়মান। এমনও দেখা যাচ্ছে, একটি পাউরুটি পাওয়ার জন্য মানুষের মধ্যে হাহাকার দেখা যাচ্ছে। আর রাস্তাঘাটি ধ্বংস হওয়ায় জরুরি সাহায্য পাঠানোও কঠিন হয়ে পড়েছ। এদিকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের বাঁচাতে সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এরমধ্যে বৃষ্টি আর তুষারপাত শুধু মানুষেরই অসহায়ত্ব বাড়িয়ে তুলছে, উদ্ধার তৎপরতাকেও ব্যবহৃত করছে। এদিকে ভূমিকম্প ঘটনায় বাংলাদেশ একটি জরুরি চিকিৎসা সহায়তাকারী দল এবং একটি উদ্ধারকারী দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে- এ জন্য আমরা গর্বিত।

তুরস্ক-সিরিয়ায় সংঘটিত ভূমিকম্প বিশ্ববাসীর জন্য বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়। এ থেকে শিক্ষা নেয়ার ব্যাপার রয়েছে। একটি মানবিক বিশ্বভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলার সময় এসেছে। সেটা একটি কঠিন কাজই বটে। কেননা, ভূমিকম্পের ভয়াবহতায় বিশ্ব মানবতা যখন হতবিহ্বল তখনও তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে যুদ্ধ চলছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। আমরা জানি সেখানে কয়েক বছর যাবত বহুমুখী যুদ্ধ চলছে, যা উদ্ভূত কঠিন করুণ পরিণতি সত্ত্বেও নিবৃত হল না। এটা ভয়াবহ দুঃসংবাদ। তবে এর মধ্যেও সব হারিয়ে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে আমরা ১৮ মাসের শিশু রাঘাদকে অক্ষতভাবে বেঁচে ফিরতে দেখি। এই যেন এক সম্ভাবনার কথা আমাদের বলে। ধ্বংসের মধ্যে সৃষ্টির উদ্বোধনের কথা বলে। আমরা আশাবাদী বিশ্ববাসী পরস্পরের প্রতি সহমর্মী হয়ে বসবাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত