তুরস্ক ও সিরিয়ায় বড় ধরনের ভূমিকম্পে ছয়লাব হয়ে গেছে দুটি দেশ। রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। নিহতের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এই সংখ্যা আরও বাড়বে। আহতের সংখ্যা লক্ষাধিক বলে অনুমিত। ৮ মাত্রার ভূমিকম্প বেশ বড় ধরনের ভূকিম্প। বলা যায় এটাই সবচেয়ে বেশি মাত্রা। সবকিছু তছনচ করে দেয়। তুরস্কের ও সিরিয়ার অনেক অংশ এমনই অবস্থা ধারণ করেছে, ধ্বংসস্তূপ এমনভাবে জানান দিচ্ছে সম্প্রতি ১ বছর ধরে ইউক্রেনের যুদ্ধেও এর ৪ ভাগের ১ ভাগও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এ থেকেই ধারণা করা যায় পৃথিবীকে ধ্বংস করার জন্য ভূমিকম্পের চেয়ে বড় অস্ত্র আর নেই। এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। মুহূর্তেই সব ধ্বংস করে দেবে কেউ কিছু করতে পারবে না। এখন ঝড়, বৃষ্টি, সাইক্লোন, সুনামির আগাম বার্তা পাওয়া যায়। মানুষ ওই বার্তা পেয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আগাম সতর্ক হওয়ার ফলে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হয়। কিন্তু ভূমিকম্পের আগে এমন কোনো বার্তা পাওয়া যায় না। ভূমিকম্প এসে সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে যায়। সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে জানমাল রক্ষা করার কোনো শক্তি মানুষের থাকে না। প্রকৃতির কাছে অসহায় মানুষ।
দেশে দেশে ভূমিকম্প হলেও আমাদের দেশে মারাত্মক আকারের ভূমিকম্প তেমন হয়নি। মাঝে মধ্যে আমরাও ভূমিকম্পের খবর পাই। কোনো কোনো সময় মৃদু কম্পনও অনুভব করি। তবে ধ্বংসযজ্ঞ বলতে যা বোঝায় তা আমরা দেখিনি। মৃদু ভূমিকম্প প্রতি বছরই অনুভূত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের এই অঞ্চলে ১০০ বছর পর পর বড় আহারের ভূমি কম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন এই অঞ্চলে ১৮২২ সালে হয়েছিল ১৯১৮ সালে হয়েছিল, তাই ১০০ বছর পার হওয়ায় বর্তমানে আমরা সেই ঝুঁকিতে পৌঁছে গেছি। সুতরাং এখন হলে হতেও পারে। এই নিয়ে চিন্তা শুরু হয়েছে। এমন যদি হয়, তাহলে কি হবে, কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, আমরা আসলে কিছু করতে পারব কি-না। বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণা থেকে অনুমান করা হয় যে, ঢাকায় যদি ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলে ১ লাখ ৩৫ হাজার ভবন ধসে পরবে এবং ৭ কোটি টনের ধ্বংসস্তূপ জমে যাবে। এই ধরনের ভূমিকম্পে বাংলাদেশে অন্যান্য অনেক দেশের চেয়ে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে। এর মূল কারণ হলো নরম মাটির দেশ বাংলাদেশ। ভূমিকম্পে ভবনগুলো টিকে থাকা কঠিন হবে। আর ভূমিকম্প শুরু হলে মানুষ যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোনো খোলা জায়গায় আশ্রয় নেবে তেমন খোলা জায়গা ঢাকা শহরে নেই। এতেও ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।
আমাদের দেশে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানোর একমাত্র উপায় হলো- দেশের ভবনগুলো বিশেষ করে ঢাকা শহরের ভবনগুলো রিকটার স্কেলের ৮ মাত্রা সহিষ্ণু ভবন তৈরি করতে হবে। ঢাকা শহরে ভবন নির্মাণে এমন কিছু আইন রয়েছে। কিন্তু তা কি পুরোপুরিভাবে মেনে চলা হচ্ছে? এ বিষয়ে সন্দেহ থাকাই স্বাভাবিক। আগেও অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। বিল্ডিং কোড কতটুকু মানা হয়েছে বা হচ্ছে, তা পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। প্রকৃতির সঙ্গে তো লড়াই করে আমরা পারব না। তবে ক্ষতি যাতে কম হয়, সেই চেষ্টা তো করতে পারব। আমরা আশা করি, আমাদের সরকার এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন।