আপনাদের ভাবনা

শিক্ষা হোক মানবিক ও নৈতিকতা সমৃদ্ধ

নুরুন্নবী খোকন

প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, বহুল প্রচলিত এই প্রবাদ বাক্যকে সামনে রেখে যদি বলি, শিক্ষা যদি হয় সভ্যতার রূপায়ন, তাহলে তো একটি জাতি তথা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার সবচেয়ে কার্যকরি মাধ্যম ও শিক্ষা। আর সেই শিক্ষিত জাতির প্রতিটি শিক্ষিত নাগরিক যদি হয় মানবিক ও নৈতিকতানির্ভর শিক্ষিত, তবে তো সভ্যতার সর্বোচ্চ সফলতা আসতে দেরি হওয়ার কথা নয়। সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে শিক্ষার আদর্শিকতা তাই সফলভাবে প্রতিস্থাপন জরুরি। নৈতিকতা বিবর্জিত কোনো মানুষ সে যত বড়ই বিদ্বান হোক না কেন কিংবা সে যত বড়ই মেধাবী হোক না কেন, সমাজ সংস্কারে তার কোনো ভূমিকা থাকে না। কিন্তু প্রতিটা শিক্ষিত মানুষরাই তো সমাজ রাষ্ট্র তথা সভ্যতার প্রতি কিছুটা দায়বদ্ধতা থাকে। আর সেই দায়বদ্ধতা থেকেই একজন শিক্ষিত মানুষ লোভ-লালসা, দুর্নীতি থেকে দূরে থেকে সমাজকে দেখাবে আলোর পথ। একইভাবে একজন প্রকৃত শিক্ষিত ব্যক্তি হবে সর্বোচ্চ মানবিক গুণসম্পন্ন। মানুষ মানুষের জন্য এই নীতিকে আরও সাবলিলভাবে সাধারণ মানুষের ভেতরে যোগাযোগ করাই তো একজন মানবিক শিক্ষিত মানুষের বৈশিষ্ট্য। হিংসাবিদ্বেষ, মারামারি, রাহাজানির ঊর্ধ্বে থেকে একজন মানুষ নিজস্ব স্বকীয়তায় উদ্ভাসিত হয়ে পুনর্গঠন করবে সভ্যসমাজ। আলোকিত করবে রাষ্ট্র। একজন শিক্ষিত ব্যক্তির কাছ থেকে শিক্ষা বঞ্চিত কোনো অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ যেন কষ্ট না পান, কোনো ধরনের হয়রানির শিকার যেন না হয়, সেদিকটাই বিবেচিত হওয়ার কথা। এটাই তো একজন শিক্ষিত মানুষের প্রতি সমাজের প্রত্যাশা। নৈতিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো- শিক্ষার্থীর জীবনকে কোনো আদর্শের লক্ষ্যে পরিচালিত করে তার চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন করে ব্যক্তি ও সমাজজীবনে একান্তভাবে তা প্রতিষ্ঠা করা। সত্যকথা বলা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা, জীবজগৎ ও পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীলতা, ন্যায়পরায়ণতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, দেশপ্রেম এবং নৈতিকতাবোধ। এছাড়াও দয়া-করুণা, সহমর্মিতা ও সহনশীলতা, আত্মত্যাগ, শান্তি, মানবাধিকার, সমাজের সমঅধিকার ও সমমর্যাদা দেয়ার মনমানসিকতা ও অভ্যাস গড়ে তোলা ইত্যাদি সামাজিক কল্যাণমূলক ও দেশের উন্নয়নমূলক মানবীকিয় গুণাবলি প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে দেয়া হয় নৈতিকমূল্যবোধের যাবতীয় শিক্ষা।

যদিও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আমাদের দেশে শিক্ষার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে নারী শিক্ষার সমতা। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে আধুনিক শিক্ষার পরিসর। সুদূরপ্রসারী হয়েছে এদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা, দেশে ও দেশের বাইরে উল্লেখযোগ্যভাবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করেছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রকৌশল, তথ্যপ্রযুক্তি, গবেষণাসহ সব ধরনের শিক্ষাব্যবস্থাতেই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন বাংলাদেশিরা। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে।

বর্তমানে আমাদের দেশে সাক্ষরতার হার ৭৪ শতাংশ, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজের সংখ্যা উল্লেখ না করে যদি উচ্চশিক্ষার কথাই বলা হয়, তবে ইউজিসির ওয়েবসাইট বলছে, বর্তমানে দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪৬, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৬ এবং আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ৩টি। সরকারি পর্যায়ে মেডিকেল কলেজ আছে ৩০টি এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৬৫। এ পরিসংখ্যান থেকে দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বর্তমান সরকারও শিক্ষা বিস্তারে অত্যন্ত আন্তরিক। ঝরেপড়া শিক্ষার্থী প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। বিনামূল্যে বই, উপবৃত্তিসহ নানান সুবিধা প্রদান করছে। শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে। চলতি বছরে শিক্ষার আমুল পরিবর্তনের লক্ষ্যে পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন করেছে। যার মূল লক্ষ্য মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান। সরকারের এই সদিচ্ছাকে সাধুবাদ জানায়। এতদ্বসত্ত্বেয়, প্রতিটি শিক্ষাস্তরে যেন মানবিক ও নৈতিকতানির্ভরতাকে পাশ কাটানোর কোনো সুযোগ না থাকে। কারণ যে শিক্ষায় মানবিকতা কিংবা নৈতিকতা না থাকে, তবে সে শিক্ষা থেকে হয়তো সমাজ রাষ্ট্র খুব বেশি উপকৃত হতে পারে না। একই সঙ্গে একজন শিশুর প্রথম শিক্ষালয় যেহেতু তার পরিবার এবং প্রথম শিক্ষক তার পিতামাতা সেক্ষেত্রে পরিবারকেও একজন শিক্ষার্থীর মানবিক ও নৈতিক শিক্ষার ব্যাপারেও সচেতন হতে হবে। প্রতিটি শিক্ষালয় শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তি ও শিক্ষকবৃন্দকে এ ব্যাপারে কাযর্কর ভূমিকা নিতে হবে। এতে সমাজ ও দেশ হবে সমৃদ্ধশালী। আরও উজ্জীবিত হবে স্বজাতির সভ্যতা।

কলাম লেখক

[email protected]