সব ধরনের পেশার মতো চুরিরও রয়েছে রকমফের। এমন এই এক ধরনের চুরিবিদ্যা হলো টানা পার্টির চুরি, যা এখন রাজধানী ঢাকায় নগরবাসীর অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীতে অন্তত শতাধিক ব্যক্তি টানা পার্টির হেনস্তার শিকার হয়ে মূল্যবান জিনিস হারাচ্ছেন বলে জানা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ও ভ্যানিটি ব্যাগ খোয়া যাচ্ছে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোচরীভূত থাকলেও এখনও লাগাম টানা সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, রাজধানীতে দুই ধরনের টানা পার্টির সদস্য রয়েছে। এদের মধ্যে একটি গ্রুপ ভোর রাতে তৎপর থাকে। তারা প্রাইভেটকার অথবা মোটরসাইকেলযোগে এসে রিকশা আরোহী যাত্রীদের ব্যাগ টান দিয়ে দ্রুত সটকে পড়েন। আবার অন্য একটি গ্রুপ রয়েছে যারা কর্মস্থলে যাওয়া এবং বাসায় ফেরার সময়কে টার্গেট করেন। যানজটের সময়ে তারা জানালা দিয়ে ছোঁ মেরে মোবাইল ও ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে যায়। এই গ্রুপটির সদস্যরাও আবার অবসর সময়ে টার্মিনালে তৎপর থাকে। ঢাকায় আগন্তুকদের টার্গেট করে বাসে ওঠার আগ মুহূর্তে ছোঁ মেরে মূল্যবান মালামাল নিয়ে চোখের নিমিষে চম্পট দেয়। তাদের রক্ষা করার জন্য আলাদা একটি গ্রুপ সক্রিয় থাকে। কোনো কারণে বিপদের আঁচ পেলে তারাই সামনে হাজির হয়ে যায়। ভুক্তভোগীকে সহায়তার নামে মূলত এরা চোরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
লক্ষণীয়, টানা পার্টির সদস্যদের কমই আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়। আর এসব ঘটনার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মামলা করতে অনীহা ভুক্তভোগীদের। অভিযোগ থাকে না বলে পুলিশও আইনগত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। আবার কোনো ভুক্তভোগী থানায় গেলে পুলিশের কাছ থেকে আইনের ব্যাখ্যা শোনার পর মামলা করার আগ্রহ তিনি হারিয়ে ফেলেন। তখন ভুক্তভোগী অগত্যা হারিয়ে গেছে মর্মে জিডি করেন। এমন পরিস্থিতিতে চোর থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে এই নিয়ে পুলিশ নিশ্চুপ রয়েছে তা নয়। তথ্য অনুযায়ী ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ অন্তত দুই শতাধিক টানা পার্টির সদস্যকে শনাক্ত করেছে। এসব সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানা যায়। মজার তথ্য হলো, মানুষ যেমন পেশা বদল করে, ঠিক অপরাধীরাও তাদের পেশা বদল করে। ছিঁচকে চোর থেকে এখন অনেকে টানা পার্টি ও মলম পার্টিতে নাম লেখিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বাস টার্মিনাল বা বাসস্ট্যান্ডকেন্দ্রিক এসব চক্রের তৎপরতা বেশি। চক্রে অন্তত দুই শতাধিক সদস্য রয়েছেন। এদের মধ্যে নাটের গুরু ১০ থেকে ১৫ জন। যারা চক্রের সদস্যদের লালনপালন করেন এবং কমিশন পান। বিপদে পড়লে তারাই এদের জেল থেকে মুক্ত করার দায়িত্ব নেন। নাটের গুরুদের নামের তালিকা রয়েছে পুলিশের হাতে। আশা করা যায়, এদের সহসা আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
রাজধানীবাসী বহুমাত্রিক সমস্যা নিমজ্জিত রয়েছে। টুকিটাকি জিনিস, মোবাইল কিংবা ব্যাগের মধ্যে জরুরির কিছু- কোনো কারণে হাতছাড়া হয়ে গেলে তাকে বাড়তি সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। কারণ নতুন একটি মোবাইল কেনা অনেকের জন্যই কঠিন হয়ে পড়ে, কিংবা ধরা যাক বেহাত হওয়া ব্যাগটা পার্সে হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কোনো দলিল-ডকুমেন্ট ছিল- যা জন্য চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। কখনও কখনও টানাপাটির কারণে হতাহতের ঘটনাও ঘটার নজির রয়েছে। সংগত কারণেই এদের নিয়ন্ত্রণে আনার সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানো দরকার। নগরবাসীর স্বস্তি সুরক্ষায় এদিকে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী আরও তৎপর হবেন- এটাই প্রত্যাশা।