ওয়াশিংটন-বেইজিং বেলুন উত্তেজনা

রায়হান আহমেদ তপাদার, গবেষক ও কলামিস্ট, [email protected]

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

কিছুদিন আগেও চীনের অর্থনৈতিক উত্থানকে কোনো উদ্বেগের বিষয় হিসেবে দেখা হতো না। মনে করা হতো যে, তাদের বিকাশমান অর্থনীতি ক্রমেই উদার হতে থাকা রাজনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে। মার্কিন বিশেষজ্ঞরা সে সময় বলতেন, চীন একটি দায়িত্বশীল বৈশ্বিক অংশীদার হয়ে উঠছে। কিন্তু সে দিন আর নেই। বিশ্লেষকদের মতে, চীনকে এখন দেখা হচ্ছে এক হুমকি হিসেবে। অনেকেই ভয় পাচ্ছেন যে চীন আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেভাবে বাড়ছে তাতে শেষ পর্যন্ত একটা যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। তা যদি হয়, তাহলে তার প্রতিক্রিয়া হবে বিশ্বব্যাপী। বিশ্বের ইতিহাসে এরকম ১৬টি উদাহরণ আছে- তার মধ্যে ১২টিই শেষ পর্যন্ত শেষ হয়েছে যুদ্ধে। প্রাচীন গ্রিসে যেমন এথেন্স চ্যালেঞ্জ করেছিল স্পার্টাকে, উনবিংশ শতাব্দীতে জার্মানি যেমন চ্যালেঞ্জ করেছিল ব্রিটেনকে, ঠিক তেমনি এ যুগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করছে চীনের উত্থান। ওয়াশিংটন আর বেইজিংয়ের দ্বন্দ্ব হচ্ছে আজকের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নির্ণায়ক ঘটনা। অবশ্য সবাই যে এর সঙ্গে একমত তা নয়। চীনের নৌ-যুদ্ধকৌশল বিশেষজ্ঞ প্রফেসর হু বো বলছেন, চীন মার্কিন দ্বন্দ্বের সঙ্গে থুসিডিডেসের ফাঁদের মিল নেই। চীনের উত্থান চোখে পড়ার মতো ঠিকই, কিন্তু এখনও সার্বিকভাবে তাদের শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনীয় নয়। আমেরিকার সঙ্গে চীন পাল্লা দিতে পারে শুধু একটি মাত্র জায়গায়- তা হলো পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। কিন্তু এই প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকাতেও কি চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব হঠাৎ যুদ্ধের রূপ নিতে পারে না? এ প্রশ্নের জবাবে মার্কিন নৌযুদ্ধ বিশেষজ্ঞ এন্ড্রু এরিকসন বলছেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চীন যে সমরসজ্জা করছে তা ঐতিহাসিক মাপেও বিশাল। চীন এমন সব বিশাল ও উন্নত প্রযুক্তি সমৃদ্ধ যুদ্ধজাহাজ তৈরি করছে- যা মানের দিক থেকে পশ্চিমা যুদ্ধজাহাজের কাছাকাছি। ওই অঞ্চলে চীন ক্রমশই আরও বেশি করে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।

তারা যদি তাইওয়ানের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ যেন ঠেকিয়ে রাখা যায়- সে চেষ্টাই করছে বেইজিং। আর যুক্তরাষ্ট্র চাইছে এখানে কোনোভাবেই যেন তার প্রবেশাধিকার ব্যবহৃত না হয়। তবে বৈশ্বিক অঙ্গনের চীনের অবস্থানকে আরও উচ্চাভিলাষী করে তোলার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকার রাখছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

অনেকে বলেন, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে হয়তো এক নতুন স্নায়ুযুদ্ধও শুরু হতে পারে। তবে এ যুগে তার কেন্দ্রে থাকবে প্রযুক্তিগত প্রাধান্য বিস্তারের চেষ্টা। কারণ মেধাস্বত্ব চুরি, ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য এবং গুপ্তচরবৃত্তি-একাধিক কারণে চীনা প্রযুক্তিকে উদ্বেগের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। তারা ভয় পাচ্ছে যে, চীন হয়তো শিগগিরই এমন সব প্রযুক্তিতে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা নিয়ে নিতে পারে- যার ওপর ভবিষ্যতের উন্নয়ননির্ভর করবে। কারণ আগামী দশকেই চীন একটা বৈশ্বিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চায়। তবে চীনের যদি অর্থনৈতিক উন্নতি অব্যাহত থাকে, তাহলেই এটা সম্ভব হবে। কিন্তু যাই ঘটুক, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দ্বন্দ্ব থেকেই যাবে। এক্ষেত্রে কৌশলগত হিসেবে হঠাৎ কোনো ভুলের বিপদ সবসময়ই আছে। কারণ এ উত্তেজনা নিরসন কীভাবে করা হবে- তা তো কোনো বইয়ে লেখা নেই। চীন-মার্কিন সম্পর্ক এখন একটা সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। হয় তারা পরস্পরের উদ্বেগ কাটাতে চেষ্টা করবে, নয়তো তাদের দ্বন্দ্ব আরও বাড়বে। তবে যুদ্ধ অবধারিত নয়। সাম্প্রতিক গোয়েন্দাবৃত্তির উপকরণ হিসেবে বেলুনের ব্যবহার এখন হয় না বললেই চলে। ফরাসি বিপ্লবের সময় প্রথমবারের মতো গোয়েন্দা বেলুনের ব্যবহার হয়েছিল। আমেরিকায় গৃহযুদ্ধের সময় গুপ্তচররা বাইনোকুলার নিয়ে এ ধরনের অতিকায় বেলুনে চড়ে শত্রুপক্ষের অবস্থান শনাক্ত করত। শীতল যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন একে অপরের ওপর নজরদারির জন্য এ বেলুন ব্যবহার করেছিল। সেই আমলে গোয়েন্দা বেলুন বাতাসের টানে অনেক সময় দিগ্ভ্রান্ত হয়ে যেত।

কিন্তু এখনকার আধুনিক বেলুন ক্যামেরা, রাডার ও রেডিও ডিভাইসসজ্জিত থাকায় তা সাধারণত পথ হারায় না। আর এরই মধ্যে স্পাই স্যাটেলাইট প্রযুক্তির প্রভূত উন্নতি হয়েছে।

এ ছাড়া দূর থেকে নিয়ন্ত্রণযোগ্য মনুষ্যবিহীন ড্রোন চলে আসায় নজরদারির জন্য এখন আর বেলুন ব্যবহৃত হয় না। তবে বেসামরিক গবেষণার কাজে এখনও কোথাও কোথাও এগুলো ব্যবহার করা হয়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনের গোয়েন্দা বেলুন এএফপি অনেক উঁচুতে বাতাসে ভেসে চলতে পারে, এমন নজরদারি বেলুন এখন আর তেমন উন্নত কোনো গোয়েন্দা উপকরণ নয়। অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানার আকাশে এ ধরনের একটি চীনা বেলুনের উপস্থিতি দুই দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। গবেষণার কাজে বেসরকারি উদ্যোগে এ বেলুন ওড়ানো হয়েছিল বলে চীন দাবি করা সত্ত্বেও এ ঘটনার জের ধরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তার চীন সফর বাতিল করেছেন। চলতি মাসের শুরুতে পেন্টাগন ঘোষণা করেছিল, তারা আন্তমহাদেশীয় পারমাণবিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মজুতস্থল মন্টানার আকাশে ভাসমান একটি বেলুনের গতিবিধির ওপর নজর রাখছে। ওই সময় অতিকায় বেলুনটিকে ভূপাতিত করলে সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে মনে করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেটিকে গুলি করে ফেলতে বারণ করেছিলেন। তবে ৪ ফেব্রুয়ারি সেটি পূর্ব উপকূলের কাছাকাছি আসার পর মার্কিন বিমানবাহিনী সেটিকে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভূপাতিত করে। পেন্টাগন বলেছে, যে বেলুনটি তারা ভূপাতিত করেছে, সেটি চীনের স্পাই স্যাটেলাইটের চেয়ে বেশি তথ্য দেয়ার মতো সক্ষমতাবিশিষ্ট নয়। তবে সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধীরগতির কারণে কক্ষপথে স্থাপন করা কৃত্রিম ভূউপগ্রহের তুলনায় এসব বেলুন থেকে অনেক বেশি স্পষ্টভাবে ভূপৃষ্ঠের ছবি তোলা যায়। এ ছাড়া ধাতব ড্রোন বা এয়ারক্র্যাফট যত সহজে রাডারে ধরা পড়ে, তত সহজে এসব বেলুন ধরা পড়ে না।

ভূমি থেকে প্রায় ৮০ হাজার ফুট ওপরে রাডারের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব বেলুন কয়েক সপ্তাহ ভেসে থাকতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো এই বেলুন উড়িয়ে চীন আসলে কী ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছিল? পেন্টাগন বলেছে, বেলুনটি কানাডার আকাশসীমা পার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে ঢোকার পরই তারা সেটির অবস্থান শনাক্ত করে। মন্টানা ও নর্থ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যে কিছু পারমাণবিক অস্ত্র উৎক্ষেপণ ঘাঁটি আছে। এসব ঘাঁটির ওপর দিয়েই মূলত বেলুনটি উড়ছিল। বিষয়টি উল্লেখ করে একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, স্পষ্টতই বেলুনটি নজরদারির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরস্পরের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরির অভিযোগ করা নতুন কিছু নয়। বেইজিং দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, মার্কিন জাহাজ ও বিমান থেকে চীনের সীমানার কাছে গিয়ে নজরদারি করে থাকে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এর জবাবে বলে আসছে, তারা আন্তর্জাতিক জলসীমা ও আকাশসীমা থেকে তাদের নজরদারি কাজ চালিয়ে থাকে। এ ছাড়া আগেও যুক্তরাষ্ট্রের সীমায় গোয়েন্দা বেলুন দেখা গেছে, যদিও সেগুলো এই বেলুনের মতো ছিল না। কিছু বিশ্লেষক বলেছেন, বেলুনটি হয়তো ভুলক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে চলে গিয়েছিল; অথবা এমনও হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারি সক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে সেটিকে চীন যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে পাঠিয়েছিল। এই গোয়েন্দা বেলুন ভূপাতিত করার প্রভাব এখন দুই দেশের কূটনীতির ওপর পড়েছে। পাঁচ বছরের বেশি সময় পর কোনো মার্কিন শীর্ষ কূটনীতিক হিসেবে ব্লিঙ্কেনের চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল।

কিন্তু তিনি সফর বাতিল করায় দুই দেশের সম্পর্কে আরও শীতলতা নেমে এল। ওদিকে চীনের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, অনিচ্ছাকৃত এ ঘটনায় চীন দুঃখ প্রকাশ করছে এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাবে। তবে এ টানাপড়নের রেশ কত দূর গড়াবে, তা এখনই স্পষ্ট নয়।

আমেরিকানসহ বিশ্বের অনেক বিশ্লেষকের যুক্তি হলো, ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে বেইজিংয়ের উদ্বেগগুলো কতটা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের অগ্রগতির বিষয়টি নির্ভর করে। সম্পর্ক উন্নয়নে বেইজিংয়েরও যে সমান দায়িত্ব রয়েছে- এই ধরনের যুক্তি সেই ধারণা থেকে বেইজিংকে অব্যাহতি দিয়ে দেয়। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয় সামনে নিয়ে আসে। সেটা হলো, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক মেরামতে চীনের তাদের নীতি বদলানোর দরকার নেই। এরপরের বিপজ্জনক ইস্যু হচ্ছে দক্ষিণ চীন সাগর। এই সাগরকে চীন তাদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে। আর যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ চীন সাগরকে আন্তর্জাতিক জল ও আকাশসীমা বলে মনে করে। দক্ষিণ চীন সাগরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য তিন দশক ধরে খুব আগ্রাসী অবস্থান বজায় রেখে চলেছে চীন সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের কাছে এটা উদ্বেগের কারণ। তাইওয়ান প্রণালি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরে আসতে হবে। কেননা, সেখানে মার্কিন পরাজয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে এবং তাইওয়ানকে রক্ষা করা যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান কারও পক্ষেই গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্বার্থ নয়। বাস্তব রাজনৈতিক প্রয়োজন থেকেই অনেক সময় দুর্বল কোনো দেশ তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী দেশের অভিযোগ মানতে বাধ্য হয়। কিন্তু চীনের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্র মানতে বাধ্য নয়। অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক শক্তির দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র চীনের চেয়ে শ্রেয়। যুক্তরাষ্ট্রের হাতে চীনের তুলনায় উন্নত মানের সফট পাওয়ার রয়েছে। শক্তিশালী নিরাপত্তাসঙ্গীও রয়েছে ওয়াশিংটনের। এসব সত্ত্বেও বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বিরোধ কমিয়ে আনা উচিত, এ প্রত্যাশা যৌক্তিক। দুই পক্ষই যেন ছাড় দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে, সেটাও যৌক্তিক প্রত্যাশা। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারাও সম্পর্ক মেরামতের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু দুই পক্ষ কিংবা এক পক্ষ যদি তাদের নীতিগুলো সমন্বয় না করে, তাহলে সেটা কথার কথা হিসেবেই থেকে যাবে।

এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে, এমন কোনো বিষয়ে সমঝোতা করতে বেইজিং কি আগ্রহী? চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিপজ্জনক ও গুরুত্বপূর্ণ অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হলো তাইওয়ান। চীন তাদের সামরিক বাহিনীকে এমনভাবে তৈরি করেছে, যেন প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে হলেও তাইওয়ানকে বেইজিংয়ের শাসনের অধীন রাখা যায়। বেইজিংয়ের এই নীতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব বিশ্বাস করে, সামরিক বাহিনীর হুমকি তুলে নেয়া হলে তাইওয়ানের জনগণ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে বসবে। এরপরের বিপজ্জনক ইস্যু হচ্ছে দক্ষিণ চীন সাগর। এই সাগরকে চীন তাদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে। আর যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ চীন সাগরকে আন্তর্জাতিক জল ও আকাশসীমা বলে মনে করে। দক্ষিণ চীন সাগরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য তিন দশক ধরে খুব আগ্রাসী অবস্থান বজায় রেখে চলেছে চীন সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের কাছে এটা উদ্বেগের কারণ। উইঘুরদের ওপর চালানো দমনপীড়ন নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা। এ ছাড়া বেইজিং তাদের শাসনব্যবস্থার কোনো মূলনীতি কি বদলাতে রাজি হবে? বেইজিং কি তাদের অগ্রসর প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা, নিজস্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং রাজনীতিতে কমিউনিস্ট পার্টির একচেটিয়াতন্ত্রের পথ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে? চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক বৈরিতা বহুমুখী। কৌশলগত, অর্থনৈতিক ও মতাদর্শিক। নীতিগতভাবে দুই দেশের নেতারা সম্পর্ক মেরামতের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করলেও বাস্তবে সেটা অর্জনের সহজ কোনো রাস্তা নেই।