ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নিপাহতে মৃত্যুঝুঁকি

সচেতনতা জরুরি
নিপাহতে মৃত্যুঝুঁকি

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিপাহভাইরাসজনিত মৃত্যুঝুঁকি একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। দেশজুড়ে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়াচ্ছে নিপাহভাইরাস। কারণ এই রোগের কোনো চিকিৎসা বা ওষুধ নেই। একমাত্র সচেতনতা ও সাবধানে চলাফেরা এ রোগের সংক্রমণ থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে পারে। সারাদেশ নিপাহভাইরাসের ঝুঁকির মুখে এমন কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এর প্রধান বাহক বাঁদুর। শীত মৌসুমে খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া কেন্দ্র করে বাড়ছে এ রোগের প্রাদুর্ভাব। বাঁদুরে খাওয়া ফল খেলেও শরীরে বাসা বাঁধতে পারে এ ভাইরাস। সংক্রামক এ রোগের মৃত্যুহার ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ। তথ্য অনুযায়ী, দেশে চলতি শীত মৌসুমে এ পর্যন্ত ১০ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে সাতজন। যারা বেঁচে আছে, তারা ভুগছে নানা জটিলতায়। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্য মতে, নিপাহভাইরাস শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের চারজন রাজবাড়ী জেলার। এ ছাড়া শরীয়তপুর, রাজশাহী, নওগাঁ, পাবনা, নাটোর ও ঢাকায় একজন করে শনাক্ত হয়েছে। তবে যেহেতু দেশের সর্বত্র খেজুর গাছ রয়েছে এবং বাঁদুর দেখা যায়। অতএব, নিশ্চিত বলা যায় এ রোগে শঙ্কা সবখানেই রয়েছে। আর এ রোগের প্রতি অসচেতনতার ফলে আক্রান্ত অনেক রোগী অচিহ্নিত থাকা অসম্ভব নয়।

আমরা এরই মধ্যে অবহিত হয়েছি, নিপাহ ভাইরাস এমন একটি রোগ, যার কোনো চিকিৎসা নেই। টিকা নেই-ই। শুধু উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হয়। আর ভাইরাসটি যেহেতু মস্তিষ্কে সংক্রমণ ঘটায়, তাই বেঁচে থাকলেও আজীবন নানা জটিলতায় ভুগতে হয়। স্মর্তব্য, জ্বর, মাথাব্যথা, পেশিতেব্যথা, বমি, গলাব্যথা, মাথা ঘোরানো, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, অসংলগ্ন প্রলাপ- এসব হলো নিপাহ ভাইরাসের প্রাথমিক লক্ষণ। সাধারণত নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণ প্রকাশ পেতে পাঁচ থেকে ১৪ দিন সময় লাগতে পারে। এমনও তথ্য জানা গেছে, বাংলাদেশে মানুষ থেকে মানুষে এ রোগ সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা অনেক পাওয়া গেছে। বিষয়টি শঙ্কাজনক। আর এই রোগটি শুধু গ্রামে নয়, এখন নগরে সংক্রমিত হওয়ার সুযোগও তৈরি হয়েছে। কারণ খেজুরের রস উৎসব এখন নগরজীবনে চলে এসেছে। অনলাইনে অবাধে রস বিক্রি হচ্ছে। আর এসব রস কিনে অনেকে উৎসব করছে। এ জন্য বাংলাদেশে যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় একটা বিপর্যয় ঘটতে পারে। গ্রামের মানুষ এখন রস খেতে কিছুটা হলেও চিন্তা-ভাবনা করে। কিন্তু শহরের মানুষ যারা নিপাহ ভাইরাস সম্পর্কে জানে, তারাই এই উৎসব করছে, যা যেকোনো মুহূর্তে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের কোনো কার্যকর চিকিৎসা বা প্রতিরোধী টিকা নেই। তাই সচেতনতাই একমাত্র মাধ্যম। এ জন্য কিছুতেই খেজুরের কাঁচা রস বা তালের রস খাওয়া যাবে না। বাদুড়ের মুখের লালা লেগে থাকতে পারে- এমন আংশিক খাওয়া ফল খাওয়া যাবে না। বিশেষ করে খোসাযুক্ত ফল যেমন- বরই, পেয়ারা, আমড়া, আঙুর, আপেল এসব ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে। আর আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রাখতে হবে এবং পরিচর্যাকারী মাস্ক পরবেন। রোগীর কফ, থুথু, লালা, ঢাকনাযুক্ত বিনে ফেলতে হবে বা বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলতে হবে। বাঁদুর যাতে মুখ না দিতে পারে, সে জন্য গাছে রস সংগ্রহের হাড়িতে ঢাকনা দেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। যারা রস সংগ্রহ করেন, তারা যেন সতর্ক থাকেন। কারণ, হাড়ির আশপাশে বাঁদুরের লালা লেগে থাকতে পারে। মনে রাখতে হবে, এটি কিছুটা করোনাভাইরাসের মতো নাক ও মুখ দিয়ে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত