ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টাকা দিচ্ছি পণ্য পাচ্ছি না

এ ব্যবস্থার সুরাহা চাই
টাকা দিচ্ছি পণ্য পাচ্ছি না

কথাটা শুনে অবাক হওয়ারই কথা। টাকা দিচ্ছি অথচ পণ্য পাচ্ছি না। অথবা পণ্য পাচ্ছি না; কিন্তু টাকা দিতেই হচ্ছে। আরও খোলাখুলিভাবে বললে বলতে হয়, ‘দোকানে গিয়ে টাকা দিয়ে বললাম এক হালি কলা দিন। দোকানদার টাকা নিল কিন্তু কলা দিল না। জিজ্ঞেস করলে দোকানি বলল কলা নেই, শেষ হয়ে গেছে, পরে এলে পাবেন। আমি বললাম তাহলে টাকা ফেরত দিন। পরে যখন আসবে তখন টাকা দিয়ে নিয়ে যাব। দোকানি তাতে রাজি হলো না। কলা না নিয়েই টাকা দিয়ে আসতে হলো।’

এই হলো কাহিনি। আর এই কাহিনির উদ্ভব হয়েছে বাড়িতে গ্যাস ব্যবহারকে কেন্দ্র করে। ঢাকা শহরের অনেক এলাকায় গ্যাস থাকে না, বাড়িতে রান্না হয় না। গ্যাস ব্যবহার না করলে বা গ্যাস না পেলেও প্রতি মাসে ১ হাজার ৮০ টাকা দিতেই হয়। এটা ওই দোকানির কলা না দিয়ে টাকা নেয়ার মতোই নয় কি? এ সমস্যা ঢাকা শহরে দীর্ঘদিনের। কোনো কিছুতেই কিছু হয়নি। কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। অসংখ্য মানুষ গ্যাস ব্যবহার না করেই গ্যাসের বিল দিয়ে যাচ্ছে। করার কিছুই নেই। বিল না দিলে লাইন কেটে দেবে। সেখানে আরও সমস্যা। এখন মাঝে মধ্যে তো কিছু না কিছু গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে, লাইন কেটে দিলে তো কিছুই পাওয়া যাবে না। এই হলো অবস্থা। দীর্ঘদিন হলো ঢাকা শহরে বাড়িতে সরাসরি গ্যাসের লাইন দেয়া হয় না। সিলিন্ডার গ্যাস বাইরে থেকে কিনে ব্যবহার করতে হয়। সেখানেও অস্থিরতা। অধিকাংশ সময়ই ঠিক দামে গ্যাস সিলিন্ডার পাওয়া যায় না। নির্ধারিত দামের চেয়ে দুই-চারশ টাকা বেশি দিয়ে সিলিন্ডার কিনতে হয়। মাঝেমধ্যে তাও পাওয়া যায় না। বাজার থেকেই উধাও হয়ে যায়।

সব বাড়িতেই যে সরাসরি গ্যাস সরবরাহ করতে হবে, এমন কোনো নিয়ম নেই। আগে আমাদের চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত গ্যাস উৎপন্ন হতো বিধায় বাড়িতে বাড়িতে সরাসরি গ্যাস সরবরাহ করা হতো। শুধু ঢাকা শহরেই নয়, সারা বাংলাদেশের অনেক শহরেই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্যাসের চাহিদা বাড়ে সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে বাড়িতে গ্যাস লাইন দেয়া সীমিত করা হয় এবং এক পর্যায়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। বিকল্প হিসেবে সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবস্থা করা হয়। বর্তমানে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। বাইরে থেকে গ্যাস আমদানি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার পরেও তো বাজারে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। শুধু বাজারটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। গ্যাসের দাম বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, এর চেয়ে বেশি হলে তা কেনার সমর্থ অধিকাংশ মানুষের থাকবে না। সেই কথা বিবেচনায় এনে গ্যাসের দাম নির্ধারণ করতে হবে। আর যেসব বাড়িতে সরাসরি লাইন আছে, তারা যেন ঠিকমতো গ্যাস পেতে পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখা দরকার।

আমরা আশা করি, যেসব বাড়িতে গ্যাসের লাইন আছে, সবখানে মিটার বসানো দরকার। এতে গ্রাহককে ঠকতে হবে না। যে গ্রাহক যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করবে তাকে সেই মতো গ্যাসের বিল দিতে হবে। বিদ্যুৎ বিলের মতো মিটার রিডিং করে অথবা প্রিপেইড সিস্টেমে গ্যাসের বিলের ব্যবস্থা করতে পারলে পয়সা দিয়ে কথা বা পাওয়ার মতো অবস্থা হবে না। অনেক স্থানেই গ্যাসের মিটার বসানো হয়েছে। সেখানে কোনো সমস্যা হয় না, যেমন পণ্য পাওয়া যায় তেমন অর্থ দিতে হয়। পণ্যের খোঁজ নেই; অথচ অর্থ ঠিকই দিতে হচ্ছে- এমন অবস্থার সৃষ্টি হবে না। আমাদের বিশ্বাস, এই সরকার গ্যাসের মিটার বসাবে এবং বাইরে সিলিন্ডার গ্যাসের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সফল হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত