দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা

ডায়ালাইসিস সেবা নিশ্চিত করুন

প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

দেশের বিভিন্ন জেলায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় ১৫ লাখ পরিবারের মাঝে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। এসব পরিবারের ৬০ লাখ মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ পাচ্ছে। পরবর্তী পর্যায়ে সারা দেশের মানুষ এই স্বাস্থ্য সুরক্ষার আওতায় আসবে। ১২ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জ জেলার স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির উদ্বোধন উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ কথা বলেন।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গৃহীত প্রকল্প খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি। বর্তমান সরকার স্বাস্থ্যসেবা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দিতে চায়। শুধু শহর নয়; গ্রামে-গঞ্জেও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে যাবে। পর্যায়ক্রমে শহরে যে সব আধুনিক চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে, গ্রামেও অনুরূপ সুবিধা পাওয়া যাবে। এমনকি সেখানে কিডনি রোগীর চিকিৎসা অর্থাৎ ডায়ালাইসিস সুবিধা পর্যন্ত দেয়া হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে এমনই ধারণা করা যায়। আমরা মন্ত্রীর বক্তব্যকে পুরোপুরি সম্মান করি এবং বিশ্বাসও করি। ৬০ লাখ মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা পাচ্ছে- এটা কম কথা নয়। দেশের সব মানুষ এই সুবিধা পাবে- তা আমরা কামনা করি না। কারণ চিকিৎসা সারাবিশ্বেই বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে আমাদের দেশেও বেড়েছে। বর্তমানে চিকিৎসায় যে ব্যয় হয়, তা আমাদের দেশের ৯০ ভাগ মানুষের পক্ষেই বহন করা সম্ভব হয় না। বাধ্য হয়ে সম্ভব করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হতে হয়। সাম্প্রতিকালে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা। এক্ষেত্রে দেশে কিডনি রোগীর তুলনায় ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়; তার ওপর অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সরকারি হাসপাতালে সুবিধা থাকলেও সেখানে সবাই যেতে পারে না। যেতে পারে না অর্থাৎ সুযোগ পায় না। রোগীর চেয়ে সুযোগ কম থাকায় রোগীদের বাইরে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হয় বাধ্য হয়ে। ব্যয়বহুল এই ডায়ালাইসিস সেবা বাড়ানোর কথা মন্ত্রী বলেছেন। আমরাও সে দিকেই গুরুত্ব দিচ্ছি। এ জন্য বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ থাকতে হবে স্বাস্থ্য খাতে। এমনিতেই স্বাস্থ্য খাতে সরকার অনেক বরাদ্দ দিয়ে থাকে। এর পরেও আরও বরাদ্দ প্রয়োজন। সব কিডনি রোগীর ডায়ালাইসিস খরচটা যদি বেঁচে যায়, তাহলে সেই পরিবারটিও রক্ষা পাবে।

স্বাস্থ্যসেবায় আমরা অনেক এগিয়েছি। অনেক দেশের চেয়ে বেশি অগ্রগতি আমাদের। চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার পূরণ করার দায়িত্ব সরকারের। সরকার চেষ্টা করছে। অব্যবস্থা ও অনিয়মের জন্য অনেক ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এই সেবা। সেইসব অনিয়ম ও অব্যবস্থা দূর করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ফিরিয়ে আনা দরকার। সরকার জনগণের কথা ভেবে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সেই পরিকল্পনা যারা কার্যকর করবে, তাদের অযোগ্যতা ও অবহেলায় প্রকল্পগুলো সফল হয় না। এমন নজির আমাদের দেশে আনেক আছে। এসব দূর করতে না পারলে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে, সেগুলোও সফল হবে না- এ কথাটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।

আমরা আশা করব, অন্যান্য খাতের মতো স্বাস্থ্য খাতে সরকার আরও উদ্যোগী হবে এবং সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত বরাদ্দ বাড়িয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে। স্বাস্থ্যসেবা শুধু সরকারই নিশ্চিত করবে না, বেসরকারি হাসপাতালগুলোও যাতে গণমানুষকে কম মূল্যে সেবা দিতে পারে, সেদিকেও নজর রাখবে।