অর্থনীতিতে ফুলের সৌরভ

প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা

প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

কৃষিভিত্তিক পণ্য হিসেবে ফুলের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিভিন্ন দিবসে ফুল দেয়া-নেয়ার চল ক্রমেই বাড়ছে। ফলে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উৎপাদনও বাড়ছে। উল্লেখ্য, ইদানীং বিভিন্ন জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ হলেও দেশের চাহিদার সিংহভাগ ফুল সরবরাহ করেন যশোরের গদখালীর চাষিরা। প্রতি বছরের মতো এবারও বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবসে প্রিয়জনের মন রাঙাবে যশোরের গোলাপ-জারবেরা-রজনীগন্ধা ফুল। এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরেও সারা দেশে ফুলের বাজার ধরতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ এলাকার ফুল চাষিরা। তথ্য অনুযায়ী, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। বিশেষ দিবস ঘিরে চাঙ্গা হয়েছে ফুলের বাজার। দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, করোনাভাইরাস ও আম্পান এই অঞ্চলের ফুল সেক্টরকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। গত বছর বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে প্রায় ২৫ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়েছিল। এর আগের দুই বছর চাষিরা কোনো ফুলই বিক্রি করতে পারেননি। এ বছর আবহাওয়া ভালো হওয়ায় ফুল চাষের জমি যেমন বেড়েছে, তেমনি উৎপাদনও হয়েছে ভালো। একই সঙ্গে বাজার পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় আশা করা হচ্ছে, বেচাকেনা গত বছরের দ্বিগুণেরও বেশি হবে। এটি একটি সুসংবাদ বটে।

শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী ফুলের চাহিদা বাড়ছে। আর ফুল এমন একটি পণ্য, যা মানুষ মাত্রই পছন্দ করে থাকে। ফুলের সৌন্দর্য ও সৌরভের আবেদন বিশ্বজনীন। বেশ কিছু দেশ ফুল রপ্তানি করে বিপুল আয় করছে। বাংলাদেশেও এখন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের ফুলের চাষ হচ্ছে। তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ২০টি জেলায় কমবেশি ১২ হাজার হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে। গত চার দশকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুল উৎপাদিত হচ্ছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ফুল চাষ হয় যশোর ও ঝিনাইদহ জেলায়। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ শুরু হয় মূলত ৮০-এর দশকে। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সরকার ফুলকে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকাভুক্ত করে। বাংলাদেশে ফুলের বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্প্রসারণের সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ মানুষের আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে ফুলের চাহিদা বাড়ছে। আধুনিক সমাজে ফুলের বহুমুখী ব্যবহারের কারণে শুধু শৌখিনতায় নয়, ফুল এখন বিরাট অর্থকরী ফসল। সময়ের চাহিদার আলোকে দেশের অর্থনীতিতেও ফুলের অবদান ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত ফুল দিয়েই চাহিদার বেশির ভাগ মেটানো সম্ভব হচ্ছে। মাত্র দুই দশকের পথচলায় দেশে ফুল বাণিজ্য অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে, যা আগামীতে এটি যে অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করতে পারে, সেই সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

অর্থনীতিতে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার অবদান রাখা ফুলের বাজার সম্প্রসারণের সমূহ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। করোনাকাল এবং ঘূর্ণিঝড় আম্পান এই খাতে ব্যাপক দুর্দশা বয়ে আনলেও কৃষক ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় রয়েছেন। ফুল বাণিজ্য ঘিরে বাড়ছে কর্মসংস্থান। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে ফুল। আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। সংগত কারণেই এই মুহূর্র্তে সম্ভাবনাময় এই খাতের উন্নতি আরও গতিশীল করার জন্য সরকারি সহযোগিতা একান্ত জরুরি। ফুল চাষের সম্ভাবনাকে কাজে লাগোনোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। এই নিয়ে দায়িত্বশীলরা তৎপর হবেন- এটাই প্রত্যাশা।