ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্বাস্থ্যকর বায়ু, সুস্থ জীবন এবং আমাদের করণীয়

দিপ্ত হাওলাদার, প্রধান ভিডিওগ্রাফার, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন
স্বাস্থ্যকর বায়ু, সুস্থ জীবন এবং আমাদের করণীয়

বাতাস, বায়ু, মলয় কিংবা আরও কতশত সমর্থক নাম- আমরা পরিবেশের একটি অনন্য উপাদানকে বুঝি। এটি এমন একটি উপাদান, যা দেখা যায় না, ধরা যায় না, শুধু অনুভব করে থাকি। মানুষ, প্রাণী কিংবা মহাবিশ্বের সব জীবের বেঁচে থাকার জন্য বায়ু একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। খাবার না খেয়ে আমরা কয়েকদিন বেঁচে থাকতে পারব, পানি না খেয়েও একদিন বেঁচে থাকা সম্ভব। কিন্তু একবার ভাবুন তো, কয়েকটা মিনিট বাতাসশূন্য থাকলে বেঁচে থাকা কি সম্ভব? আধুনিক বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ অপরিণত বয়সে মৃত্যুবরণ করে শুধু বায়ুদূষণের কারণে। তাছাড়া আশপাশে কান পাতলেই শোনা যায় মৃত্যুর সংবাদ। এসব খবরের সঙ্গে যুক্ত থাকে স্ট্রোক, হৃদরোগ- যার অভিন্ন কারণ হলো দূষিত বায়ু।

আমাদের জীবনে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন এ বায়ু আমরা কতভাবেই না ব্যবহার অনুপযোগী আর অস্বাস্থ্যকর করে তুলছি। ২০২২ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বের শীর্ষ ৩০টি বায়ুদূষণকারী শহরের ২২ নম্বরে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। তাছাড়া প্রায়ই আমাদের শহর ঢাকাও চলে আসে বায়ুদূষণের শীর্ষ তালিকায়।

গণশুমারি ২০২২-এর তথ্য মতে, ৩৯ হাজারের ও বেশি মানুষের বাস আমাদের এ রাজধানী শহরের প্রতি বর্গকিলোমিটারে। সারাদেশেরও এ সংখ্যা কম নয়, ১ হাজার ১১৯ জন লোকের বাস এদেশের প্রতি বর্গকিলোমিটারে। অধিক জনসংখ্যার এ দেশে ব্যবস্থাপনা সঠিক পথে রাখা অনেক কঠিন কাজ। তারপরও কিছু পরিবর্তন এনে দিতে পারে ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য নির্মল বায়ু।

সমস্যা সমাধানের আগে সমস্যার কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি। জনসংখ্যা আমাদের একটা সমস্যা; কিন্তু এটাই যে মুখ্য সমস্যা, বিষয়টি মোটেও এমন নয়। আমি বিশ্বাস করি না যে, বায়ুদূষণ কেন হয় বা কীভাবে হয়, এ বিষয় আমরা অজ্ঞ বা জ্ঞানের ঘাটতি আছে। বরং এটা বলতে পারি, আমরা নাগরিক হিসেবে উদাসীন, তাই পরিবেশের অমূল্য উপাদান বায়ুর ওপর এমন অবিচার করে থাকি।

দেশে আইন আছে, নেই তার ইতিবাচক প্রয়োগ। ২০১৯ সালে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় বায়ুদূষণ প্রতিরোধে ‘নির্মল বায়ু’ নামক আইন প্রবর্তন করে, যেখানে বায়ুদূষণের জন্য দায়ী ব্যক্তিকে ২ বছর কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করতে পারবে। একই ভুল দ্বিতীয়বার করলে ১০ বছর কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিতে পারবে। কিন্তু নিরাশার কথা হলো, এর প্রয়োগ কোথায়?

রাজধানী ঢাকার বাতাস দূষিত হয় আমাদের অবহেলায়। শহর উন্নত হলে উন্নত হয় কল-কারখানা, শিল্প, রাস্তা ও আবাসিক ভবনগুলো। কিন্তু এর সঙ্গে পরিবেশকে বাদ দিলে অদূরে উপস্থিত হবে ভয়াবহ পরিণতি। কল-কারখানা, শিল্পের উন্নতির সঙ্গে চাই বায়ুদূষণ রোধক প্রযুক্তির বিকাশ। কালো ধোঁয়া নয়, চাই পরিশোধিত নিরাপদ বায়ু। ছোট ছোট বাসাবাড়ি ভেঙে তৈরি হচ্ছে অট্টালিকা; কিন্তু নির্মাণকাজে নেই আধুনিক প্রযুক্তি, সেই মানধাতা আমলের নির্মাণযন্ত্র ব্যবহার বাড়াচ্ছে বায়ুদূষণের মাত্রা। রাতের বেলা রাজধানীতে আসে শত শত বালুভর্তি ট্রাক।

কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো- এই ট্রাকগুলো নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই উড়িয়ে বেড়ায় কয়েক ফুট বালু। শুধু এই ট্রাকগুলো ঢেকে শহরে প্রবেশ করলে দিনের অর্ধেক ধুলা আমাদের বাতাসে কম মিশতে পারে। তাছাড়া দিনের চাহিদার সঙ্গে বাড়ছে ইটভাটা যার বিষাক্ত ধোঁয়া মিশছে বাতাসে, এর বিকল্প কংক্রিট ব্লক অথবা সিরামিক ইট ব্যবহার বাড়াতে হবে। আবার আসি রাঘববোয়াল সমস্যার কাছে, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ একটি কঠিন কাজ। কিন্তু প্রযুক্তির সহায়তায় বায়ুদূষণ রোধ করে পুনর্ব্যবহার পদ্ধতির বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা না করে গেলে দুর্গন্ধ আর মিথেন গ্যাসে ছেয়ে যাবে আমাদের পরিবেশ। আশার কথা হচ্ছে, এরই মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আমিনবাজার ল্যান্ডফিল্ড থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে।

আধুনিক বিশ্বের একটি উন্নত দেশের রাজধানী হওয়ার পথে আমাদের প্রাণের শহর ঢাকা। এ শহরকে বাসযোগ্য রাখতে বাড়তি নজর দিতে হবে বায়ুদূষণ প্রতিরোধে। শুধু সচেতনতা বৃদ্ধি নয়, বায়ুদূষণ রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ ও জরুরি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত