ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

খেজুরের রস পান বন্ধ

এটা কোনো সমাধান নয়
খেজুরের রস পান বন্ধ

খেজুরের কাঁচা রস থেকে নিপাহ ভাইরাস মানব শরীরে প্রবেশ করছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। এর প্রতিশেধক এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। তাই চিকিৎসকরা বলছেন খেজুরের কাঁচা রস না পান করতে। আমরা তা মনে করি না। এ কথা সত্য যে, নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকি বাড়ছে। এটা মূলত বাদুড় থেকে ছড়িয়ে থাকে। বাদুড় রস খাওয়ার চেষ্টা করলে জীবাণুযুক্ত হয়ে যায় রস। পরে ওই কাঁচা রস কেউ পান করলে সে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে রস পান বন্ধ না করে রস যাতে জীবাণুযুক্ত হতে না পারে, সেই ব্যবস্থা কি করা যায় না?

এই ভাইরাসটি প্রথম ধরা পড়ে ২০০১ সালে মেহেরপুর জেলার একজনের শরীরে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত ৩৩৫ জনের মধ্যে রোগটি শনাক্ত হয় এবং এর মধ্যে ২৩৭ জনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুহার ৭১ শতাংশ। এই হার রীতিমতো আতঙ্কের এবং চিন্তার। ২০২২ সালে এই রোগী পাওয়া গেছে ১০ জন। তার মধ্যে ৭ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। দেশের ৩১টি জেলায় এই রোগ অর্থাৎ নিপাহ ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সংক্রমণের হার বেশি। দেখা গেছে, এসব এলাকায় বাদুড়ের বসবাস বেশি। এতে ধারণা করা হয়, যেখানে বাদুড় বেশি, সেখানেই এই ভাইরাস বেশি। গবেষকরা বলছেন, এটাও সঠিক নয়। কারণ দেখা গেছে, যশোর এলাকায় বাদুড়ের চলাচল বেশি থাকলেও সেখানে এই ভাইরাস পাওয়া যায়নি। তবে এ কথা সত্যি এবং গবেষণায় প্রমাণিত যে, বাদুড় থেকে খেজুরের রসে এবং সেই কাঁচা রস পান করলে মানুষের শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করে।

নিপাহ ভাইরাস সম্পর্কে আমাদের এখন থেকেই সাবধান হতে হবে। বিগত ২০ বছর ধরে দেশে এ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাস সম্পর্কে যা কিছু জানা যাচ্ছে সবই আমাদের গবেষণারই ফল। গবেষণা করে আমরা আরও কিছু বের করতে পারব। যেহেতু খেজুরের রস পানের মাধ্যমে এটা ছড়াচ্ছে, সেহেতু কেউ কেউ বলছেন কাঁচা রস পান না করার জন্য। ইতোমধ্যে অনেক মানুষ কাঁচা রস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। আমি এমন একজনকে জানি, যিনি প্রতি বছর শীতের সময় শুধু রস খাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে যেতেন। এমনও হয়েছে যে, কোনোবার ঈদের সময় গ্রামে যেতে পারেননি; কিন্তু রস খেতে ভুল হয়নি। কিন্তু আজ দীর্ঘদিন হলো তিনি আর খেজুরের কাঁচ রস খেতে গ্রামে যান না। এই অবস্থা খুবই কার্যকর। শীতে খেজুরের রস এক অমৃত পানীয়। হাজার বছর ধরে এই রস পান করে আসছে বাংলার মানুষ। এখন কি এমন হলো যে, তা ত্যাগ করতে হবে? তবু ত্যাগই করতে হচ্ছে। কিন্তু এটা তো কোনো সমাধান নয়।

নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার এতই বেশি যে, যার ফলে একে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা কি এমন এক ওষুধ বের করতে পারি না যা এই ভাইরাসকে মুহূর্তেই ধ্বংস করে দেবে? এমনও হতে পারে, গাছ থেকে রসের হাঁড়ি নামানোর পর দুটি বড়ি মিশিয়ে দিলেই ভাইরাস নষ্ট হয়ে যাবে? এভাবে ভাইরাস যদি থাকে, তাহলে বড়ি মিশেয়ে পান করার উপযোগী করে তুলি? আর এই বড়ি আবিষ্কারের আগে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এমনভাবে গাছে ঝোলানো হাঁড়ি বাদুড়ের স্পর্শ থেকে দূরে বা মুক্ত রাখার ব্যাবস্থা করা জরুরি। কেননা অনেকে যেমন রস পান ছেড়ে দিয়েছেন, তেমনি অনেকে খাওয়া বাদ দিতে পারেননি। আমরা আশা করব, রসের হাঁড়ি নিরাপদ থাকবে এবং অচিরেই নিপাহ ভাইরাস মারার ওষুধ আবিষ্কার হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত