ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মানবতা ও মানবাধিকারের ক্রান্তিকালে বিশ্ব

রায়হান আহমেদ তপাদার, গবেষক ও কলামিস্ট, [email protected]
মানবতা ও মানবাধিকারের ক্রান্তিকালে বিশ্ব

পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্র মানবাধিকার রক্ষার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রণয়ন করছে বিভিন্ন মানবাধিকার সনদ। এসব রাষ্ট্র দ্বারাই আবার মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা এসব করেন। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গঠন করা হয়েছিল লীগ অব ন্যাশনস। এটি ব্যর্থ হওয়ার পর এর অপমৃত্যু ঘটে। সংঘটিত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে গঠিত হয় ইউনাইটেড ন্যাশন, বাংলায় যা জাতিসংঘ হিসেবে পরিচিত। সর্বস্তরের মানুষের মানবাধিকার রক্ষার জন্য তথা নারী, পুরুষ, শিশু, নৃজাতি, রিফিউজি, অধিবাসী, রাষ্ট্রবিহীন অধিবাসী, পঙ্গু, অবহেলিত, সব মানুষের অধিকার রক্ষার্থে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যমে মানবাধিকার সনদ অনুমোদন হয়েছে। যেসব অধিকার কোনো কারণে সংশ্লিষ্ট মানবাধিকার সনদ থেকে বাদ পড়েছে সেগুলোকে পূর্ণ করেছে আন্তর্জাতিক প্রোটোকল। তারপরও সর্বস্তরে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কি? পৃথিবীর কোনো ধর্মতে কি আছে- আসুন মানুষ হত্যা করি, ঘর- ফসল জ্বালিয়ে দেই, নারী ধর্ষণ করি, শিশুকে মেরে ফেলি। না, কোনো ধর্ম বাণীতেই হত্যার স্থান নেই, অমানবিকতার স্থান নেই। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কোনো না কোনোভাবে সব ধর্মের মূল বাণী শান্তি ও মানবতা। রাষ্ট্র ও সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত ও অনুমোদিত সুযোগ-সুবিধা যা পেয়ে মানুষ বিকশিত হয়, তাকেই অধিকার বলে। যেমন, পরিবার গঠন, ভোটদান ইত্যাদি। শিক্ষা, চিকিৎসা, অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান মানুষের সর্বজনীন মৌলিক অধিকার। অধিকারকে আমরা দু’ভাবে চিন্তা করতে পারি। একটি হলো নৈতিক অধিকার, যা মানুষের বিবেকবোধ থেকে আসে। অপরটি হলো আইনগত অধিকার। আইনগত অধিকার আবার রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক- এই তিনভাগে ভাগ করা যায়, যেসব রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অধিকারের কথা দেশের সংবিধানে উল্লেখ থাকে এবং সরকার কর্তৃক অলঙ্ঘনীয় তাই মৌলিক অধিকার।

আর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মৌলিক অধিকারই হলো মানবাধিকার। এক কথায় মানবাধিকার হলো জাতিসংঘ ঘোষিত এমন কতগুলো অধিকার, যা জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে ভোগ করা যায়। মানব পরিবারের সব সদস্যের সর্বজনীন, সহজাত, অ-হস্তান্তরযোগ্য এবং অলঙ্ঘনীয় অধিকারই হলো মানবাধিকার। এটি প্রতিটি মানুষের জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য অধিকার, যা সে নিজে ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। তবে এ চর্চা অন্যের ক্ষতিসাধন ও শান্তি বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না। আঞ্চলিক যুদ্ধ, সংঘাত, হানাহানির কারণে মানুষের অধিকার যখন বারবার লঙ্ঘিত হচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের বিষয়টি এখন আরও প্রকটভাবে অনুভূত হচ্ছে। একটি পরিবার ও সমাজের কর্তারা তাদের অধীনস্থদের অধিকার রক্ষা করবে, রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার রক্ষায় ভূমিকা পালন করবে। জাতিসঙ্ঘের ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অব হিউমান রাইটসের প্রথম অনুচ্ছেদে রয়েছে যে, জন্মগতভাবে সব মানুষ স্বাধীন এবং সমান সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। বর্তমান বিশ্বে হিউমান রাইটস শব্দটি বহুল আলোচিত ও বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। মানবাধিকারের বিষয়টি স্বতঃসিদ্ধ ও অলঙ্ঘনীয় হলেও সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই এ নিয়ে চলছে বাক-বিতণ্ডা ও দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত। এক দিকে মানবাধিকারের সংজ্ঞা ও সীমারেখা নিয়ে বিতর্কের ঝড় তোলা হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষমতাধর শাসকরা দেশে দেশে জনগণের স্বীকৃত অধিকারগুলো অবলীলায় হরণ ও দমন করে চলছে। আর দুর্বল জাতিগুলোর সঙ্গে সবল জাতিগুলোর আচরণ আজকাল মানবাধিকারকে একটি উপহাসের বস্তুতে পরিণত করেছে। ইসরাইলের ধারা ফিলিস্তিনিদের ওপর দমন-পীড়ন ও হত্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সারাবিশ্বে মানবাধিকার নিয়ে এত সোচ্চার, সেই তাদের ইসরাইলের ক্ষেত্রে এসে মানবাধিকার থমকে যায়। ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়ায় যুদ্ধ চাপিয়ে মানুষ হত্যায় তারা মেতে উঠেছিল।

সেখানে যে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, তা নিয়ে কেন ভাবেনি। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত মানুষ নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যা হলেও তা নিয়ে কোনো কথা বলে না। তাদের মধ্য এমন প্রবণতা বিদ্যমান, মানুষ হত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় না। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু থেকে মানুষ হত্যার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ভূমিকাও এখন স্পষ্ট। এ যুদ্ধ প্রলম্বিত করার ক্ষেত্রে তাদের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। যুদ্ধ বাঁধিয়ে অস্ত্র বিক্রি করছে। এক্ষেত্রে যে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, তা উপেক্ষা করে যাচ্ছে। আফ্রিকার অনেক দেশ এখন দুর্ভিক্ষের কবলে। সেখানে না খেয়ে মানুষ মরছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ ব্যাপারেও যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের কোনো কথা নেই। অথচ তারা বিশ্বে মানবাধিকারের সৌল এজেন্ট হয়ে বসে আছে। মানবাধিকার ফেরি করে বেড়াচ্ছে। ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, সেদিকে খেয়াল নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের স্বার্থ যেখানে জড়িয়ে সেখানেই তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে সোচ্চার হয়ে উঠে। মানবাধিকার নিয়ে তাদের এই একচোখা নীতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের মানবাধিকারের কথা বলা প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের স্বার্থের অনুকূলে মানবাধিকারের ছবক দেয়া মানায় না, ফিলিস্তিনে ইসররাইল প্রায় প্রতিদিন যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, এ ব্যাপারে তারা নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ইসরাইল যে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার শত্রু হিসেবে বিবেচিত, তা আমলে নিচ্ছে না। জাতিসংঘও চুপ করে বসে আছে। এক্ষেত্রে, তাদের মানবাধিকার কোথায় গেল? দুঃখের বিষয়, ওআইসিসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশগুলোও এ ব্যাপারে কোনো কথা বলছে না। কথা বললে হয়তো, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের হত্যাযজ্ঞ কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকত। আমরা মনে করি, ফিলিস্তিনে ইসরাইল যে হত্যা-নির্যাতন চালাচ্ছে, তা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে বিশ্ব বিবেকের সোচ্চার হওয়া জরুরি। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর কথা বলা উচিত। ফিলিস্তিন সংকটের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করা উচিত।

এশিয়া মহাদেশের রাষ্ট্রগুলো নাগরিকদের মধ্যে অনুরূপভাবে মানবাধিকার রক্ষা ও সমন্বয় করার জন্য ১৯৬৭ সালে গঠিত হয় এশিয়ান। কিন্তু অন্যান্য মহাদেশের মতো Asean কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে এশিয়া মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য মানবাধিকার রক্ষা আদালত গঠিত হয়নি। ফলে রাষ্ট্র দ্বারা নাগরিকদের মানবাধিকার খর্ব করার কারণে মানবাধিকার রক্ষা আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে না। যেমনটি মানবাধিকার আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারেনি, ভারতের মুসলমান গোষ্ঠী এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা। ২০১৭ সালে সামরিক দমন-পীড়ন শুরু হওয়ার পর ৭ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যায়। ওই দমন-পীড়ন চলাকালে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল বলে ভাষ্য প্রত্যক্ষদর্শীদের। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন মিয়ানমারে সেনা নিপীড়নে হতাহত বেসামরিক নাগরিক ও জ্বালিয়ে দেয়া ঘরবাড়ির হিসাব রাখছে। রোহিঙ্গারা এত নির্যাতনের পরও মানবাধিকার আদালতের আশ্রয় থেকে বঞ্চিত। বর্তমান বিশ্বে মানবাধিকার কাগজ-কলমে, বক্তৃতা আর বিবৃতিতে সারা বিশ্বের মানুষ মানবতার জয়গান গেয়ে বেড়ায়। বাস্তবে গোটা বিশ্বই মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে নিজেরাও যেমন জড়িত, তেমনই যারা এই কাজে জড়িত তাদেরও ইন্ধনদাতা। মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্ব যে রাষ্ট্র বা সরকারের সেই সরকার বা রাষ্ট্রের হাতেই দেশে দেশে মানবাধিকার সবচেয়ে বেশি লঙ্ঘিত হচ্ছে। অত্যাচারী এসব রাষ্ট্রযন্ত্রের অত্যাচারে পৃথিবী আজ নরককুণ্ড।

মানবাধিকারের বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বের নেতারা সবচেয়ে বেশি সোচ্চার। কিন্তু বাস্তবে তাদের এই মানবাধিকারের বুলি শুধু নিজ দেশের কিংবা নিজ রাজনৈতিক বিবেচনার পছন্দের লোকের জন্য, অন্য ধর্ম বা ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকদের জন্য নয়। তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাক এবং ইয়েমেনের মতো দেশগুলোর ওপর পাশ্চিমা বিশ্বের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ এবং তার কারণে মানবতার সীমাহীন অপমান।

সবখানেই চলছে অধিকার লঙ্ঘনের মহোৎসব, এক অরাজক পরিস্থিতি। স্বাভাবিকভাবে জীবনধারণের অধিকার হারিয়েছে মানুষ। শুধু ক্ষমতার লোভে বিশ্বজুড়ে ধ্বংসলীলায় মেতেছে বিশ্বের রাজনীতিকরা। সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার হরণ করছে মানবতার কথিত রক্ষকরাই। গোটা বিশ্বের মানবতা আজ বিবেকের কাঠগড়ায়। মানবতা আজ বিবেক, আদর্শ আর নীতিনৈতিকতা দিয়ে পরিচালিত নয় বরং তা অন্যদের বঞ্চিত করে নিজ দেশ আর সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত। শক্তিধর দেশগুলো নিজস্ব বলয় ধরে রাখতে হেন কাজ নেই যা করছে না। বিশ্বব্যাপী মানুষের দুর্দশা লাঘবে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে জাতিসংঘ। সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা আজ একপ্রস্থ কাগজ ছাড়া আর কিছুই নয়। মানবতা ও মানবাধিকারের বিচারে বর্তমান বিশ্ব এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশে দেশে চলছে গণহত্যা আর জাতিগত নিধনযজ্ঞ। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী ও সঙ্ঘবদ্ধ বৌদ্ধ অধিবাসীদের অভিযান এর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়া ও ইয়েমেনে ধুঁকছে মানবতা। ক্ষুধা আর দুর্ভিক্ষের কবলে আফ্রিকার লাখ লাখ নাগরিক। হত্যা, ধ্বংস আর জাতিগত নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে বিভিন্ন অঞ্চলে পাড়ি জমাচ্ছে মানুষ। কিন্তু নির্যাতিত ও নিপীড়িত এসব মানুষকে রক্ষার দায়িত্ব যাদের ওপর, তারাই আজ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মানবাধিকার একটি বুলিতে পরিণত হয়েছে, যেমনটি গণতন্ত্র নামক শব্দটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হচ্ছে গণতন্ত্রের নাম দিয়ে। মানবাধিকার হরণ করা হচ্ছে মানবাধিকার রক্ষার নামে। মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধই মানবাধিকারের প্রথম শর্ত। মানবাধিকার আইন ও আন্তর্জাতিক সনদ রয়েছে, অধিকন্তু রয়েছে নাগরিকদের অধিকার রক্ষার জন্য সংবিধান, যা রাষ্ট্রের জন্য অনুকরণীয় একটি জীবন্ত দলিল। রাষ্ট্রের ইচ্ছায় সে দলিল সর্বক্ষেত্রে কার্যকর নয়।

একটি শক্তিশালী স্বয়ংসম্পূর্ণ বিচারিক ব্যবস্থাই গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তু হওয়ার আগেই বিশ্বের শতকোটি মানুষ রাজনৈতিক, মানবিক, অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্বের শিকার হয়েছে। তবে সামাজিক জীবনযাপনের তাগিদে বা নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে সে বিপরীতমুখী আচরণও করে। নিজেকে ক্ষমতাবান হিসেবে প্রকাশ করার লিপ্সায় মত্ত হয়। তখন উপকারের রূপ বদলে গিয়ে তা স্বার্থসিদ্ধির পন্থায় পরিণত হয়ে যায়। ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও প্রতিযোগিতার যুগে মানুষ ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সভ্যতার বিকশিত সময় ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির যুগেও মনুষ্য সমাজে সহিংসতা, রক্তপাত, হানাহানি, বিদ্বেষ, প্রতিহিংসাপরায়ণতা আর উন্মাদনার যে চিত্র প্রায় নিত্য ফুটে উঠছে, এতে মানবতা আজ বিপন্ন। পৃথিবীতে মানুষের যা কিছু উদ্যোগ-উদ্যম, সবকিছুই শান্তিতে বেঁচে থাকার লক্ষ্যকে ঘিরে আবর্তিত হয়। পৃথিবী সুখময় না দুঃখময় এ নিয়ে তাত্ত্বিক বিতর্ক হতে পারে কিন্তু এ কথা সন্দেহাতীতভাবে প্রতিষ্ঠিত যে বিশ্বে নিরাপদে বেঁচে থাকার সাধনাতেই মানুষ নিজেকে ব্যস্ত রাখে। দুঃখের বিষয়, আমরা যত সভ্যতার দিকে ধাবিত হচ্ছি, ততই যেন মানবিক গুণাবলি হারিয়ে ফেলছি। করোনা এসে এই মানবিকতায় বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, আমরা কতটা মানবিকতা ধারণ করতে পারছি। কতটা অন্যের স্বার্থরক্ষা করতে পারছি। তবে আমাদের হতাশ হলে চলবে না। আমাদের চিরকালের মানবিক মূল্যবোধ ও নীতিনৈতিকতার দিকে তাকাতে হবে। আমাদের এ আচার-আচরণে করোনাভীতি সাময়িকভাবে আস্তরণ ফেললেও তা শেষ হয়ে যায়নি। এখনও মানুষের মধ্যে মানবিকতা রয়েছে। প্রয়োজন শুধু তা জাগিয়ে তোলা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত