নারী ও শিশু নির্যাতন

সাজা কার্যকর ১ শতাংশ

প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সহিংসতার কারণে নির্যাতিত নারী-শিশুরা ভর্তি হয় একটি কেন্দ্রে। এর নাম ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার, সংক্ষেপে ওসিসি। দেশব্যাপী নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতন বৃদ্ধি পাচ্ছিল; তার হার কমাতে এবং বিচারকাজ সম্পন্ন করতে পৃথক এক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। সেটাই হলো ওসিসি। যেহেতু তারা সহিংসতা এবং নানা রকম নির্যাতনের শিকার হয়, সেজন্য তাদের আগে দরকার হয় চিকিৎসাসেবার। সে জন্য দেশের ১৪টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই সেন্টার গঠন করা হয় এবং বর্তমানে তা কার্যকর রয়েছে। যে উদ্দেশ্যে ওসিসি তৈরি করা হয়েছিল, সে উদ্দেশ্য কতটুকু সফল হয়েছে, তা বিচারের সময় এসেছে।

নির্যাতিত হয়ে যেসব নারী ও শিশু কেন্দ্রে আসে, সব অপরাধের মামলা হয় না। মামলা হয় নির্যাতনের তিন ভাগের এক ভাগেরও কম। এত অল্প মামলা হলেও তাও সময় মতো শেষ হয় না। এখানেও মামলা জট। ২০০০ সাল থেকে শুরু হওয়া এই কেন্দ্র ও সেলে এ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ৫৬ হাজার ২৪ জন। মামলা হয়েছে ১৭ হাজার ৯৩। রায় হয়েছে ১ হাজার ৯০৯টি এবং সাজা কার্যকর করা হয়েছে মাত্র ২২০টি। এতেই বোঝা যায় মামলা ও সাজার অবস্থা। নির্যাতনের ধরন হিসেবে দেখা যায় যৌন নির্যাতনের সংখ্যাই বেশি। গত ২২ বছরে ২০ হাজার ৮৮৮। শিশু ও নারীর শারীরিক নির্যাতনের সংখ্যা ৩৪ হাজার ৬০৯টি এবং আগুনে পোড়া ৫২৭টি।

আজ যদি এমন দেখা যেত যে, মোট ১৭ হাজার ৯৩টি মামলার মধ্যে ১৭ হাজার মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে, তাহলে এ ব্যাপারে চরম সাফল্যের কথা বলা যেত। কিন্তু তা হয়নি। মামলা না হওয়া, হলেও তা শেষ হতে দীর্ঘদিন পার হওয়ায় নির্যাতিতরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। অনেকে ওসিসিতে সেবা নিয়ে চলে যান, মামলা করতে চান না আরেক বিড়ম্বনার আশঙ্কায়। ২০০০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৯৩ ভুক্তভোগীকে সেবা দেয়া হয়েছে এসব কেন্দ্র থেকে। নির্যাতিতরা এই সেবাটুকু পেয়েছে, যা আগে পেত না অর্থাৎ এই সুবিধা আগে ছিল না। বিদ্যমান সুবিধার সঙ্গে যদি অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো হয় তাহলে ভুক্তভোগীরা উপকৃত হবেন। এইসব সুবিধা হলো পুলিশকে দ্রুত চার্জশিট দিতে হবে। অনেক মামলায় চার্জশিট দিতেই দিনের পর দিন কেটে যায়। তখনই মামলা দুর্বল হয়ে যায়। ভিকটিম আশানুরূপ ফল পায় না। আইনজীবীরাও আইনের মারপ্যাঁচে অপরাধীদের বাঁচানোর জন্য দিনের পর দিন সময় ক্ষেপণ করেন। বিচারকরাও আইনের মধ্যে বাধা বিধায় তাদেরও কিছু করার থাকে না। দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলতে থাকায় হতাশ হয়ে অনেকেই আর মমলা চালাতে চান না।

আমরা মনে করি, এই ব্যবস্থায় প্রচলিত আইন প্রয়োজনে বদলাতে হবে। প্রকৃত দ্রুত বিচারের অধীনে আনতে যা কিছু করা দরকার করতে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় কোনো অবস্থাতেই তিন মাসের বেশি সময় নেয়া যাবে না। চার্জশিট থেকে আরম্ভ করে যাতে তিন মাসের মধ্যেই মামলা শেষ করা যায়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এটা নিশ্চিত করতে পারলেই শুধু সুফল পাওয়া যাবে। এতে নারী ও শিশু নির্যাতন কমবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এ কথা সত্য, যে কোনো অপরাধের শাস্তি হলে সেই অপরাধ কমতে বাধ্য। তবে এই শাস্তি হতে হবে দ্রুত। নারী ও শিশু নির্যাতনের অপরাধ এমন কোনো জটিল ব্যাপার নয় যে, চার্জশিট দিতে দীর্ঘদিন গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে। এ তো এক সামাজিক অপরাধ। স্বামী তার স্ত্রীকে নির্যাতন করে, এটা তো সহজেই জানা যায়। তাহলে এর শাস্তি সহজেই হবে না কেন? শিশুদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। আমরা আশা করব, শিশু ও নারী নির্যাতনের মামলার দ্রুত সম্পন্ন হবে এবং মামলার রায় ১ শতাংশ নয়- শতভাগ কার্যকর করা হবে।