ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

একুশে ফেব্রুয়ারি

আমি কি ভুলিতে পারি
একুশে ফেব্রুয়ারি

আজ ২১ ফেব্রুয়ারি। বাঙালির জাতীয় জীবনে এক গৌরবময় ও ঐতিহ্যবাহী দিন। বাঙালি জাতীয় জীবনের সব চেতনার উৎস হচ্ছে এই দিনটি। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করার ঐতিহাসিক দিন এটি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য জীবন দিয়ে বাঙালি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। একে ভুলব কেমন করে? যতদিন এই দেশ থাকবে, যতদিন বাঙালি জাতি থাকবে, ততদিন এই দিনটি ঘুরেফিরে আসবে আর আমরা তা শ্রদ্ধা এবং গৌরবের সঙ্গে স্মরণ করব, পালন করব। এই দিনটিকে কি ভোলা সম্ভব, নাকি কেউ ভুলতে পারে?

এই মহান দিনটিকেও ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল পাকিস্তান আমলে। পাকিস্তান সরকার আমাদের শহীদ মিনারে যেতে দিত না। এই দিনটি কোনো অনুষ্ঠান করতে দিত না। তাদের ক্ষোভ, এই দিনটি আমরা তাদের কাছ থেকেই রক্তের বিনিময়ে আদায় করেছিলাম। তারা পরাজিত হয়েছিল। ২১ ফেব্রুয়ারির ধারাবাহিকতায় আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়। শেষে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে আবার রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। এখানও পাকিস্তানি শাসকরা আবার বড় ধরনের পরাজয় বরণ করে। এই পরাজয়ও তারা সহ্য করতে পারেনি। পরবর্তীকালে নানান কৌশলে তাদের এজেন্ট দিয়ে এ দেশে নানা রকম বিড়ম্বনার সৃষ্টি করেছে। তারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, জাতির পিতার কন্যাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে, তার পরেও কিছুই করতে পারেনি। পাকিস্তানি দোষররা ক্ষমতায়ও চলে আসে নানান বড়যন্ত্রের মাধ্যমে। তারা যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন ২১ ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস কোনো কিছুই মহা উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হতে দেখা যায়নি। কেননা, এইসব অর্জন তারা পছন্দ করে না। পরাজিতরা আবার পরাজিত হয়েছে। সংগ্রামী বাঙালিরা আবার ক্ষমতায় এসেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আবার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই এইসব জাতীয় দিনগুলো এখন সারা জাতি মহা উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করছে, করতে পারছে। যারা ২১ ফেব্রুয়ারিকে অবজ্ঞা করত, যারা এই দিনটিকে ভুলে যাওয়ার কথা বলত, ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করত, তাদের সেই তৎপরতা চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে, যেদিন থেকে দিনটিকে আন্তর্জাতিকভাবে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা পৃথিবী মেনে নিয়েছে। এখন সারা বিশ্বের সব দেশে দিনটিকে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এখানেও বাঙলির আর এক বিজয়- আর ওদের আবার পরাজয়।

২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনের আদর্শ। বাংলা ভাষার আন্দোলন থেকে প্রকৃত অর্থে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়। আর এই সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুুর রহমান। অনেকেই এর বিরোধিতা করলেও কেউই শেষ পর্যন্ত তার নেতৃত্বের কাছে টিকে থাকতে পারেনি। দীর্ঘ সংগ্রামের পর পাকিস্তানের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করেন এই নেতা। তার এই নেতৃত্ব বিশ্বে বিরল। পরে সবাইকে তা মেনে নিতে হয়েছে। ঠিক যেমন ২১ ফেব্রুয়ারিও সবাই মেনে নিয়েছিল। মাঝেমধ্যে মেনে না নেয়া কিছু লোক কৌশলে কিছু করার চেষ্টা করে, তবে বারবার তা ব্যর্থ হয়।

আমরা আশা করি, ২১ ফেব্রুয়ারি কখনও কেউ ভুলবে না। যেমন ভুলবে না স্বাধীন দেশকে। যেমন ভুলবে না মাতৃভূমিকে। ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের অস্তিত্বের অংশ। এটাই আমাদের গৌরবের সূচনা। এই সূচনা থেকেই আজ আমরা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশে বাস করছি। একুশের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত