ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অনেকে পায়নি সব পাঠ্যবই

দ্রুত সরবরাহ করা হোক
অনেকে পায়নি সব পাঠ্যবই

বছরের প্রথম দিনই হলো মহাসমারোহ বই উৎসব। এটা এমন এক উৎসব, যা শিক্ষার্থীদের জন্য পরম প্রাপ্তির একটি দিন। এই উৎসব দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও অর্জন করেছে প্রশংসা। তবে এবার পরিতাপের বিষয় হলো, চলতি শিক্ষাবর্ষের দেড় মাস ইতোমধ্যে পার হয়েছে; কিন্তু জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) হিসাবেই এখনও ২৬ লাখ বই পাঠানো সম্ভব হয়নি। এর মানে অনেক শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছেনি। অবশ্য মুদ্রাকরদের বরাতে প্রকাশ, অন্তত ১ কোটি বই সরবরাহ হয়নি। আর সরবরাহ না হওয়া বইয়ের সবই মাধ্যমিক স্তরের। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির। এই বইগুলো আটকে আছে ৭-৮টি প্রতিষ্ঠানের কাছে। শিক্ষক ও অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই দিতে না পারায় পাঠদানে বিঘ্ন ঘটছে। আর অভিযোগ, এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন একশ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী। সূত্রমতে, ঢাকার বাংলাবাজারে পোস্ট অফিসের সামনে, নীলক্ষেত, ভিকারুননিসা-আইডিয়ালসহ রাজধানীর বিভিন্ন বড় স্কুলের আশপাশে বইয়ের দোকানে বিক্রি হচ্ছে বিনামূল্যের পাঠ্যবই। ঢাকার বাইরে থেকেও এসব বই বিক্রির খবর রয়েছে বলে জানা যায়। এটা কি করে সম্ভব, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

উল্লেখ্য, নতুন বছরের পাঠ্যবই সময়মতো সরবরাহে সমস্যা রয়েছে- এমন তথ্য কিন্তু ঢের আগে থেকেই শোনা গিয়েছিল। এই নিয়ে পত্রিকায়ও বেশ খবর বেরিয়েছিল। কর্তৃপক্ষ যথারীতি নির্বিঘ্নে বই সরবরাহের আশ্বাস দিয়ে আসছিল। কিন্তু বাস্তবে তা লক্ষ করা যায়নি। বরং পাঠ্যবইয়ে ভুল, ইতিহাস বিকৃতি ও অসংলগ্ন তথ্যাদি নিয়ে বাড়তি ঝামেলা তৈরি হয়। সরকার বিতর্কের মুখে ১০ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুটি বই বাতিল করেছে। এ কারণে অন্তত সাড়ে ৪৩ কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে- এমন কথা শোনা যাচ্ছে। একই বিষয়ের আরও দুটি বই সংশোধনের কাজ চলছে। যদি অল্প সংশোধনী আসে, তাহলে শুধু ‘ডিউ পার্ট’ পাঠালেই চলবে। আর আমূল পরিবর্তনের সুপারিশ এলে বই দুটি পুনরায় মুদ্রণ করতে হবে। এসব বিবেচনায় নিয়ে আরও ৫ থেকে ২৩ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। গচ্চা যাওয়ার হিসাব এখানেই শেষ নয়। উল্লিখিত বইগুলো লেখার জন্য লেখকদের সম্মানিসহ অন্যান্য খরচ আছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একাধিক দফায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সব মিলে বই বাতিলে গচ্চা অন্তত ৩৫০ কোটি টাকা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

পাঠ্যবইয়ের পান্ডুলিপি, মুদ্রণ ও সরবরাহের প্রক্রিয়াটি শিক্ষাবর্ষের আগে সময় নিয়েই শুরু হয়, এটা সবার জানা। প্রতিবার সফলভাবেই তা সমাপ্ত হয়। এবার এমন কী ঘটল যে, এখনও অনেক শিক্ষার্থীর হাতে প্রয়োজনীয় বইটি পৌঁছতে পারল না? মিডিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি এরই মধ্যে অভিভাবক তথা দেশবাসী অবহিত হতে পেরেছেন। কিন্তু এই নিয়ে দায়িত্বশীলদের মধ্যে আদৌ কোনো অনুশোচনা আছে বলে প্রতিভাত হয়নি। বিষয়টি দুঃখজনক। করোনাকালের দীর্ঘ ধকল কাটিয়ে শিক্ষাক্রম যখন স্বাভাবিক হওয়ার কথা, তখন এরকম ধাক্কা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। সংগত কারণেই এখানে দায়ীদের সামনে আনা দরকার, তাদের বহাল তবিয়তে থাকার কোনো অধিকার নেই। তাদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। সর্বোপরি, শিক্ষার্থীদের হাতে দ্রুত সব বই সরবরাহ করা হোক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত