ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দেশের বিপন্ন মাতৃভাষা

সুরক্ষায় প্রয়াস জরুরি
দেশের বিপন্ন মাতৃভাষা

এদেশের বেশির ভাগ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। আমরা চারপাশে কম মানুষই পাই যারা ভিন্ন ভাষায় কথা বলে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দেশে মোট মাতৃভাষা রয়েছে ৪১টি। এ তথ্য অনেকের জন্য বিস্ময়কর মনে হতে পারে। এ তথ্য ২০১৮ সালের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের (আমাই) নৃভাষাবৈজ্ঞানিক সমীক্ষার। বাংলা ও উর্দু ছাড়া এর বেশিরভাগই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে ১৪টি মাতৃভাষা বিপন্ন বলছে আমাই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে বড় উদ্যোগ না নিলে অনেক মাতৃভাষা বিলুপ্ত হতে পারে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট থেকে ২০১৮ সালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের নৃভাষাবৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’র প্রথম খণ্ডে উল্লিখিত বিপন্ন মাতৃভাষাগুলো হলো- রেংমিটচা, চাক, সৌরা, খিয়াং, খুমি, কোল, কোডা, পাত্র, লুসাই, পাংখোয়া, কন্দ, খাড়িয়া, মালতো ও মুণ্ডারি। মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, যেসব ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা পাঁচ হাজারের নিচে সাধারণত সেগুলোকে বিপন্ন ভাষা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ১৪টি ভাষার মধ্যে অন্তত ছয়টি ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা হাজারেরও নিচে। কেন এই ভাষাগুলো বিপন্নপ্রায়? এর মানে এই নয় যে, এসব ভাষার উত্তরাধিকার বহনকারী মানুষের সংখ্যা কমে গেছে, বরং ভাষার যে আর্থনৈতিক গুরুত্ব থাকে তা হ্রাস পেয়েছে- এটাই ধারণা করা যায়।

আমরা জানি, কিছু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণীত হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এর আলোকে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ২০১৭ সালে চাকমা, মারমা, গারো, সাদরি ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠ্যবই দেয়া হয়। বর্তমানে এই পাঁচটি ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক দেয়া হচ্ছে। এটা অবশ্যই ইতিবাচক উদ্যোগ, যা অন্য মাতৃভাষাভাষী মানুষের প্রতি সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটেছে।

প্রশ্ন হলো, সরকারের এমন আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও এসব মাতৃভাষা কেন পিছিয়ে পড়ছে, এমনকি কিছু বিলুপ্তির পথে রয়েছে? এ নিয়ে যথেষ্ট ভাবনার বিষয় রয়েছে। কারণ গবেষক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমান সময়ে এসে অন্য ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা আরও কমেছে। যেমন ২০১১ সালে রেংমিটচা ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা ছিল ৪০ জন। বর্তমানে এ ভাষায় কথা বলা মানুষ জীবিত আছে মাত্র ছয়জন। যেকোনো সময় এই ভাষা বিলুপ্ত হওয়ার শঙ্কা আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু মাতৃভাষায় বই প্রণয়ন নয়, পাঠদান প্রক্রিয়ায় গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষক তৈরি করতে হবে, পুরো পাঠদান প্রক্রিয়াটাই চালু করতে হবে। আবার বিপন্ন ভাষা বাঁচানোর কিছু মানদণ্ড আছে। যে ভাষাগুলোর লিখিত রূপ নেই, তাদের জন্য লিপির ব্যবস্থা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলা লিপি, রোমান বা অন্য যেকোনো লিপি নিতে পারে তারা। জাতিগুলো সিদ্ধান্ত নেবে তারা কোনো লিপি গ্রহণ করবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যদি ভাষাগুলোর ডকুমেন্টেশন করাসহ এ কাজগুলো করে, তাহলে হয়তো এ ভাষাগুলো বিলুপ্তির হাত থেকে আপাতত রক্ষা পাবে- এমন প্রত্যাশা বিষয় বিশেষজ্ঞের।

বাঙালি ভাষা আন্দোলন করেছে বাংলা ভাষা মর্যাদা রক্ষার জন্য। একই সঙ্গে এই আন্দোলন ছিল মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার জন্যও। সংগত কারণেই যে কোনো জাতিগোষ্ঠীর ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় আমাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আশা করা যায়, সরকার অপরাপর মাতৃভাষাগুলোকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত