ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অস্বাভাবিক মুরগি ও ডিমের বাজার

কারসাজিকারীরা বহাল তবিয়তে!
অস্বাভাবিক মুরগি ও ডিমের বাজার

মাছ আর গরু-ছাগলের মাংসের আকাশছোঁয়া দামের পরিপেক্ষিতে গড়পড়তা মানুষের সামনে আমিষের জোগান দেয়ার জন্য ফার্মের মুরগি আর ডিমই ছিল বড় ভরসা। পরিতাপের বিষয় হলো, সেখানেও অদৃশ্য হাতের হস্তক্ষেপ পড়েছে, ফলে সহজলভ্য উৎসটিও দুর্লভ হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে মুরগির দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। ঢাকায় এক কেজি ব্রয়লার মুরগি কিনতে ভোক্তাকে এখন গুনতে হচ্ছে ২৪০ টাকার মতো। বেড়েছে সোনালি মুরগির দামও। এই মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায়। আর ডিমের বাজার কয়েক মাস ধরেই অস্থির। প্রতি ডজন ডিমের দাম বর্তমানে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এতে স্বল্প আয়ের মানুষ প্রাণিজ আমিষের সবচেয়ে সস্তা উৎসের নাগাল পাচ্ছে না। ক্ষোভের বিষয়, দাম বৃদ্ধির এই প্রবণতায় কর্তৃপক্ষের কোনো নড়চড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অথচ এটা স্পষ্ট যে, এই দাম স্বাভাবিক নয়, কৃত্রিম কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটছে সিন্ডিকেট, ফলে যথারীতি চাপ বইতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। অন্যদিকে দাম বাড়ার ফলে গ্রামে যে ক্ষুদ্র ও ছোট খামার গড়ে উঠেছে, সেগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে করে বিপুল সংখ্যক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার পথে বসার জো হয়েছে, অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট লোকেরা বেকারত্বের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই অবস্থা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।

প্রকাশ, ডিম ও মুরগির দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার জন্য দুটি কারণ বলছেন ব্যবসায়ীরা। একটি হলো- মুরগির খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি। আর অন্যটি হলো- মুরগির বাচ্চা ও খাদ্য উৎপাদনকারী করপোরেট কোম্পানিগুলোর প্রভাবে প্রান্তিক পর্যায়ের খামার বন্ধ হয়ে যাওয়া। দুটি কারণই গুরুতর, বিশেষ করে শেষোক্ত কারণটি ভয়াবহ। এদিকে, মুরগি ও ডিমের মূল্যবৃদ্ধির জন্য বড় খামারি মালিকদের দায়ী করে ক্ষুদ্র খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) বলছে, করপোরেট কোম্পানিগুলোর স্বেচ্ছাচারিতায় ডিম ও মুরগির বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। প্রান্তিক খামার ও করপোরেটদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ খামারের উৎপাদন খরচই বাজার পরিস্থিতি বদলে দেয়। এর প্রমাণও মিলছে। সূত্রমতে, প্রান্তিক খামারিকে ৫০ কেজির এক বস্তা পোলট্রি ফিড কিনতে ৩ হাজার ৬৫০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে করপোরেটদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ খামারিকে সমপরিমাণ পোলট্রি ফিডের জন্য ২ হাজার ৬০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আর একদিনের মুরগির বাচ্চা চুক্তিবদ্ধ খামারির কাছে ৩৫ টাকায় বিক্রি করা হলেও প্রান্তিক খামারির কাছে ৬০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো ভালো মানের মুরগির বাচ্চা ও ফিড চুক্তিবদ্ধ খামারগুলোতে সরবরাহ করে। অন্যদিকে প্রান্তিক খামারিদের কাছে নিম্নমানের মুরগির বাচ্চা ও ফিড সরবরাহ করা হচ্ছে। যার কারণে প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্পষ্টত, গ্রামে গড়ে ওঠা বিপুল সংখ্যক ক্ষুদ্র ও ছোট পোলট্রি খামারগুলো ধ্বংসের একটি প্রক্রিয়া চলছে, যা ভোক্তাদের জন্য অশনিসংকেত। কারণ এভাবে ভবিষ্যতে আমিষের জোগান গুটি কয়েক বড় খামারি আর করপোরেটের কব্জায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

লক্ষণীয়, মুরগি ও ডিম জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পণ্য। দেশের বেশির ভাগ মানুষ এই দুটি পণ্যে তাদের আমিষের প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। পাশাপাশি দেশব্যাপী গড়ে ওঠা ছোট পোলট্রি খামারগুলো বেকারত্ব মোচনে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি সক্রিয় রাখতে ভূমিকা পালন করছে। সংগত কারণেই মুরগি ও ডিমের বাজার স্বাভাবিক রাখা জরুরি। আবার খামারিদের রক্ষা করতে হলে পশুখাদ্য ও উপকরণের দাম সহনীয় মাত্রায় আনার উদ্যোগ নিতে হবে। এই বিষয়টি সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে বিবেচনায় নিতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত