বাংলা ভাষায় ইংরেজির রাজত্ব

মেহেদী হাসান নাঈম

প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আচ্ছা আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় বাংলা ভাষার ৩৯টি ব্যঞ্জনবর্ণ মুখস্থ বলতে পাবরেন? আপনার মতো অনেকের উত্তর হ্যাঁ হলেও, না পারা মানুষের সংখ্যা তার চেয়ে বহুগুণ বেশি হবে। আজকে যদি আমি কাউকে বলি, ‘আমি আরাম কেদারায় বসে দূরদর্শন বাক্স দেখছি’ আর যাই হোক তার বাক্যের অর্থ বুঝতে সমস্যা হবে এটুকু আমি নিশ্চিত। মজার ব্যাপার হলো, আমি নিজেও তাদের দলে। কারণ মনের ভাব প্রকাশ করতে আমরা বাংলার চেয়ে সহজ মনে করি ইংরেজি শব্দকে। আমরা বাঙালিরা গর্ব করে বলি, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।’ আদতে কতটুকু ভালবাসতে পেরেছি আমাদের প্রাণপ্রিয় হৃদয়ের স্পন্দন বাংলাকে?

আজ যদি তরুণ প্রজন্মের কাউকে ১০ মিনিট শুধু বাংলায় কথা বলতে বলা হয়, কতজন বলতে পারবে তা আমার ঠিক জানা নেই। তবে কয়েক লাইন পরই আপনা-আপনি ইংরেজি শব্দ উচ্চারিত হবে, এটুকু বলতেই পারি। একটা গল্প মনে পড়ে গেল। ব্যক্তিগতভাবে আমি একজন উপস্থাপক। কয়েক মাস আগে নাটোরে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছিলাম যৌথভাবে। যিনি আমার সহ-উপস্থাপক ছিলেন তিনি হঠাৎ বললেন ‘কম্ফোর্টেবল’-এর বাংলা কি? ইংরেজি বলতে বলতে আমাদের মুখে বাংলার জড়তা তৈরি হয়েছে। অনেকটা ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের লেখা ‘বাংলাটা ঠিক আসে না’ কবিতার মতো- বাংলা নিয়ে আজকাল কেউ সুখের স্বর্গে ভাসে না। জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না।

মাতৃভাষার জন্য আন্দোলন ও আত্মাহুতি দেয়ার ৭১ বছর পূর্ণ হলো আজ। কিন্তু আমরা কি নিশ্চিত করতে পেরেছি বাংলা ভাষার উপযুক্ত ব্যবহার। একটি দেশ বা জাতির দর্পণ মনে করা হয় গণমাধ্যমকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেই দর্পণে দারুণভাবে নিজের আধিপত্য বিস্তার করেছে ইংরেজি শব্দ। দেশের প্রথম সারির অধিকাংশ দূরদর্শন বাক্সের নাম ইংরেজিতে। কথকতায়, বক্তৃতায় বা টিভির অনুষ্ঠানগুলোতে ইংরেজি-বাংলার যৌথ ব্যবহার চেতনায় আঘাত করে না। বরং ক্ষেত্র বিশেষে তা স্মার্টনেসের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।

টু-লেট, রেস্টুরেন্ট, মেডিসিন কর্নার- রাস্তায় বের হলে খুব সহজেই চোখে পড়ে এসব শব্দ। চোখ ধাঁধানো ইংরেজিতে লেখা সাইন বোর্ডে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে শহরের রাজপথ, বিপণিবিতান, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষের (বাবাকো) নির্দেশমালায় সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের নামফলক, সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড ও ব্যানার বাংলায় লেখা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। যা পরে আছে শুধু একটি নির্দেশনা হয়েই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেছেন, ‘বর্তমান প্রজন্মের বেশিরভাগই নিজেদের আধুনিক প্রমাণ করতে গিয়ে বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে কথা বলেন।’

পৃথিবীর প্রায় ২৮ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। বাংলা ভাষা আমাদের অত্যন্ত আবেগ ও মর্যাদার ধন। দুঃখের বিষয় বাংলা ভাষাক্রমেই মর্যাদা হারাচ্ছে। বাংলা যাদের মাতৃভাষা, বাংলা যাদের মাতৃদুগ্ধ তাদের মায়ের দুধের কোনো অভাব নেই। ওই দুধে তেজ-তাগত হয়, বাংলাও তাই আনতে হবে। এই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।

শিক্ষার্থী

সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া

[email protected]