তরুণ প্রজন্ম আলোর পথে ফিরে আসুক

তারিনা ইয়াছমিন

প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

তরুণ প্রজন্ম রাষ্ট্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তরুণদের অন্তরে সদা জাগ্রত থাকে দুর্বার তারুণ্য। তরুণদের একটি রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড বলা চলে। কেননা, এই তরুণ সমাজের হাতে তৈরি হবে ভবিষ্যতের উদাত্ত পৃথিবী। তরুণের হৃদয়ের দীপ্যমান প্রদীপের শিখায় আলোকিত হয় সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা বিশ্ব মাজার।

জাপানি দার্শনিক দাইসাকু ইকেদা তরুণ প্রজন্ম সম্পর্কে বলেন, ইতিহাস সব সময়ই তারুণ্যের শক্তির জোরেই রূপ নিয়েছে।’ কথাটি চরম সত্য। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রতিটি সফল ফলকে তরুণের নাম স্মরণীয়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে তরুণ সমাজের ভূমিকা ছিল নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এ তরুণদের দ্বারাই রচিত ভবিষ্যতের সফল ইতিহাস। এই তরুণরাই মা ও মাতৃভূমির ডাকে আত্মত্যাগ করেছে আবার এ তরুণরাই তেমনিভাবে বিশ্ব দরবারে এই সোনার বাংলাকে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে গড়ে তুলবে।

একুশ শতকের বাংলাদেশ বিভিন্ন সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। নব নব প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দেশ সমৃদ্ধির দিকে এগুচ্ছে ঠিকই; কিন্তু তার সঙ্গে তরুণ সমাজের মাঝে মূল্যবোধের পদস্খলন এবং অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ততা বাড়ছে প্রতিযোগিতামূলক হারে। দিন দিন তরুণরা নিমজ্জিত হচ্ছে অপরাধের মহাসমুদ্রে। তাদের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয়ের বিস্তার হচ্ছে। পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন, অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কমে আসছে। নৈতিকতা বিবর্জিত তরুণ সমাজ জীবনের প্রতিটি বাঁকে অমানবিকতা, নিষ্ঠুরতা, স্বার্থপরতা, জিঘাংসা, অহংকার, হিংসা, বিদ্বেষ কিংবা এ জাতীয় নেতিবাচক দিকগুলো অনুশীলন করছে। নানাবিধ অপরাধ যেমন- চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ধর্ষণ, অপহরণ, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজিতে তরুণদের সম্পৃক্ততা বেড়েই চলেছে। তার সঙ্গে তরুণদের দ্বারা সংঘটিত সাইবার ক্রাইমও উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া মানসিক হতাশাগ্রস্ত লাখো তরুণের প্রাত্যহিক জীবনের একটি কর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে মাদক সেবন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ২০১৮ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে ৩৬ লাখের মতো মাদকাসক্ত নারী-পুরুষ রয়েছে। আবার মাদকাসক্তদের বিভিন্ন সূত্র বলছে- দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা যায়, মাদক ব্যবহারকারীদের দুই-তৃতীয়াংশই বয়সে তরুণ। প্রতি ১৭ জনে একজন তরুণ মাদকাসক্ত। যে তরুণের জ্ঞান-গরিমায় রাষ্ট্র সমৃদ্ধ হওয়ার কথা, সে তরুণ সমাজই নেশায় আসক্ত হয়ে বুঁদ হয়ে থাকে ঘরের কোণে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও মাদকের সহজলভ্যতা দৃশ্যমান।

অপসংস্কৃতি তরুণ সমাজের মাঝে আরেকটি বিষফোড়া। সত্য ও সুন্দরের পথ ছেড়ে আজ তারা বেমালুম অপসংস্কৃতির চর্চায় মেতে উঠেছে। আধুনিকতার ছলে দেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে পেছনে পেলে তরুণ সমাজরা শৃঙ্খলাবিহীন একটি জীবনে প্রবেশ করছে, যেখানে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, জুয়া খেলা ও মদ্যপান দৈনন্দিন জীবনধারার অংশ হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিদ্যমান অপসংস্কৃতি চর্চা তারুণ্য শক্তি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। তরুণ আলোয় সমাজ আলোকিত হয়। নব নব ছোঁয়ায় দেশ ও জাতি সমৃদ্ধ হয়। একটি উন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণে মেঘে ঢাকা তরুণ সমাজকে আলোর পথ দেখাতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা ব্যাপক। পরিবারে একজন সদস্যের সামাজিকীকরণের মাত্রা পরিপুষ্ট হলে, সে সদস্য শৈশব, কৈশর ও তারুণ্যে নৈতিকতা বিবর্জিত কর্মসম্পাদন থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করে। এছাড়া সন্তানের সামাজিক মূল্যবোধ গঠনে অভিভাবকের দায়িত্ব বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতিটি ধর্ম নৈতিকতা ও শান্তির বাণী ছড়ায়। তাই একজন তরুণের যথাযথ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা তাকে যাবতীয় অসৎ কার্যাবলি থেকে নিজেদের সংযত রাখতে সহায়ক হতে পারে। এছাড়া সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সত্য ও সুন্দরের পথকে মসৃণ করে। তরুণ সমাজের এসব সংগঠনে সম্পৃক্ততা তাদের সব কালো থাবা থেকে আলোর পথে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। তারুণ্য ভরসার বয়স, দায়িত্ব নেয়ার সময়। বর্তমানে দেশের উদ্ভাবনের, মানবিক স্পন্দনের ও সামাজিক সমস্যা সমধানের এক বিরাট বিকল্প শক্তি তরুণ সমাজকে জরাগ্রস্ত অন্ধকার জীবন থেকে মুক্তিদানের জন্য সরকারি পদক্ষেপ একান্ত জরুরি। বেকারত্ব দূরীকরণে কর্মসংস্থানের পরিমাণ বৃদ্ধি, মাদক নির্মূল সমাজ গঠনে প্রশাসনিক ব্যবস্থা জোরদারকরণ, সামাজিকীকরণ সম্পর্কিত সেমিনারের আয়োজনসহ নানা কর্মসূচি পালনে জোর দেয়া এখন সময়ের দাবি। একবিংশ শতাব্দীর এ মাহেন্দ্রক্ষণে সুকান্ত ভট্টাচার্যের সেই ১৮ বছর বয়সের উদ্দীপ্ত তারুণ্যের সক্রিয়তায় নির্মিত হোক উদাত্ত পৃথিবী।

শিক্ষার্থী

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়