পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আমিষ জোগানো সাধারণ মানুষ প্রধানত ব্রয়লার মুরগির ওপর নির্ভর করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে এর দাম ভোক্তার ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে, এর মধ্যে আবার দুঃসংবাদ পাওয়া গেল, এতে এমন কিছু ক্ষতিকর ধাতু রয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। মূলত বিষাক্ত পোলট্রি খাদ্যে ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য। পোলট্রি মুরগিতে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, যা শরীরের জন্য খুব দরকার। কিন্তু সেই পোলট্রি মুরগির খাবারে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত বর্জ্য। এতে মুরগির মাংস ও ডিম দুটিই ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। সম্প্রতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় ব্রয়লার মুরগির খাবারে ক্ষতিকর চারটি ভারী ধাতু পাওয়া গেছে। এগুলো হলো- নিকেল, ক্রোমিয়াম, সিসা ও আর্সেনিক। এসব ভারী ধাতুর কারণে মানুষের ক্লোন ক্যান্সার, পাকস্থলী ক্যান্সার ও খাদ্যনালিতে ক্যান্সারের মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়া কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিস, হাবাগোবা, ঠোঁটকাটাসহ শরীরের যে কোনো অঙ্গে নানা জটিল রোগ হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। স্পষ্টত, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লোভে এসব ক্ষতিকর ভারী ধাতু পোলট্রি খাদ্যে মেশাচ্ছে। পোলট্রি মুরগির খাবারে ভারী ধাতু মেশানো অমানবিক। সংগত কারণেই যারা এই অপকর্মে জড়িত, তারা গণবিরোধীও বটে।
উল্লেখ্য, বিশ্বের সব দেশে খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। আর নিরাপদ খাদ্য খেলে শরীর ভালো থাকে। মেধার বিকাশ ঘটে এবং কাজকর্মে সক্ষমতা বাড়ে। তবে আমাদের দেশে খাবারের নামে বিষ খাচ্ছি। ফলে আমাদের নতুন প্রজন্ম নানা স্বাস্থ্যগত ত্রুটির মধ্যে বেড়ে উঠছে, যা ভবিষ্যতের জন্য সুখকর নয়। কারণ নিকেল, ক্রোমিয়াম, সিসা ও আর্সেনিক- এ চারটি ভারী ধাতু শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। স্নায়ুর ক্ষতি করে, স্মৃতিশক্তি কমতে থাকে। আবার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ক্যান্সার রোগী বৃদ্ধির অন্যতম কারণ পোলট্রি মুরগির খাদ্যে ক্ষতিকর চারটি ভারী ধাতু। এ কারণে কোলন ক্যান্সার, পাকস্থলী ক্যান্সার ও খাদ্যনালিতে ক্যান্সারের রোগী দেশে বাড়ছে। ক্যান্সারসহ মরণব্যাধি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো এসব ভেজাল খাদ্যসামগ্রী। অন্যদিকে মানুষের শরীরে যে ইনসুলিন তৈরি হয়, সেই পক্রিয়ায় বাধা দেয় চার ভারী ধাতু। এতে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন অনেকে। আবার অনেকের যৌন ক্ষমতা হারান। এসব ভারী ধাতুর কারণে হঠাৎ কিডনি ফেইলিওর, ক্রোনিক কিডনি ডিজিসসহ কিডনিতে নানা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এ চারটি ধাতু কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। স্মর্তব্য, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, খাবার থেকে মুরগির শরীরে ঢুকছে এই ধাতু। ক্ষতিকর এ ধাতুর বিষয় না জেনেই প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ খাচ্ছে এই মুরগি। অতিমাত্রার এসব ভারী ধাতু মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।
গবেষকরা বলছেন, মূলত ট্যানারি বর্জ্য দিয়ে তৈরি পোলট্রি ফিড বা খাবার খাওয়ানোর ফলে মুরগিতে অতিমাত্রার চারটি ধাতু ঢুকছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষর তদারকি করা প্রয়োজন। আর ব্রয়লার মুরগি যদি ভালোভাবে সিদ্ধ, ফ্রাই অথবা রান্না করে খাওয়া হয়, তাহলে ঝুঁকি থাকে না। সেজন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে অর্ধসিদ্ধ মাংস না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ভোক্তাদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এই নিয়ে প্রশাসনকেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।