বায়ুদূষণে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি

যথাযথ পদক্ষেপ জরুরি

প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

নানান দূষণে আক্রান্ত দেশ। এর মধ্যে বায়ুদূষণ বিস্তৃত ও গভীর। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যতম বায়ুদূষণে আক্রান্ত দেশ। আর এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার অবস্থা খুবই গুরুতর এবং ঘুরেফিরে দূষণ আক্রান্ত শহরগুলোর শীর্ষে ওঠে আসছে। এতে করে নাগরিক জীবন হচ্ছে বিপর্যস্ত। প্রচণ্ড ধূলাবালির কারণে অনেকের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। অস্থির লাগে, বিষণ্ণ লাগে। সবাই কেমন যেন অস্থিরতায় ভুগছে। স্পষ্টত বায়ুদূষণের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বিষণ্ণতার ঝুঁকি বাড়ায়। সায়েন্টিফিক জার্নালের ‘জেএএমএ’ নেটওয়ার্কে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বায়ুদূষণের উচ্চমাত্রার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে প্রবীণদের মধ্যে বিষণ্ণতার ঝুঁকি বাড়ায়। ‘জেএএমএ’ সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত অন্য গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিম্নস্তরের বায়ুদূষণকারীর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবও বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগ বাড়ানোর জন্য দায়ী। মনোবিজ্ঞানীর মতে, বায়ুদূষণে কারণে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। মানুষ যে প্রকৃতি ও পরিবেশে বসবাস করছে তার ভারসাম্য না থাকলে মানসিক চাপ তৈরি হয়, যা মানুষের ভালো থাকাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিষয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বায়ুদূষণই যে বড় ধরনের মানসিক রোগ তৈরি করছে, বিষয়টা এমন নয়। যারা অল্পতে উদ্বিগ্ন হন, তাদের মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্ণতা বায়ুদূষণের ফলে তীব্র হয়ে ওঠে। যার কারণে মনোযোগে সমস্যা হতে পারে, মেজাজ খিটখিটে হতে পারে। উৎপাদনশীলতা কমে যেতে পারে। অতএব, বায়দূষণকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।

এদিকে বায়ুদূষণের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। যার শিরোনাম- ‘ব্রেদিং হেভি : নিউ এভিডেন্স অন এয়ার পলিউশন অ্যান্ড হেলথ ইন বাংলাদেশ’। এতে ঢাকা ও সিলেটের চার অঞ্চল থেকে ১২ হাজার ২৫০ জনের তথ্য ব্যবহার করে বায়ুদূষণের কারণে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর স্বল্পমেয়াদি প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকায় সারা দিনে একজন যে পরিমাণে দূষিত বায়ু গ্রহণ করে, তা প্রায় দুটি সিগারেট খাওয়ার সমান ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে যে, সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ হচ্ছে ঢাকায়। ঢাকায় যানজট ও নির্মাণাধীন প্রকল্পের কারণে যে পরিমাণ বায়ুদূষণ হয়, তা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বায়ুমানের চেয়ে ১৫০ শতাংশ বেশি এবং ইটভাটার কারণে যে দূষণ হয় তা ১৩৬ শতাংশ বেশি। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রা থেকে ১ শতাংশ দূষণ বাড়লে বিষণ্ণতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা ২০ গুণ বেড়ে যেতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি বিষণ্ণতায় ভুগছেন ৬৫ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সিরা। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের দূষণপ্রবণ এলাকাগুলোর প্রায় ১৪ শতাংশ বাসিন্দা বিষণ্ণতায় ভুগছেন, বলে যা কম দূষণ আক্রান্ত এলাকার চেয়ে বেশি।

দূষিত বায়ুর কারণে মানবদেহে অ্যালার্জি, কাশি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা, ফুসফুসে ক্যান্সার ইত্যাদি মারাত্মক রোগ হতে পারে। মোট কথা বায়ুদূষণ বাড়তে থাকলে সে স্থানটি মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। তাই বায়ুদূষণের ফলে মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এরসঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নতুন আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে জনমনে শঙ্কা রয়েছে, তবে প্রতিকারের ব্যবস্থা উৎসাহব্যঞ্জক নয়। সঙ্গত কারণেই স্বাস্থ্যোজ্জ্বল নগর গড়ে তুলতে অবশ্যই এই নিয়ে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ জরুরি।