বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিং

বন্ধ হোক অপসংস্কৃতি

প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

তারুণ্যে ভরপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটির পর একটি বিভীষিকাময় ঘটনা ঘটছে। অনেক নবীন শিক্ষার্থী বড় ভাইবোনদের হাতে চরমভাবে নিগ্রহ ও অপমানের মুখোমুখি হচ্ছে, কখনও তা নৃশংস পর্যায়ে উপনীত হচ্ছে। এর কিছু কিছু রোমহর্ষক ঘটনা মিডিয়ায় ওঠে আসছে, যা সর্বমহলে ক্ষোভের সঞ্চার করছে। শিক্ষার্থী লাঞ্ছনার এ অপসংস্কৃতি র‍্যাগিং নামে পরিচিত। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এক স্বপ্নের জগৎ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অনেক শিক্ষার্থীর সেই নতুন জগৎ শুরু হয় বিভীষিকাময় হলজীবনের মধ্য দিয়ে। চলতি শিক্ষাবর্ষে ক্লাস শুরুর পর হলে উঠতে শুরু করেছেন নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা। আর একের পর এক সামনে আসছে র‍্যাগিংয়ের ঘটনা। কেউ কেউ সাহস করে অভিযোগ দিয়েছেন, অনেকে আরও ঝামেলায় পড়তে পারেন- এই শঙ্কায় মুখ বুজে সয়ে গেছেন। সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নির্যাতনের আলোচিত ঘটনায় আবারও সামনে এসেছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নবীন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিং বা পরিচয় পর্বের নামে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের বিষয়টি। প্রকাশ, গত এক-দেড় মাসেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় ১০টি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। এমনকি দুই শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন। একজন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে আর পড়বেনই না- এমন সিদ্ধান্তে কথা জানিয়েছেন।

র‍্যাগিং শব্দের অর্থ ‘পরিচয় পর্ব’। কিন্তু বাস্তবে পরিচয়পর্বের নামে চলে মানসিক নির্যাতন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুরোনো শিক্ষার্থীদের সখ্য গড়ে তোলার জন্য যে পরিচিতি প্রথা, এ দেশে সেটাকে র‍্যাগিং বলে অভিহিত করা হয়। কিন্তু বাস্তবে আদব-কায়দা, নিয়ম-কানুন শেখানোর নামে তাদের ওপর চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। ইদানীং ক্যাম্পাসি র‍্যাগিং যন্ত্রণার মাত্রা বেড়ে চলেছে। সিনিয়ররা র‍্যাগিংকে ফান হিসেবেই মনে করেন। সাম্প্রতিক এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ছাত্র রাজনীতির অবক্ষয়, ক্ষমতা দেখানোর দম্ভ। উল্লেখ্য, এরই মধ্যে বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণাদি এটা স্পষ্ট করে যে, নবীন শিক্ষার্থী নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত বেশিরভাগই একটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী, যারা আবার ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত। তাই এক অর্থে এরা ক্ষমতাসীন দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, একই সঙ্গে সরকারের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তথ্য অনুযায়ী, র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে এর মধ্যে ছাত্রলীগের পাঁচ কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এক নেত্রীকে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত রেখেছে ছাত্রলীগই। পাশাপাশি ছাত্র সংগঠনটির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব জানিয়েছে, সন্ত্রাসমুক্ত ও র‍্যাংিগমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিতে করার ক্ষেত্রে তারা নেতৃত্ব প্রদান করবে। এটা শুভ উদ্যোগ। দুষ্কৃতকারীদের বহিষ্কার ও ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমেই এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং ছাত্র সংগঠনটি অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে কড়া সতর্ক বার্তা দিয়েছে বলে আমরা মনে করি। এর ধারাবাহিকতা অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, নবীন শিক্ষার্থীরা অনেক স্বপ্ন ও প্রত্যাশা নিয়ে ক্যাম্পাসে আসে। তার বড় সিনিয়র শিক্ষার্থীদের ভাইবোন হিসেবেই পেতে চায়। অজানা-অচেনা পরিবেশে এ চাওয়াটা অতি স্বাভাবিক। সেখানে সিনিয়রের দাবি নিয়ে নবীনদের ওপর অশ্লীলতা ও নৃশংসতা চর্চা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। এটা অপরাধের শামিল। এ বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় হলো মুক্ত জ্ঞানচর্চার জায়গা। সেখানে কেন নবীন শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হবে? এটা কখনও কাম্য নয়। আমাদের এ অপসংস্কৃতির চর্চা থেকে বেরিয়ে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। এই নিয়ে কোনোরূপ শৈথল্য কাম্য নয়।