ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে দেশ, প্রস্তুতি থাকা চাই

মাহমুদুল হক আনসারী, সংগঠক, গবেষক, কলামিস্ট, [email protected]
ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে দেশ, প্রস্তুতি থাকা চাই

বর্তমান বিশ্বের ভূমিকম্পের ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। ভূমিকম্প মানবজাতির জন্য মহাবিপদ। এ পর্যন্ত দুনিয়ার নানা অঞ্চলে সংঘটিত এ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আগাম পূর্বাবাস বা সতর্কতার কোনো সংবাদ নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ভূমিকম্প একটি মহাবিপদ। দুনিয়ার যেখানেই ভূকম্পন হয়েছে, সে অঞ্চল, এলাকা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। মানবজাতির সম্পদ, জানমাল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিলীন হয়ে গেছে জনপদ। মানবজাতির সংস্কৃতির সভ্যতা, নিমিষেই ধ্বংসে পরিণত হয়েছে। ধনী হয়ে গেছে পথের ভিখারি। কালকের কোটিপতি আজকের ফকির। অল্প সময়ের ব্যবধানে মানচিত্রের পরিবর্তন। লাশের ওপর লাশ পড়ে আছে। গোটা দেশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত। হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ, বিল্ডিং মাটির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। বিল্ডিং আর জমি একাকার হয়ে গেছে। গোটা দেশকে ঝাঁকুনি দিয়ে সবকিছু ছিন্নভিন্ন করে জনপদকে লন্ডভন্ড করে দেয় ভূমিকম্প। সভ্যতা, সংস্কৃতি, মানবতাবিরোধী এ জঘণ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন ঘন ঘন পর্যবেক্ষণ করছে মানবসমাজ।

এ দুর্যোগ দূর থেকে অবলোকন করা ছাড়া, বাস্তবে মুক্তি পাওয়ার কোনো বিকল্প পথ আবিষ্কার হওয়ার সংবাদ জানা নেই। বিজ্ঞানের চিন্তা আর ধর্ম চিন্তা এক নয়। বিজ্ঞান ভূকম্পনের নানা বিশ্লেষণ করে থাকে। পৃথিবীর বয়স, সময় ইত্যাদির বিবেচনায় ভূমিকম্পের কিছু লক্ষণ বর্ণনা প্রকাশ করে। বিজ্ঞান মানবসমাজে ভূমিকম্পন সম্পর্কে আগে কোনো সতর্কতা দিতে পারে না। সংঘটিত হওয়ার পর কিছু বিশ্লেষণ মন্তব্য প্রচার করে। এখনও পর্যন্ত ভূমিকম্পের পূর্বাভাস মানবসমাজ অবগত হওয়ার বা জানার কোনো যন্ত্র আবিষ্কার হয়নি। তবে বিজ্ঞান এ বিষয়ে মানবসমাজকে পূর্বাভাস দেয়ার জন্য চেষ্টা করছে। মনে হয় এ চেষ্টার সফলতা খুবই কঠিন। তবুও বিজ্ঞান এগিয়ে চলুক, এগিয়ে যাক মানব জাতির কল্যাণে সেটিই প্রত্যাশা।

ধর্মের সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনো কোনো বিষয়ে দ্বিমত আছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিন্তা-চেতনায় মিল পাওয়া যায়। ধর্ম মানবসমাজের কল্যাণে ধর্ম শিক্ষা অনুসরণ সমাজকে আলোকিত করে। সঠিকভাবে পথ চলাতে সাহায্য করে। পৃথিবী সৃষ্টির কিছু রহস্য রয়েছে। দুনিয়া সৃষ্টির তত্ত্বের মধ্যে নদী, পাহাড়, পর্বত, সাগর মানব সৃষ্টির অসংখ্য ঘটনা ইতিহাস ধর্মগ্রন্থে বিশাল চিন্তায় বিশ্লেষণ আছে। কি জিনিস কী কারণে সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টিকর্তা সেসব বহু আলোচনা ধর্মগ্রন্থে পাওয়া যায়। বর্তমান সমাজ ও বিজ্ঞান, আধুনিক বুদ্ধিজীবী, গবেষক, সমাজচিন্তক বলতে গেলে ধর্ম নিয়ে বেশ একটি চিন্তা করতে চায় না। তারা প্রকৃতি, অবস্থান, সংস্কৃতি নিয়ে খুব বেশি আধুনিকভাবে চিন্তা করে থাকেন। পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্য কোনো জিনিস কি জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তার একটি নির্দেশনা বর্ণনা ধর্ম গ্রন্থে পাওয়া যায়। সে হিসেবে চিন্তা করলে ভূমিকম্পের জন্য সৃষ্টির প্রতি অত্যাচারকে ভূমিকম্পের অন্যতম কারণ বা অনুসঙ্গ বলা যায়। এক ধরনের বলা যায় ভূমিকম্প এ দুর্যোগ মানব জাতির সৃষ্ট একটি অপরাধের শাস্তি। কী অপরাধ? অপরাধ হলো জমিনের পেরেক খ্যাত, পাহাড়কে টুকরো টুকরো করে নিশ্চিহ্ন করা। খাল-বিল নদী ভরাট করে জনবসতি আবাসন গড়ে তোলা। গাছপালা, প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশকে ইচ্ছেমতো ধ্বংস করে সৃষ্টির সৌন্দর্যকে নিজের মতো করে পরিবর্তন করা। পশু-পাখির আবাস ভূমিকে নিশ্চিহ্ন করা। তাদের স্বাধীনভাবে জাতির ওপর অন্যায়ভাবে জুলুম-অত্যাচারে নিমজ্জিত হওয়া। শক্তির অহংকার আর ক্ষমতার বলে দুর্বলের ওপর জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন করার পরিণাম হলো আল্লাহ প্রদত্ত এসব ভূমিকম্প এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

বাস্তবে এসব দুর্যোগ থেকে বাঁচতে হলে পরিবেশের প্রতি সদয় হতে হবে। আল্লাহ প্রদত্ত সৃষ্টিকুলকে তারই নিয়মে ভোগ করতে হবে। সৃষ্টির শৃঙ্খলার ওপর কোনোভাবেই হাত দেয়া যাবে না। পাহাড়-পর্বত, নদীনালাকে সঠিক নিয়মে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। সম্পূর্ণভাবে পাহাড় কর্তন বন্ধ করতে হবে। নদী ভরাট করা যাবে না, বন-জঙ্গল ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বন-জঙ্গলের বন্যপ্রাণীদের বসবাস এবং রক্ষণাবেক্ষণে তাদের অধিকার পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে সমাজকে। সমাজে-সমাজে হানাহানি, দেশে দেশে যুদ্ধ অন্যায়ভাবে মানবহত্যা বন্ধ করতে হবে। ধর্মের চর্চা অনুশীলন বাড়াতে হবে। সৃষ্টিকর্তার আদেশ নির্দেশকে গুরুত্ব দিয়ে অনুসরণের মানসিকতা থাকতে হবে। যার যার অবস্থান থেকে অধিনস্তদের সঙ্গে সদাচরণ করতে হবে। ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।

মানবজাতি, পরিবেশ, পশু-পাখি সৃষ্টির কারও সঙ্গে অন্যায়ভাবে অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। এর সঙ্গে নতুন, পুরাতন সব ধরনের বিল্ডিং তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণে বিজ্ঞানসম্মত সব ধরনের আইনের প্রতি অনুসরণ করতে হবে। বিল্ডিং তৈরির সব নিয়ম কঠোরভাবে অনুসরণ থাকতে হবে। সিডিএ প্ল্যান মতে বিল্ডিং করতে হবে, প্ল্যান ব্যতিরেকে তৈরিকৃত বিল্ডিংয়ের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। আইন শুধু বই-খাতাকে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। সমাজে বাস্তবায়ন করতে হবে। অনুমোদনবিহীন বিল্ডিং চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। ইঞ্জিনিয়ার প্ল্যানিং, কোন কোন বিল্ডিং এ নেই তা তদারকি করে তাদের আইনের আওতায় এনে, শৃঙ্খলায় আনতে হবে। ভূমিকম্প থেকে সমাজ ও জাতিকে বাঁচাতে হলে সচেতনতার বিকল্প নেই। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে গুরুত্বের সঙ্গে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থীদের মাঝে গুরুত্বের সঙ্গে এ বিষয়ে পাঠদান রাখতে হবে। নিয়ম মেনে বিল্ডিং তৈরির কার্যক্রমকে বাস্তবায়ন করতে হবে। অনিয়ম দুর্নীতিতে তৈরি করা বিল্ডিং চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে জনসচেতনা বৃদ্ধি এবং পরিবেশের প্রতি সদাচরণ বাঁচাতে পারে ভূমিকম্পের ভয়াবহতা থেকে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত