দক্ষিণাঞ্চলে সমস্যায় স্বাস্থ্যসেবা

প্রতিকারে ব্যবস্থা নিন

প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

দক্ষিণাঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে- সংবাদপত্রে এমন এক খবরে নাগরিক মাত্রেরই অস্বস্তি বোধ করা স্বাভাবিক। এখানে অন্যসব সমস্যার সঙ্গে জনবল অপ্রতুলতা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রকাশ, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠির সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকের ১ হাজার ৮০৭টি পদের বিপরীতে ৮২১টিই ফাঁকা। ফলে এসব হাসপাতালে যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, চিকিৎসকরা এত ব্যস্ত থাকেন যে, তাদের সঙ্গে কথাই বলা যায় না। এদিকে শূন্য পদে চিকিৎসক নিয়োগের দাবি দীর্ঘদিনের হলেও কোনো প্রতিকার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক নেতারাও। এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরাতে জানা যায়, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিক বাদে বরিশাল বিভাগে মোট ১২৫টি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। এসব হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আশ্বাস মিলেছে বটে; কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। বলাবাহুল্য, ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারের গর্ব করার মতো স্বাস্থ্য উদ্যোগগুলোও যে যথাযথভাবে সেবা দিতে পারছে, তা দাবি করা যাবে না। বরং পরিস্থিতি আরও নিম্নমুখী বলে ধারণা করা যায়। এই অবস্থা কিছুতেই প্রত্যাশিত নয়।

স্মর্তব্য, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিপুল বিনিয়োগ সত্ত্বেও দেশের সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে তৃপ্তির অবকাশ এখনও ঘটেনি। করোনাকালে ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিষয়টি সবাই চাক্ষুষ করেছে। আরেকটি দেখার বিষয়, অন্যসব খাতের মতো স্বাস্থ্যসেবার বড় অংশ রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক। আর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালগুলো সাধারণ মানুষের চিকিৎসায় ভূমিকা রাখে। কিন্তু সেখানে রয়েছে নানা সমস্যা। এটা শুধু দক্ষিণাঞ্চল নয়, সারাদেশেই লক্ষণীয়। তবে দক্ষিণাঞ্চলের বিষয়টি এখন ব্যাপক হয়ে দেখা দিয়েছে। উল্লেখ্য, দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর শয্যা সংখ্যা ১ হাজার হলেও প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার। আর বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন ৩ হাজারেরও বেশি। এখানে ৫২৬ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ২৯৮ জন। হাসপাতালটিতে নির্ধারিত শয্যার চেয়ে বারান্দা বা মেঝেতেই চিকিৎসা নেন বেশিরভাগ রোগী। অর্থাৎ দক্ষিণাঞ্চলে সবচেয়ে বড় হাসপাতালটিও লোকবলের অভাবে যথাযথ চিকিৎসা প্রদানে সক্ষম হচ্ছে না। এটা স্বাভাবিক যে, একজন চিকিৎসককে দিয়ে ৪ জন চিকিৎসকের কাজ করানো সম্ভব নয়। দ্রুত যদি চিকিৎসকের এসব শূন্য পদে নিয়োগ দেয়া না হয়, তাহলে চিকিৎসক ও রোগী উভয়ের ভোগান্তি বাড়তেই থাকবে। অন্যদিকে এমন অভিযোগ রয়েছে, এ অবস্থার মধ্যেও চিকিৎসকের কেউ কেউ হাসপাতালের চেয়ে প্রাইভেট চেম্বারে বেশি ব্যস্ত থাকেন। চিকিৎসাসেবা মূলত ইন্টার্নরাই দিচ্ছেন।

জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলে চিকিৎসক সংকটের সমস্যাটা অনেক দিনের। সঙ্গত কারণেই এ বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। এদিকে যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে অনেক রোগী বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। কিন্তু সবার পক্ষে সেখানে চিকিৎসা নেয়া বিলাসিতার শামিল। তাছাড়া বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতালগুলোর মান নিয়ে প্রভূত প্রশ্ন রয়েছে। মানসম্মতার অভাবে সম্প্রতি অভিযানে এই ধরনের অনেক চিকিৎসাকেন্দ্র সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় সরকারি হাসপাতালগুলোই ভরসা। তাই এখানে বিদ্যামান সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান হওয়া জরুরি।