শিক্ষা উপকরণে উচ্চ মূল্যবৃদ্ধি

মাহমুদুল হক হাসান, শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সম্প্রতি বৈশ্বিক সংকটের মুখে কাগজের মূল্যবৃদ্ধি লাগামহীন হয়ে পড়ছে। বাজারে কাগজের মূল্যবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করছেন পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতারা। কাগজ সংকট দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা রূপে দেখা দিয়েছে। বাজারে শিক্ষা উপকরণ যথা- কাগজ, কলম, পেন্সিল, ব্যবহারিক খাতা মার্কার, ফাইল, বোর্ড, ক্যালকুলেটর, স্কেল, কালিসহ সব পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। কাগজের মূল্যবৃদ্ধির ফলে ছাপাখানা, প্রকাশনী, বিপণিকেন্দ্র আর ফটোকপির দোকানগুলোতে চলছে হাহাকার। কাগজের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিপাকে পড়ছেন শিক্ষার্থী, সৃজনশীল বই প্রকাশক ও পত্রিকা শিল্পসহ বিভিন্ন কার্টন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। পুস্তক প্রকাশনার সঙ্গে সংশ্লষ্টদের থেকে জানা যায় ৮০/৯০ ও ১০০ গ্রামের ডিডি অফসেট গত বছর যেখানে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় প্রতি রিম বিক্রি হতো, সেই কাগজ এখন ৩ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সর্বত্র ডলার ও জ্বালানির তীব্র সংকটে দেশে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিভিন্ন পুস্তক প্রকাশনা, মুদ্রণ, পত্রিকা শিল্প, ছাপাখানা ও প্যাকেজিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও কর্মীদের কর্মসংস্থান পড়ছে মারাত্মক ঝুঁকিতে। প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠান বা পণ্যের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে হাজারো মানুষের জীবিকা। পুস্তক প্রকাশনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের থেকে জানা যায় একটি বই পাঠকের কাছে পৌঁছাতে ১৬টি পেশাদারের হাত স্পর্শ করে থাকে। মিল মালিকদের থেকে জানা যায়, ইতোমধ্যে অনেক কাগজ কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাওয়া ও কাঁচামাল সংকটে পড়ছে কাগজের মিলগুলো। দেশের সর্বত্র ডলার ও জ্বালানির তীব্র সংকটে অস্থিরতা বিরাজ করছে। চলমান নানামুখী সংকটের মধ্যে উপদ্রবের নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে বাজারে ঊর্ধ্বমুখী শিক্ষা উপকরণ। নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিক্ষা উপকরণ তথা খাতা,কালি ও কলমের দামও। শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের অভিভাবকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। করোনার অভিঘাতে ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের বাজারে যেখানে সংসার চালাতে টালমাটাল অবস্থা সেখানে সন্তানদের লেখাপড়া তো কাঁটা হয়ে বিঁধছে। সংবাদপত্রের তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রায় শ’ খানেক কাগজ কল রয়েছে। বহু আগ থেকেই বাংলাদেশ কাগজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। দেশের কাগজ কলগুলোতে অফসেট, নিউজপ্রিন্ট, লেখা ও ছাপার কাগজ, প্যাকেজিং পেপার, ডুপ্লেক্স বোর্ড, মিডিয়া পেপার লাইনার, স্টিকার পেপার, সিকিউরিটি পেপার ও বিভিন্ন গ্রেডের টিস্যু পেপার উৎপন্ন হয়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ থেকে ৪০টিরও বেশি দেশে কাগজ রপ্তানি হওয়ার ঘটনা রয়েছে। দেশীয় কাগজ কলগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ১৬ লাখ টন হলেও দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের কাগজের চাহিদা মাত্র ৯ লাখ টন। কাগজের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিপাকে পড়েছেন সৃজনশীল বই প্রকাশক ও পত্রিকা শিল্পসহ বিভিন্ন কার্টন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। দেশে ডলার ও জ্বালানির তীব্র সংকটে কাগজ কারখানাগুলো বিরাজ করছে হাহাকার। দেশীয় কাগজ কলগুলোর উৎপাদনে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কাগজের দাম লাগামছাড়া হওয়ায় একদিকে কাগজের পাইকাররা দোষ চাপাচ্ছেন মিল মালিকদের, অপরদিকে মিল মালিকরা বলছেন বিশ্ববাজারে কাগজ তৈরির মণ্ড বা ভার্জিন পাল্পের দর অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়াসহ দেশে জ্বালানি সংকট ও কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চমূল্য বৃদ্ধি তো আছেই। ফলে বাজারে কমেছে কাগজের সরবরাহ এবং বেড়েছে কাগজের মূল্যবৃদ্ধি। এ অবস্থায় কাগজের অনিয়ন্ত্রিত মূল্যবৃদ্ধি ও দুষ্প্রাপ্যতা নিরসনে ও কাগজের অকেজো কারখানাগুলো চালু, কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ, কাগজের অপচয় রোধে সিন্ডিকেট কারসাজি ছিন্ন করে, স্বল্পশুল্কে কাগজের কাঁচামাল আমদানি ও কাগজের রিসাইক্লিংসহ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের সুদৃষ্টি একান্ত কাম্য।