রাজধানীকেন্দ্রিক উচ্চশিক্ষা

শিক্ষায় বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি

প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মুখে বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলা হলেও রাজধানীতে সব কিছু কেন্দ্রীভূত করাই যেন স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে। এটা সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের কথাই বলা যায়। সব পক্ষেরই রাজধানী কিংবা এর আশপাশে নিজেকে বিকশিত করার একটি প্রবণতা বিদ্যমান। এটা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও লক্ষণীয়। স্মতর্ব্য, সরকার দীর্ঘদিন ধরে উচ্চশিক্ষাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে চাইছে, যার অংশ হিসেবে বিভিন্ন জেলায় স্থাপন করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় দেয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে। অথচ দেশের ১৫৮টি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫টিই ঢাকা বিভাগে। যার মধ্যে ৬৬টি বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত ঢাকায়। ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের মোট পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১৫৮টি। এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৫০টি। আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৮টি। ঢাকা বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে মোট ৮৫টি। অথচ রংপুর বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা মাত্র ৪টি। আর বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৫টি করে। চট্টগ্রাম বিভাগে ২৫টি, রাজশাহী বিভাগে ১৪টি, খুলনা বিভাগে ১০টি, সিলেট বিভাগে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ইউজিসির পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, ঢাকা বিভাগের ৮৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শুধু রাজধানীতে রয়েছে ৬৬টি। এর মধ্যে ৫৭টি প্রাইভেট এবং ৯টি পাবলিক।

স্পষ্টত, আমাদের সব কিছু রাজধানীকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে- উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও এটা সঠিক। দেখার বিষয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজধানীতে অধিকভাবে পুঞ্জীভূত হয়ে পড়েছে। সম্ভবত রাজধানীর বাইরে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার চ্যালেঞ্জ বহন করতে তা অপরাগ। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বরাতে প্রকাশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়গুলো আমলে নেয়া হলেও বাস্তবতার কারণে অনেক সময় তা কার্যকর হয় না। কোনো বাস্তবতার কারণে উচ্চশিক্ষার সুবিধা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না, তা চিহ্নিত করা দরকার। অথচ শিক্ষার বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে সরকারের ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে বলে জানা যায়। তবে এখানে সদিচ্ছার বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। সরকারি পর্যায়েও দেখি সব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলো রাজধানীতে ঘিরে অবস্থিত। চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী করার মাধ্যমে ঢাকার ওপর প্রাতিষ্ঠানিক চাপ কমানোর দীর্ঘদিনের উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। মানসম্পন্ন স্কুল-কলেজগুলোর রাজধানীতে অবস্থিত। ক্লিনিক-হাসপাতালগুলোও এখানেই। অর্থাৎ কর্মসংস্থান, শিক্ষা, বাণিজ্য সব কিছুরই দায় মেটাতে হচ্ছে রাজধানীকে। ফলে শহরটি এখনও রীতিমতো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। বিশ্বে দূষণ ও অস্বাস্থ্যকর নগর হিসেবে এটি পরিচিত হচ্ছে। এই অবস্থা কিছুতেই প্রত্যাশিত নয়। সংগত কারণেই সব কিছুর মতো উচ্চশিক্ষার বিকেন্দ্রীকরণের কথা ভাবতে হবে।

শরীরের সব রক্ত যেমন মুখমণ্ডলে জমা হলে তা সুস্বাস্থ্য হিসেবে গণ্য করা যায় না, তেমনি সব সুবিধা তথা অবকাঠামো রাজধানীকেন্দ্রিক হলে তাকে স্বাভাবিক বলা যায় না। ফলে আমরা একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রয়েছি- এটাই বলা যায়। আমরা জেনেছি, সরকার প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে, এটা সাধুবাদ পাওয়ার মতো কর্মসূচি। আমরা আশা করব, বেসরকারি উদ্যোক্তারাও অনুরূপ উদ্যোগ গ্রহণে আগ্রহী হবে। পাশাপাশি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবশ্যই উচ্চশিক্ষার আন্তর্জাতিক মাপকাঠিগুলো অনুসরণ করতে হবে। অনেকের অনুযোগ, আমাদের দেশের বেশির ভাগ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানই বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা আত্মস্থ করতে সক্ষম হয়নি। তাই মানের ক্ষেত্রেও বিজ্ঞতার পরিচয় দিতে হবে। আর নিজ জেলাতেই যাতে শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার সুবিধা পায়, সেজন্য বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করতে হবে।