ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্লাস্টিক দূষণ, ব্যবস্থাপনা এবং নতুন চিন্তাভাবনা

প্রফেসর ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, ভাইস চ্যান্সেলর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
প্লাস্টিক দূষণ, ব্যবস্থাপনা এবং নতুন চিন্তাভাবনা

পরিবেশে পচনরোধী প্লাস্টিকজাতীয় দ্রব্য, উপজাত, কণিকা বা প্লাস্টিকের দ্রব্য নিঃসরিত অণুর সংযোজন; যা মাটি, পানি, বায়ুমণ্ডল, বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য ও মানবস্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে, তাকে সাধারণভাবে প্লাস্টিক দূষণ বলা হয়।

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে যা যা ব্যবহার করি, তার অধিকাংশই প্লাস্টিকের তৈরি। প্লাস্টিক হচ্ছে কৃত্রিমভাবে তৈরি পলিমার, যা মূলত জীবাস্ম জ্বালানি বা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি করা হয়। প্লাস্টিক সাধারণভাবে সহজেই বাঁকানো যায় (নমনীয়), ক্ষয়রোধী, দীর্ঘস্থায়ী এবং সস্তা। আলেকজান্ডার পার্কস ১৮৫৫ সালে প্রথম মানবসৃষ্ট প্লাস্টিক আবিষ্কার করেন এবং এর নাম দেন পার্কেসিন। এটি তৈরি করা হয়েছিল উদ্ভিদের সেলুলোজ ও নাইট্রিক অ্যাসিডের মধ্যে বিক্রিয়া করে। তবে ১৯০৭ সালে লিও বেকল্যান্ড সম্পূর্ণ সিনথেটিক প্লাস্টিক আবিষ্কার করেন এবং এর নাম দেন বেকেলাইট। তিনিই প্রথম প্লাস্টিক শব্দটি ব্যবহার করেন। এছাড়া যে দু’জন বিজ্ঞানী প্লাস্টিক উৎপাদনে অনন্য অবদান রাখেন, তারা হলেন নোবেলজয়ী হারমেন স্টাওডিংগার (পলিমার রসায়নের জনক) এবং হারমেন মার্ক (পলিমার পদার্থবিদ্যার জনক)। ডুপনট করপোরেশন কর্তৃক উদ্ভাবিত নাইলন ছিল বাণিজ্যিকভাবে সফল সিনথেটিক থার্মোপ্লাস্টিক পলিমার।

গত ৫০ বছরে পৃথিবীতে মাথাপিছু এক টনের বেশি প্লাস্টিকের দ্রব্য উৎপাদন করা হয়েছে। এসব পচনরোধী প্লাস্টিক বর্জ্যের শতকরা ১০ ভাগ পুড়িয়ে ধ্বংস করা হলেও বাকি ৯০ শতাংশের বেশি বিশ্ব পরিবেশকে নানাভাবে বিপন্ন করে তুলেছে। এসব ক্ষতিকর পচনরোধী বর্জ্য পরিবেশে ৪০০ থেকে ১ হাজার বছর পর্যন্ত থাকতে পারে এবং নানা রকম মাইক্রো বা ন্যানো কণা বা ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণ করে প্রতিবেশে ও মানবস্বাস্থ্যে ভয়ংকর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পৃথিবীতে প্রতি বছর ৪৫ কোটি টনের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে যোগ হচ্ছে। এ বর্জ্যের ৫১ শতাংশ উৎপাদন হচ্ছে এশিয়া মহাদেশে। প্লাস্টিক দূষণ বিশ্বের সব দেশে এবং সব পরিবেশে এমনকি মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া, গভীর সমুদ্রের তলদেশ এবং মেরু অঞ্চলেও বিস্তৃত।

মাইক্রো ও ন্যানো প্লাস্টিকের কণা এবং নানা রকম ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ, যেমন- বিসফেনলে পরিবেশে নির্গত হয়। এসব মাইক্রো ও ন্যানো কণা এবং নিঃসৃত ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মানুষ ও অন্যান্য জীবের হরমোনাল সিস্টেম নষ্ট করতে পারে। ফলে প্লাস্টিক দূষণ মানুষ ও অন্যান্য জীবের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রান্ত করে নানা রকম দুরারোগ্য ব্যাধি সৃষ্টি করে। এছাড়া এসব প্লাস্টিক ন্যানো কণা এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মানুষ ও অন্যান্য জীবের কোষাভ্যন্তরে অবস্থিত ডিএনএ ও আরএনএ অণুর মধ্যে পরিবর্তন করে ক্যান্সার বা স্নায়ুতন্ত্র বিকল করতে পারে।

প্লাস্টিক বর্জ্য কর্তৃক সামুদ্রিক প্রতিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। ফলে মৎস্য, তিমি এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু সামগ্রিকভাবে সামুদ্রিক প্রতিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমাদের পানীয় জলের শতকরা ৮০ ভাগ পানি মাইক্রো ও ন্যানো প্লাস্টিকের কণা দ্বারা দূষিত।

এসব অদৃশ্য প্লাস্টিকের কণা ও হরমোনাল সিস্টেমের প্রভাবকারী প্লাস্টিক নিঃসৃত বিষাক্ত দ্রব্যাদি খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানবস্বাস্থ্যকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানোর ফলে ২০১৯ সালে বায়ুমন্ডলে ৮ দশমিক ৫ কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড যোগ হয়েছে। এক হিসেবে দেখা যাচ্ছে বিশ্বের উষ্ণায়নের ১০ থেকে ১৩ শতাংশ অবদান হচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানোর মাধ্যমে। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ কোটি টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয়েছে। তার মধ্যে ৭৯ শতাংশ নানাভাবে পরিবেশে জমা হয়ে মানবস্বাস্থ্যসহ প্রকৃতির অন্যান্য জীবের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলেছে। পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ৩৮১ কোটি টন প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকজাত দ্রব্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ হচ্ছে একবার ব্যবহারযোগ্য (সিঙ্গেল ইউজ)। শুধু শতকরা ৯ ভাগ পুনর্ব্যবহার করা হয়। বর্তমান ধারা চলতে থাকলে ২০৩১ সাল নাগাদ পৃথিবীতে প্লাস্টিকের দ্রব্য উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হবে।

প্লাস্টিক দূষণের ফলে প্রতি বছর ১০ লাখ সামুদ্রিক পাখি এবং ১ লাখ সামুদ্রিক প্রাণী মৃত্যুবরণ করে। প্লাস্টিক দূষণের সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে সামুদ্রিক প্রতিবেশ। বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখেছেন, বর্তমানে সমুদ্রে ৫ দশমিক ২৫ ট্রিলিয়ন মাইক্রো ও ম্যাক্রো প্লাস্টিকের কণা জমা হয়েছে। প্রতি বর্গমাইল সমুদ্রে ৪৬ হাজার টুকরো-কণা প্লাস্টিক জমা হয়েছে। সমুদ্রে জমাকৃত প্লাস্টিকের মোট ওজন ২ লাখ ৬৯ হাজার টন। প্রতিদিন ৮০ লাখ টুকরা প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে পতিত হচ্ছে। এভাবে জমতে জমতে বড় বড় মহাসাগরে প্লাস্টিক বর্জ্য জমাকৃত এলাকা (প্যাঁচ) তৈরি হয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রশান্ত মহাসাগরে বর্তমানে প্লাস্টিক বর্জ্যের প্যাঁচের আয়তন প্রায় ১৬ লাখ বর্গকিলোমিটার। অনুরূপ প্লাস্টিক বর্জ্য জমাকৃত এলাকা অন্যান্য মহাসাগর এবং সাগরেও সৃষ্টি হয়েছে। শুধু সমুদ্রের তলদেশ নয়, সমুদ্রের পানির উপরিস্তরের প্রায় শতকরা ৮৮ ভাগ কমবেশি প্লাস্টিক দূষণে দূষিত। প্লাস্টিক বর্জ্যের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক দূষণ সৃষ্টি করছে প্লাস্টিক ব্যাগ বা পলিথিন ব্যাগ। প্রতি মিনিটে ১০ লাখ প্লাস্টিক ব্যাগ আমরা ব্যবহারের পর ফেলে দিচ্ছি। সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর প্লাস্টিক ব্যাগ বর্জ্য ৫০ হাজার কোটি। প্রতি বছর ৮৩০ কোটি প্লাস্টিক ব্যাগ ও প্লাস্টিকের টুকরো আমরা অসচেতনভাবে সমুদ্রসৈকতে ফেলে আসছি। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, ২০২৫ সালে সমুদ্রে মাছের সংখ্যার চেয়ে প্লাস্টিকের দ্রব্য ও কণার সংখ্যা বেশি হবে। বর্তমানে সমুদ্র থেকে আহরিত প্রতি তিনটি মাছের মধ্যে ১টি মাছের পেটে প্লাস্টিকের দ্রব্য পাওয়া যাচ্ছে। প্লাস্টিকের দ্রব্যের মধ্যে মাইক্রোবিডস থাকে, যা সহজেই পরিবেশ দূষণ করতে পারে।

বাংলাদেশে প্রতিদিন আট লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়, তার মধ্যে শতকরা ৩৬ ভাগ পুনর্চক্রায়ণ, ৩৯ ভাগ ভূমি ভরাট এবং বাকি ২৫ ভাগ সরাসরি পরিবেশে দূষক হিসেবে যোগ হচ্ছে। প্লাস্টিকের দ্রব্যাদি মূলত জীবাস্ম জ্বালানি (পেট্রোলিয়াম অয়েল) থেকে পলিমার হিসেবে তৈরি করা হয়। তবে প্রস্তুতকালে নানা রকম সংযোজনকারী জৈব যৌগ যোগ করা হয়। পরিবেশে প্লাস্টিক বর্জ্য নানা রকম মারাত্মক বিপজ্জনক জৈব যৌগ নিঃসরণ করে। তার মধ্যে বিসফেনল-এ, ফথেলেটস, বিসফেনোন, অর্গানোটিনস, পার এবং পলি ফ্লোরোঅ্যালকাইল পদার্থ এবং ব্রোমিনেটেড ফেইম রিটারডেন্টস উল্লেখযোগ্য। এসব রাসায়নিক পদার্থ মানুষসহ অন্যান্য জীবের হরমোনাল সিস্টেম নষ্ট করে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। এছাড়া প্লাস্টিক বর্জ্য নিঃসৃত এসব রাসায়নিক পদার্থ স্নায়ুতন্ত্র এবং মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নানা রকম রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ন্যানো প্লাস্টিক বর্জ্য এবং প্লাস্টিক বর্জ্য নিঃসৃত রাসায়নিক পদার্থ জীবের শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন করতে পারে এবং ক্যান্সারসহ নানা রকম দুরারোগ্য ব্যাধির কারণ হতে পারে।

বাংলাদেশে প্রতিদিন আট লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়, তার মধ্যে শতকরা ৩৬ ভাগ পুনর্চক্রায়ণ, ৩৯ ভাগ ভূমি ভরাট এবং বাকি ২৫ ভাগ সরাসরি পরিবেশে দূষক হিসেবে যোগ হচ্ছে। প্লাস্টিকের দ্রব্যাদি মূলত জীবাস্ম জ্বালানি (পেট্রোলিয়াম অয়েল) থেকে পলিমার হিসেবে তৈরি করা হয়। তবে প্রস্তুতকালে নানা রকম সংযোজনকারী জৈব যৌগ যোগ করা হয়। পরিবেশে প্লাস্টিক বর্জ্য নানা রকম মারাত্মক বিপজ্জনক জৈব যৌগ নিঃসরণ করে। তার মধ্যে বিসফেনল-এ, ফথেলেটস, বিসফেনোন, অর্গানোটিনস, পার এবং পলি ফ্লোরোঅ্যালকাইল পদার্থ এবং ব্রোমিনেটেড ফেইম রিটারডেন্টস উল্লেখযোগ্য। এসব রাসায়নিক পদার্থ মানুষসহ অন্যান্য জীবের হরমোনাল সিস্টেম নষ্ট করে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। এছাড়া প্লাস্টিক বর্জ্য নিঃসৃত এসব রাসায়নিক পদার্থ স্নায়ুতন্ত্র এবং মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নানা রকম রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ন্যানো প্লাস্টিক বর্জ্য এবং প্লাস্টিক বর্জ্য নিঃসৃত রাসায়নিক পদার্থ জীবের শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন করতে পারে এবং ক্যান্সারসহ নানা রকম দুরারোগ্য ব্যাধির কারণ হতে পারে।

প্লাস্টিক দূষণ বিশ্বব্যাপী এক জটিল সমস্যা; যা পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, অর্থনীতি ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য এক বিরাট হুমকি। পরিবেশকে বিপন্নকারী পৃথিবীর শতকরা ৫১ ভাগ প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে শুধু এশিয়া মহাদেশের দেশগুলোয়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে যোগ হচ্ছে, যা সব ধরনের বর্জ্যের শতকরা ৮ ভাগ। প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় যেসব সুপারিশ গৃহীত হয় তা হচ্ছে :

১. বিশ্বব্যাপী ও আঞ্চলিক পর্যায়ে প্লাস্টিক দূষণ ব্যবস্থাপনা প্রণীত আইন ও নীতিমালাকে হালনাগাদ করতে হবে;

২. বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণ ব্যবস্থাপনায় প্রণীত আইনের কঠোর বাস্তবায়ন করতে হবে;

৩. পরিবেশ সুরক্ষা নীতি ও প্লাস্টিক দূষণ নীতিমালাকে সমন্বয় করে আধুনিক জ্ঞানের ভিত্তিতে তা হালনাগাদ করতে হবে;

৪. প্লাস্টিকের দ্রব্যকে বারবার ব্যবহার ও পুনর্চক্রায়ণকে (রিসাইক্লিং) উৎসাহিত করতে হবে;

৫. যদিও আমাদের জীবনে প্লাস্টিকের দ্রব্যের ভূমিকা স্বীকার্য, তবে তা ব্যবহারে সতর্কতা এবং পরিমিতি আবশ্যক;

৬. পরিবেশে সহজে পচনশীল (বায়োডিগ্রেডেবল) প্লাস্টিকের ব্যবহারকে উৎসাহিতকরণ এবং পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ ও অন্যান্য পাটজাত দ্রব্যকে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারে প্রণোদনা প্রদান করতে হবে;

৭. বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করে পলিথিন ও প্লাস্টিকের অন্যান্য দ্রব্যের ব্যবহার সীমিতকরণ এবং পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া নিম্নোক্ত সুপারিশমালা জরুরিভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্যও আহ্বান জানানো হয়-

১) দেশে বর্তমানে ৫৫ মাইক্রন পুরুত্বের পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের আইন রয়েছে, তবে বাস্তবায়ন নেই। সেজন্য জরুরিভিত্তিতে ‘পরিবেশ সুরক্ষা পুলিশ ফোর্স’ গঠন করে পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহারে প্রণীত আইনের কঠোর বাস্তবায়ন সময়ের দাবি;

২) পূর্ণবয়স্ক মানুষের অভ্যাসের পরিবর্তন করা দুরূহ। কিন্তু শিশুদের জ্ঞানের পরিবর্তনের জন্য পাঠ্যপুস্তকে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা এবং এর বিকল্প পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহারের সুবিধাগুলো শিক্ষা দিয়ে জাতিকে পরিবেশসচেতন ভবিষ্যৎ নাগারিক উপহার দিতে হবে;

৩) ১৪-১৫ মিলিয়ন পলিথিন ব্যাগ প্রতিদিন ঢাকায় জলাবদ্ধতার মূল কারণ। পাটের সেলুলোজ দিয়ে সোনালি ব্যাগ তৈরি, যা সহজে কম্পোস্টে পরিণত হয়ে মৃত্তিকায় কার্বনের পরিমাণ বাড়ায়। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পাটের তৈরি বিকল্প সোনালি ব্যাগ উৎপাদনে জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ। সোনালি আঁশের প্রডাক্টে সাবসিডি দিতে হবে;

৪) বিকল্প পাট-চাহিদা মেটানোর জন্য পাট উৎপাদন বাড়াতে হবে। বারোমাসি পাটের জাত আবিষ্কার করতে হবে। গবেষণার মাধ্যমে জৈবিক রোগ দমন এবং উৎপাদন বাড়াতে হবে। লবণাক্ততা সহনশীল পাটের জাত তৈরি করে উপকূলীয় এলাকায়ও পাট উৎপাদন করতে হবে;

৫) বাংলাদেশ টেলিভিশন, অন্যান্য স্যাটেলাইট টিভি, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি এবং পরিবেশসম্মত পাটজাত সোনালি ব্যাগ এবং অন্যান্য দ্রব্য ব্যবহারে উৎসাহিত করা। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দূষণমুক্ত প্রাকৃতিক সম্পদ উপহার দেয়ার লক্ষ্যে এবং একবিংশ শতাব্দীতে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি অর্থনীতিকভাবে উন্নত সোনার বাংলা রূপায়ণে প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের এখনই সময়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত