ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফের বাড়ল বিদ্যুতের দাম

অর্থনীতি ও জনজীবনে প্রভাব ফেলবে
ফের বাড়ল বিদ্যুতের দাম

বিদ্যুতের দাম ফের বাড়বে- এমন একটি ধারণা সরকারের কর্তাব্যক্তিদের কথাবার্তায় আগেই অনুমান করা গিয়েছিল। অনুমান যে অমূলক ছিল না, খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে তা স্পষ্ট করা হলো। এবার বাড়ানো হয়েছে ৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে চলতি বছরে ২ মাসের ব্যবধানে তিন দফায় ১৫ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়াল সরকার। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর আগেও নির্বাহী আদেশে দুই দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছিল। বর্ধিত এই দাম ১ মার্চ থেকে কার্যকর হচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগ পাইকারি ও খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই দাম ফেব্রুয়ারি থেকেই কার্যকর হয়। এর আগে ১২ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এত দিন গণশুনানির মাধ্যমে বিদ্যুদের দাম বাড়ানোর ব্যবস্থা ছিল, যেখানে গ্রাহক ও সচেতন পক্ষ তাদের মতামত তুলে ধরতে পারত। অর্থাৎ মন্দের ভালো একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। এখন নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ব্যবস্থা স্থির করে গ্রাহকের মতামত রাখার কোনো সুযোগ রাখা হলো না। নির্বাহী আদেশই গ্রাহকরা মানতে বাধ্য। এখানে জনদুর্ভোগের বিষয়টি কতটা আমলে নেয়া হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন করার অবকাশ রয়েছে।

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে গ্রাহক তথা সাধারণ জনগণ আতঙ্কে থাকেন। কারণ এর নেতিবাচক প্রভাব হয় সর্বব্যাপী। দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখন আর্থিকভাবে এমন অবস্থায় রয়েছেন, যেখানে জীবন টিকিয়ে রাখা দায় হয়ে পড়েছে। আয় বাড়ছে না, অথচ বাড়ছে জীবনযাত্রার মান। প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েই চলছে। সন্তানের শিক্ষা খরচ বেড়েছে, বেড়েছে দূষণে-চাপে রোগের মাত্রা। অনেক নিম্নবিত্ত মানবেতর জীবন পার করেছে, অনেকে মধ্যবিত্ত তার অবস্থান ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। বাজারে বাহারি পণ্যের কমতি নেই। অল্পসংখ্যক সামর্থ্যবান মানুষ তা ঘুরেফিরে কিনছে, বেশিরভাগ মানুষ হাহুতাশেই জীবন পার করছে। এমন এক দুঃসহ পরিস্থিতিতে ফের বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় আদৌ কোনো প্রাপ্তি রয়েছে কি? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই দাম বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই সিদ্ধান্তের ফলে সরকারের ভর্তুকি হয়তো কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ বাড়বে। এছাড়া বাড়বে বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন খরচ। ফলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। এতে আরেকটি সমস্যা হবে। পণ্যের উৎপাদন খরচ যতটা বাড়বে, ব্যবসায়ীরা দাম তার চেয়ে আরও বেশি বাড়িয়ে দেবে। এমনিতেই ক্ষুদ্র আয়ের মানুষ বিপদে রয়েছে, নতুন সিদ্ধান্তে আরও বিপদে পড়বে। প্রশ্ন হলো, এই বিপদ কেন বারবার ডেকে আনা হচ্ছে?

একটি বহুল প্রসঙ্গ আগে থেকেই উচ্চরিত হচ্ছে, যে ভর্তুকি দেয়া মানে সরকারের লোকসান নয়। বিদ্যুতের সুলভ প্রাপ্তি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখে। জনগণ স্বস্তিতে থাকে, অর্থনীতি গতিশীল থাকে। রাজস্ব আয়ের পরিমাণ বাড়ে। কিন্তু বিদ্যুতের উচ্চমূল্য সরাসরি জনগণ ও অর্থনীতিতে আঘাত হানে। সংগত কারণেই এটা প্রত্যাশিত নয়। তাই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে বিকল্প পদক্ষেপ নেয়া হবে যৌক্তিক। জনগণের ওপর দায় না চাপিয়ে সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করা এবং দুর্নীতি নিয়ে যে অভিযোগ রয়েছে তা কমানো জরুরি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত