ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নগরীর নালা, পরিচ্ছন্নতা, জনভোগান্তি

মাহমুদুল হক আনসারী, সংগঠক, গবেষক, কলামিস্ট, [email protected]
নগরীর নালা, পরিচ্ছন্নতা, জনভোগান্তি

বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম। ঢাকার পর চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব আয়ের অন্যতম অঞ্চল হিসেবে দেখা হয়। এখানে বাংলাদেশের প্রধান বন্দর রয়েছে। প্রতিদিন শত শত মালবাহী গাড়ি বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাড়ি জমান, চট্টগ্রামের উৎপাদিত নানা পণ্যসামগ্রী দেশ-বিদেশে রপ্তানি হয়। দুনিয়ার নানা প্রান্ত থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে হাজার ধরনের পণ্য আসা-যাওয়া হয়। চট্টগ্রামের রাস্তাঘাট সর্বদা ব্যস্ত থাকে। পণ্যবাহী গাড়ি রাস্তায় চলাচলে ব্যস্ত সময় পার করে। সব ধরনের ব্যবসার অসংখ্য অফিস চট্টগ্রামে রয়েছে। বাংলাদেশের সব জেলার মানুষ এবং বিদেশি নাগরিকদেরও এখানে অবস্থান আছে। বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন অগ্রগতির অংশীদার চট্টগ্রাম জেলা। ইপিজেড, কেপিজেডসহ চট্টগ্রামজুড়েই আছে, নানা ধরনের শিল্প-কারখানা। অর্থনীতির অন্যতম উৎপাদন ঘাটি চট্টগ্রাম।

চট্টগ্রাম যেভাবে দেশের জাতীয় অর্থনীতির জন্য অবদান রাখছে, তার তুলনায় চট্টগ্রামের জনগণ নানানভাবে রাষ্ট্রীয় সেবা থেকে বঞ্চিত। অনেক সেবা প্রতিষ্ঠান রাজধানীতে হস্তান্তর করা হয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনগণের জন্য গড়ে তোলা পাহাড়তলী হাজী ক্যাম্পটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। সেখানে মাদকসেবীদের আড্ডার আসর বসে। অবৈধ বসবাসকারীদের দখলে ক্যাম্পটি পড়ে আছে। একশ্রেণির সরকারি কর্মচারী নানাভাবে ফায়দা গ্রহণ করছে। হাজী ক্যাম্প নিয়ে এরআগেও অনেক লেখকই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে লিখেছেন। আজ পর্যন্ত কোনো ধরনের ওই বিষয়ের ওপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। স্থানীয় মান্যগণ্য ধর্মপরায়ণ জনগণ আমার জানা মতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত আবেদন-নিবেদন করেছেন। তবুও কোনো আসার সুসংবাদ বলার মতো নেই বলা চলে। চট্টগ্রাম নামে বাণিজ্যিক রাজধানী হলেও বাস্তবিকভাবে চট্টগ্রামের জনগণ নানদিকে নানাভাবে জাতীয় সেবা গ্রহণ করতে পিছিয়ে আছে।

চট্টগ্রাম সিটি এলাকায় প্রায় ৬০ লাখের অধিক জনগণের বসবাস। অসংখ্য রাস্তাঘাট রয়েছে। সঙ্গে বিপুল সংখ্যক নালা-নর্দমা আছে। মুরাদপুর, বহদ্দারহাট আরও বেশ কিছু এলাকার নালা সংস্কার ও পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। নগরীর অসংখ্য নালা ময়লা ভর্তি দেখতে পাওয়া যায়। শহারের বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় রাস্তার মোড়ে মোড়ে ও নানা ড্রেনের পাশে পড়ে থাকতে চোখে পড়ে। অলংকার, সাগরিকা মোড়, আগ্রাবাদ ছোট পুল, বহদ্দারহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড, নতুন চাঁদগাও থানা। নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে দিনের পর দিন বাসা বাড়ির উচ্ছিষ্ট ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে থাকতে দেখা যায়। দিনের বেলায় ময়লার গাড়ির খোলা ট্রাকের দুর্গন্ধে রাস্তায় জনচলাচল মারাত্মকভাবে হুমকিতে পড়ে । মানুষ নাকে-মুখে রুমাল দিয়ে ও দুর্ঘন্ধ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হয় না। বলা যায়, পুরো শহরেই যত্র তত্র ময়লার স্তূপ দিনের পর দিন জমে থাকে।

বাসাবাড়ি, দোকান, অফিসপাড়ার ময়লা-আবর্জনার সরাসরি নালা ড্রেইনে ফেলছে। রাস্তা পরিষ্কার করে সেই আবর্জনা পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা নালায় ফেলতে মোটেও চিন্তা করে না। চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর ২ নং গেটে উত্তর পার্শ্বে নালার সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ অনেকদিন থেকেই দেখছি। কাজের কর্মসূচি চলমান আছে। ধীরগতিতে কাজের কারণে ওই এলাকার ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের ক্ষতি ও ভোগান্তি হচ্ছে। মুরাদপুর হতে বহদ্দারহাট পর্যন্ত বিশ্ব রোডের দক্ষিণ পার্শ্বে অনেকগুলো কাঠের দোকানের ব্যবসা। এন মোহাম্মদ অফিস থেকে রাস্তার দক্ষিণ পার্শ্বে সারি সারি কাঠের দোকান। তারা দীর্ঘদিন থেকে এখানকার কাঠ ব্যবসায়ী। তাদের বড় বড় কাটা গাছ, সাইজ করা কাঠ দোকান থেকে ফুটপাত দখল করে রাস্তা পর্যন্ত এসে গেছে। ওই দিকের বড় বড় ড্রেনের ওপর কোনো স্লাব রাখা হয়নি। নালা আছে, কিন্তু নালার ওপর জনচলাচলের ব্যবস্থা নেই। সেই ব্যবসায়ীরা তাদের কাঠ দিয়ে নালার ওপর দোকান বসিয়ে কাঠের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। বহদ্দারহাট পুলিশ বিট পর্যন্ত কাঠ ব্যবসায়ীদের দখলে নালা ও ফুটপাত দেখা যায়। প্রতিদিন স্থানীয় এবং চট্টগ্রামের নানা অঞ্চলের যাতায়াতকারী জনগণ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। দেখা যায়, এসব ব্যবসায়ী কাঠের সব উচ্ছিষ্ট প্রতিনিয়ত নালাতেই ফেলছেন। এটি তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ফলে বর্ষার সময় সে এলাকায় বৃষ্টির পানি নালায় ধারন করা সম্ভব হয় না। নালা দিয়ে পানি প্রবাহিত হয় না। অসংখ্য ময়লা-আবর্জনায় ওই অঞ্চলের ড্রেন ভরপুর। স্থানীয় এলাকার কমিশনার নিশ্চয় এই বিষয়টি অবগত আছেন। কিন্তু তবুও তার কোনো প্রতিকার বা সংশোধন জনগণ দেখছে না। এসব কারণে মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট এলাকায় বৃষ্টির সময় জনভোগান্তির কথা জনগণ বলছে। অভিযোগ শোনা যায়, স্থানীয় কমিশনার দেখেও না দেখার মতো করে চলছে। ফলে এ অঞ্চলের জলাবদ্ধতার প্রভাব থেকে জনগণ মুক্তি পাচ্ছে না। সচেতন স্থানীয় নাগরিক সিটি করপোরেশনকে এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে নালাকে অবৈধ দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করার দাবি জানিয়েছে। জনগণের প্রত্যাশা, সিটি মেয়র উপরোক্ত বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে চট্টগ্রামের নালা ও ড্রেনগুলো দখলমুক্ত করবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে বর্ষা মৌসুমে নালার পানি চলাচলে জনভোগান্তি লাঘবে সঠিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। নালার ওপর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। উন্মুক্ত নালাগুলোকে জনচলাচলের উপযোগী করে তৈরি করতে হবে।

নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডেই প্রায় ফুটপাত হকারের দখল। নগরবাসী জীবন-জীবিকার জন্য ফুটপাত ব্যবহার করতে পারছে না। অনেক সময় জনগণ হকারদের তোপের মুখে পড়ে। প্রতিবাদ করলেই ঝগড়া লেগে যায়। কোনো কোনো হকার স্থানীয় কমিশনার এবং রাজনৈতিক নেতাদের নাম ব্যবহার করে তাদের চাঁদা দেয়ার কথা বলে।

বিভিন্ন সময় সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ মেজিস্ট্রেট অভিযানে ফুটপাত থেকে হকারদের সরাতে দেখা যায়। কিন্তু পরক্ষণেই আবার একই চিত্র শুরু হয়। হকাররা ফুটপাত দখল করে তাদের ব্যবসা চালাচ্ছে। তাদের ব্যবসার জন্য মোটেও নগরবাসীর কোনো অভিযোগ নেই। তারা তাদের ব্যবসা পরিচালনা করুক সেখানে জনগণের কোনো আপত্তি নেই। আপত্তি হলো জনচলাচলের ফুটপাত যেন সবসময় উন্মুক্ত থাকে। সে দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে জনস্বার্থে পালন করতে হবে। নালার ওপর সবধরনের ব্যবসায়িক দখলদারিত্ব উচ্ছেদ করতে হবে। নালাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নগরবাসীকে সর্বদা আপনা-আপনিভাবে সচেতন করার প্রয়োজনীয় কর্মসূচি পরিচালনা করতে হবে। নালার ওপর অবৈধ আবর্জনা যারা ফেলছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ চায় সচেতন জনগণ। প্রয়োজনে সিটি করপোরেশন আইনে জরিমানার বিধান বাস্তবায়ন করতে হবে। নগরসেবা প্রতিষ্ঠান সিটি করপোরশেনকে প্রকৃতভাবে নাগরিক সেবায় নগরীর পরিচ্ছন্নতায় অভিযান সঠিক নিয়মে যথাসময়ে পালন করার দাবি রাখছে স্থানীয় জনগণ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত