ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা!

মানসিক স্বাস্থ্যে গুরুত্ব দিতে হবে
শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা!

এই মাসের ১৮ তারিখে হাতিরঝিলে ২৫ বছর বয়সি এক তরুণী আত্মহত্যার চেষ্টা করলে তাকে বাঁচিয়েছে পুলিশ। জানা যায়, হাতিরঝিলে একটি ব্রিজের ওপর থেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে তা দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। পুলিশ গিয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে একটি ইউনিট এসে তরুণীকে ব্রিজ থেকে নিচে নামিয়ে আনেন। আত্মহত্যার চেষ্টা করা ওই তরুণী মানসিকভাবে বিষণ্ণ ছিল। তরুণী ও তার পরিবারের ভাগ্য যে, তাকে আত্মঘাতী হওয়া থেকে বাঁচানো গেছে। কিন্তু রাজধানীতে এমন ঘটনা আরও ঘটছে, যারা চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা। এক হিসাবে, ২০২২ সালে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৫৩২ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে স্কুল পর্যায়ে ৩৪০, কলেজে ৪৪৬ জন এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৪ জন মাদ্রাসার ছাত্রী। অর্থাৎ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। আমরা তো জানি, মানুষ তো বেঁচে থাকার জন্য ভাসমান খড়কুটোও আঁকড়ে ধরে, তাহলে কেন আত্মহত্যার মতো এক কাণ্ড অবলীলায় মানুষই ঘটিয়ে ফেলছে! যে তরুণ মৃত্যুকে উপেক্ষা আগামীর পানে এগিয়ে চলে, সেও কেন আত্মঘাতীপ্রবণ হয়ে উঠছে? বিষয়টি ভাবার সময় আছে।

আত্মহত্যার বিষয়টি করোনা শুরুর পর বড় আকারে আমাদের চোখে পড়ে। তখন অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে শিক্ষার্থীরা শঙ্কিত হয়ে ওঠে। লকডাউনে অধিকাংশ সময় বাড়িতে বসে এক রকম সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমলেও আত্মহত্যার মিছিল থেমে থাকেনি, এই থেকে বলা যায় সংকট অব্যাহত রয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, ছেলেদের তুলনায় আত্মহত্যায় এগিয়ে মেয়েরা। স্কুল এবং কলেজপড়ুয়া আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারী রয়েছেন ৬০.৯০ শতাংশ এবং পুরুষ রয়েছেন ৩৬.১ শতাংশ। শুধু স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যাকারী নারী শিক্ষার্থীর পরিমাণ ৬৫.৩ শতাংশ এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ৩৪.৭ শতাংশ। স্কুল এবং কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে গত বছর প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৩৭ জন স্কুল এবং কলেজগামী শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। আর এসব আত্মহত্যার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা গেছে, মান-অভিমান তাদের সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ করে তোলে। অন্য কারণের মধ্যে রয়েছে- প্রেমঘটিত, পারিবারিক কলহ, হতাশাগ্রস্ততা, মানসিক সমস্যা, আর্থিক সমস্যা, উত্ত্যক্ত, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার। এ ছাড়া আপত্তিকর ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেয়া, শিক্ষক কর্তৃক অপমানিত হয়ে, গেম খেলতে বাধা দেয়া, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে, মোবাইল ফোন কিনে না দেয়ায়, মোটরসাইকেল কিনে না দেয়ায় শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

শিক্ষার্থীদের আশঙ্কাজনক হারে আত্মহত্যা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এক্ষেত্রে শিক্ষক, বাবা-মা এবং শিক্ষার্থীদের আলাদাভাবে কাউন্সেলিং করা যেতে পারে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশেষ সভার মাধ্যমে তাদের সমস্যা, সুবিধা-অসুবিধার বিষয়ে কথা বলতে পারেন। শিক্ষার্থীরা কেন ডিপ্রেশন বা মানসিক চাপে ভুগছে তার কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি উত্তরণে উপায় খুঁজতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য সুস্থ ও চাপমুক্ত পরিবেশ ও পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত