ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আপনাদের ভাবনা

গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ

মো. খসরু চৌধুরী
গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ

শুরু হয়েছে অগ্নিঝরা মার্চ। মার্চ মাস বাঙালির স্বপ্নসাধ যৌক্তিক পরিণতির মাস। বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ঘটনা হচ্ছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এ ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক-রাজনৈতিক স্বপ্নসাধ পূরণ হয়।

১৯৭১ সালে বিশ্বের মানচিত্রে একটি নতুন রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল, যার নাম বাংলাদেশ। একাত্তরের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ওপর অতর্কিত হামলা চালালে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। যে ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে প্রচারিত হয়। শুরু হয় দেশমুক্তির সশস্ত্র সংগ্রাম। ৯ মাস পর ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে পাকিস্তানি দখলদারের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের মহান বিজয়। পাকিস্তানি হানাদারের আত্মসমর্পণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আপন স্বকীয়তায় মূর্তমান হয়।

১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়ী হলে পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তরের বদলে একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতের আঁধারে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ও মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু। একটি সুখী-সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা। গত ৫২ বছরে দেশ অনেক এগিয়ে গেলেও কাঙ্ক্ষিত সেই লক্ষ্য পূরণে জাতিকে আরও অনেক দূর যেতে হবে। রক্ত দিয়ে কেনা বিজয়কে অর্থবহ করে তুলতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও দেশকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে। দেশ গড়ার যুদ্ধেও আমাদের জয়ী হতে হবে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে বাংলাদেশ যে হারে এগিয়েছে, সেটা সত্যিই অনেকের জন্যই ঈর্ষণীয়। অর্থনীতির অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দারুণ সাফল্য অর্জন করেছি। পৃথিবীর অনেক দেশই আমাদের অনুসরণ করছে। করোনা মহামারিতেও বাংলাদেশ তার সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। মহামারিতে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ, যেখানে ধরাশায়ী সেখানে এই মহামারিতেও আমরা উচ্চতর প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছি। সবচেয়ে বড় কথা দেশে কোনো খাদ্য সংকট নেই। এ ছাড়া নেই বড় কোনো অর্থনৈতিক সংকটও। এখন আমরা বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ব করে বলতে পারি, সেই তলাবিহীন ঝুড়ি আজ বিশ্বের বিস্ময়, উন্নয়নের এক রোল মডেল।

বাঙালি জাতি যত দিন বেঁচে থাকবে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গৌরব করবে, অহংকার করবে। প্রতি বছর মার্চে তারা নতুন করে শপথ নেবে এগিয়ে যাওয়ার, বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর। কারণ শতসহস্র বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের মার্চে বাঙালি জাতি প্রথমবার প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ অনুভব করেছিল। বিশ্বের মানচিত্রে একটি গর্বিত জাতি হিসেবে নিজেদের স্থান করে নিয়েছিল বাংলাদেশ।

এ বিজয় এমনি এমনি আসেনি। তার জন্য আমাদের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। অনেক রক্ত দিতে হয়েছে। অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। সর্বশেষ যে পাকিস্তানি শাসকরা আমাদের পদানত করে রেখেছিল, তাদের সেই শৃঙ্খল ভাঙার কাজটি সহজ ছিল না। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ঊনসত্তরের গণআন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের শুরুতে অসহযোগ আন্দোলনসহ অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের সেই মুক্তির ক্ষেত্র তৈরি করে নিতে হয়েছিল। আর সে ক্ষেত্রে আমরা ঋণী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে।

পরিচালক

বিজিএমইএ

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত