ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভাষা ও আমরা

মো. আবদুর রহিম
ভাষা ও আমরা

‘ভাষা’ প্রত্যেক ব্যক্তির মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম। ভাষার মাধ্যমেই প্রকাশ করি আমরা আমাদের মনের ভাব, আবেগ, ভালোবাসা, ইচ্ছা। আমাদের ভাষা ‘বাংলা’। আমরা আমাদের এই মায়ের ভাষা বাংলায় কথা বলি। এ বাংলা ভাষার মাধ্যমেই প্রকাশ করি আমাদের মনের ভাব, আবেগ, ভালোবাসা। তবে আমাদের এ ভাষাকে নিজের করে পেতে, আমাদের এ ভাষার স্বীকৃতি পেতে পাড়ি দিতে হয়েছে এক দুর্গম পথ। করতে হয়েছে দীর্ঘ প্রতিবাদ ও আন্দোলন। দিতে হয়েছে বাংলার মায়েদের সন্তানদের তাজা রক্ত। আমাদের ভাই রফিক, বরকত, সালাম, জব্বার প্রমুখের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা পাই আমাদের মায়ের ভাষা বাংলাকে।

কিন্তু যাদের তীব্র প্রতিবাদ, দীর্ঘ আন্দোলন ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে পেয়েছি; আমরা কী তাদের সম্পর্কে জানি? আমরা কী জানি সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারদের সম্পর্কে? আমরা কী জানি ২১ ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে? অতি দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় ‘না’। এদেশের অনেক বালক-তরুণ-যুবপ্রজন্ম জানেই না ২১ ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে, জানে না আমাদের ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে, জানে না আমাদের জীবন বিলিয়ে দেয়া ভাইদের সম্পর্কে। তাদের কখনও জিজ্ঞেস করলে তারা কখনও বলে যে ২১ ফেব্রুয়ারি বিজয় দিবস, কেউ বলবে স্বাধীনতা দিবস, আবার কেউ নির্দ্বিধায় বলেই দেয় ‘আমি জানি না’। এদেশে এখন আর মায়েরা তেমন তাদের সন্তানদের সালাম, জব্বার, রফিকদের গল্প শুনান না, এদেশে এখন আর সন্তানদের মাঝে নিজ ইতিহাস চর্চার আগ্রহ দেখা যায় না।

এবার আসি যেই ভাষার জন্য এদেশের মায়েদের বুক খালি হয়েছে। তাদের হৃদয়ের মণিরা জীবন দিয়েছেন। ভাষার জন্য পুলিশের গুলি সামনে নিজের বুক পেতে দিয়েছিল। সেই অমূল্য আমাদের মায়ের ভাষা বাংলার কী আমরা যথার্থ সম্মান রক্ষা করতে পারছি? আমরা কী আমাদের ভাষার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারছি? এর জবাবও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘না’ শব্দটাই আসে।

আমাদের কাছে এখন আমাদের মায়ের ভাষা বাংলা হয়ে পড়েছে একটি মূল্যহীন ভাষা। আমাদের যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মায়ের ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে, এখন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী ১ মিনিট নিজের মায়ের ভাষায় ঠিকমতো কথাই বলতে পারে না। আমরা এখন বাংলাকে মনে করি ক্ষ্যাত, মূর্খদের ভাষা হিসেবে। আমাদের এখন বাংলিশ বা ইংরেজি অথবা হিন্দি না হলে চলেই না। আর যারা এগুলো পারে না, তাদেরই আমরা আখ্যায়িত করি ক্ষ্যাত, মূর্খ হিসেবে। আমাদের কাছে এখন আমি কতটুকু বাংলা পারি তা গুরুত্বপূর্ণ না বরং গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমি কতটুকু বাংলিশ, ইংরেজি বা হিন্দি পারি। যেই দেশের সন্তানদের মুখ দিয়ে পাকিস্তান সরকার উর্দু বলাতে পারেনি, এখন সেই দেশের সন্তানরাই নিজের ভাষা ত্যাগ করে অনর্গল বাংলিশ, হিন্দি, ইংলিশ বলে যাচ্ছে।

আমাদের সন্তানদের মধ্যে ইতিহাস চর্চার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। তাদের আমাদের অধিকার আদায়ের সবগুলো আন্দোলন, ঘটনা সম্পর্কে জানাতে হবে। জানাতে হবে এদেশের বীর সন্তানের সম্পর্কে। না হলে এদেশের তরুণ ও যুব সমাজ ধীরে ধীরে দেশপ্রেম শূন্য হয়ে পড়বে। আত্মপরিচয় ভুলে যাবে। আবু জাফর ওবায়দুল্লাহের মতে বলতে গেলে যূথভ্রষ্ট বিশৃঙ্খলা তাকে বিপর্যস্ত করবে, বিভ্রান্ত অবক্ষয় তাকে দৃষ্টিহীন করবে, সে আজন্ম হীনমন্য থেকে যাবে। এছাড়া বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা সৃষ্টি করতে হবে। এর গুরুত্ব অনুধাবন করাতে হবে।

শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত