বই হোক তারুণ্যের ফ্যাশন

মো. মুরাদ হোসেন

প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক নতুন বই প্রকাশিত হয় এ মেলায়। তরুণ থেকে নবীন সববয়সি বইপ্রেমীর মনে প্রাণের দোলা দিয়ে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয় বইমেলায়। মানুষের সব থেকে প্রিয় বিশ্বস্ত বন্ধু হলো বই, যা আমাদের মননশীল চিন্তাচেতনা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার প্রধান বাহন। একটি ঘুমন্ত বিবেককে জাগ্রত করতে পারে বই নামক বস্তুটি। কয়েকদশক আগেও উন্নত চিন্তাশীল তরুণ-তরুণীদের কাছে বই শুধু পড়ার বস্তুই ছিল না বরং একটি সুপ্ত সুন্দর ফ্যাশনও ছিল বটে।

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুপ্ত ফ্যাশন চর্চা জ্যামিতিক হারে হ্রাস পাচ্ছে। নতুন বই ক্রয় করা, সময় করে বই পড়া, বই পর্যালোচনা করা এসব চিত্র দেখা যায় না তেমন। তরুণ প্রজন্ম সোশ্যাল মিডিয়া ও গেইম আসক্তির নেশায় বুথ হয়ে থাকে। নিজের জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রের ভাবনা থেকে বিরত থাকাকে শ্রেয় মনে করে। সমাজ, রাষ্ট্র ও দেশের জনগণকে নিয়ে কিছু করার নৈতিক দায়িত্বের মানসিকতা তাদের মাঝে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এসব কাজ শুধু রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে এড়িয়ে চলার মনোভাব আগামী দায়িত্বশীল নাগরিকত্বের ভূমিকাকে সংকটময় করবে।

একটি সাধারণ প্রশ্ন হতেই পারে- মানুষ বই পড়বে কেন? উত্তরে বলা যায়, মানুষের জন্ম থেকেই শিখে বড় হতে হয়। আর সঠিক শিক্ষার প্রধান মাধ্যমে যেহেতু বই। তাই শিখতে হয় বলেই মানুষকে বই নামক বস্তুটি পড়তে হয় বা হবে। প্রমথ চৌধুরী বলেছিলেন, ‘সুশিক্ষিত লোকমাত্রই স্বশিক্ষিত লোক। আর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হলে মানুষকে বই পড়তে হয়।’

একাডেমিক কিছু কারণেও তরুণ শিক্ষার্থীরা বই বিমুখ। স্কুল-কলেজগুলোতে মূল বইয়ের পাঠচর্চা না করে গাইডনির্ভরতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শীর্টনির্ভরতা বই বিমুখতার অন্যতম কারণ। বর্তমানে বেশিরভাগ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোর্স রিলেটেড বই না পড়িয়ে সালভিত্তিক প্রশ্নচর্চার মধ্যে সীমাবদ্ধতা এই প্রজন্মকে প্রকৃত জ্ঞান ও বই পড়ার অভ্যাস থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। শিক্ষকদের ক্লাসে পাঠ প্রস্তুতি না থাকায় গঁদবাধা লেকচার পড়াশোনার বিরূপ প্রভাব ফেলে। এখন স্কুল-কলেজগুলোতে ব্যাগভর্তি বই-খাতা নিয়ে ছুটে যাওয়া এবং ‘কোচিং’ করতে এক শিক্ষকের কাছ থেকে অন্য শিক্ষকের কাছে ছোটা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিত্যনৈমিত্তিক চিত্র। ফলে শিক্ষার্থীদের নতুন করে বই পড়ে জানার আগ্রহ ও সৃষ্টিশীল মনোভাবকে হ্রাস করে।

বর্তমান তরুণরা বই জ্ঞানার্জনের জন্য নয়; পড়ে চাকরি অর্জনের জন্য। বইয়ের দোকান থেকে শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিল পর্যন্ত চাকরির বই এবং গাইডের প্রাধান্যই শোভা পাচ্ছে।

স্কুল-কলেজে একাডেমিক বই নিয়ে পাঠচক্রের আয়োজন নেই তেমন। পাঠচক্র একটি বইয়ের বিষয় বস্তু ভিন্ন আঙিকে তুলে ধরে নতুন ভাবনার পথ উন্মেচিত করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠচক্রের চর্চা থাকলে একটি বই আধ্যোপান্ত পড়ে কীভাবে পর্যালোচনা করতে হয় তা জানা যায়। প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে আমাদের বইগুলোকে কাগজে মুদ্রিত করার সঙ্গে অনলাইনে ই-বুকে আকারে প্রকাশের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইন লাইব্রেরির সুব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ও দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেকোনো বই মোবাইল বা ল্যাপটপ ডিভাইসে পড়তে পারে।

শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে তরুণ প্রজন্মকে বইমুখী করা প্রয়োজন। বই থেকে দূরে থাকা শ্রেণি ক্রমান্বয়ে অজ্ঞতার পথে ধাবিত হয়। বই হলো অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকা আলোর ন্যায় যা মানুষের মনের অন্ধকার দূর করে আলোর পথ দেখায়। বই পাঠের অভ্যাস বদলাতে থাকে মানুষের দৃষ্টির প্রাচীর ও বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা। প্রবাদে আছে, ‘অশিক্ষিত লোক কাঁদাকে দেখে শুধু ভেজা মাটি হিসেবে। আর শিক্ষিত চোখ সেই কাঁদার মাঝে খুঁজে পায় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণু-পরমাণু।’

শিক্ষার্থী

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]