আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়

আবদিম মুনিব

প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আত্মহত্যা বর্তমান সময়ের একটি পরিচিত নাম। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা উল্টালেই চোখে পড়ে দেশের কোথায়ও না কোথায় কেউ আত্মহত্যা করেছে, যা সত্যিই একটি দুঃখজনক ঘটনা। এই আত্মহত্যার কারণে আমাদের সমাজ, রাষ্ট্রের ওপরও এক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কেননা, মানুষ বড়ই কৌতূহলপ্রবণ, অনুসরণ করতে পছন্দ করে।

তবে কথা হলো- কখন একটা মানুষ এই সুন্দর পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং কতটুকু আঘাত পেলে সে আত্মহত্যার মতো এমন জঘণ্য কাজে নিজেকে সঁপে দেয়। এটাই ভাবার বিষয়। আত্মহত্যার তালিকায় রয়েছে সব বয়সির মানুষ। কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণীসহ রয়েছে বৃদ্ধরাও এবং স্কুল-কলেজ এমন কি বিদ্যার সর্বোচ্চ স্তর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘প্রিভেন্টিং সুইসাইড, অ্যা সোর্স ফর মিডিয়া প্রফেশনালস ২০১৭’ জরিপে বলছে, প্রতিবছর বিশ্বে ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে।

প্রতি সেকেন্ডে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে একটি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর তথ্য মতে, ২০১৬ সালে দেশে আত্মহত্যা করেন ১০ হাজার ৭৪৯ জন। উপরিউক্ত পরিসংখ্যান থেকে বুঝতে পারা যায় আত্মহত্যার ভয়াবহতা। আত্মহত্যা সম্পকে সম্রাট নেপোলিয়ন বলেছিলেন, ‘আত্মহত্যা জীবনের সবচেয়ে বড় কাপুরুষতার পরিচয়।’ মানুষের জীবন সুখ-দুঃখ, আনন্দ ও বেদনার সমষ্টি। সবসময়ই যে সুখ আসবে, এমনটা নয়। সব সময়ই যে মানুষ জয়লাভ করবে এমনও নয়। কিন্তু এই বিষয়কে নিয়ে যদি অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে নিজেকে শেষ করে দেয়া হয়, তবে তা হবে নিজেই নিজের ওপর হেরে যাওয়া। তাই আমাদের আত্মবিশ্বাস আরও দৃঢ় করতে হবে। আত্মহত্যার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে মানুসিক চাপ একটি বড় কারণ। কারও চাকরি নেই, সদ্য ডিভোর্স হয়েছে কারও, পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট হয়েছে, প্রেমগঠিত কারণ, অভিভাবকদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি, বন্ধুদের দ্বারা হেয়প্রতিপন্ন হওয়া। সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়া, হতাশার শিকার হওয়া, এমন অনেক কারণ রয়েছে। বর্তমান যুগ হলো তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির কল্যাণে যেমন উন্নতি অগ্রগতির পথে ধাবমান হচ্ছি, ঠিক তদ্রƒপ-এর অপব্যবহারের ফলে অনেকে নিজেদের অজান্তেই জড়িয়ে পড়ে অপরাধে এবং একপর্যায়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এখন অনলাইন জুয়া একটি বড় ধরনের জায়গা। যে কেউ সহজেই এখানে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু একবার এখানে প্রবেশ করলে সহজে আর এপথ থেকে চাইলেই বের হতে পারে না। একপর্যায়ে এ নেশায় অর্থ সম্পদ সব কিছু শেষ হয়ে যায় এবং যার ফলে লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যা করে।

আমরা সারাদিন নানা কাজে ব্যস্ত থাকার পরে যখন একটু মন ফ্রেশ করার জন্য অনলাইন, মিডিয়ায় প্রবেশ করি, তখন বিভিন্ন নেতিবাচক খবর দেখে প্রতিনিয়ত এর ওপর প্রভাবিত হয়ে যাই। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, অভিভাবকদের তার সন্তানদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে এবং সবকিছু চাওয়া মাত্রই দেয়া যাবে না সন্তানকে এবং অতি আদর আবার অতি শাসনও যেন না দেয়া হয়। বর্তমান সময়ে আত্মহত্যার একটি বড় কারণ হলো প্রেমগঠিত। দীর্ঘদিন ছেলে মেয়েদের সঙ্গে চলে প্রেম। মোবাইলের মেসেঞ্জারে চ্যাট, কল এবং সরাসরি দেখা হয়।

এভাবেই একে অপরের অধিক প্রিয়জন হয়ে যায়। কিন্তু একটা সময় তাদের নিজেদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। তাদের নিজেদের কারণে কিংবা অভিভাবকদের দ্বারা-এর ফলে এই উঠতি বয়সি যুবক যুবতীরা নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন এবং সিদ্ধান্ত নেয় আত্মহত্যার এবং অনেক সময় ছেলে কিংবা মেয়ে ধোঁকা দেয় এর কারণেও আত্মহত্যা সংঘটিত হয়। এজন্য শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি তাদের নৈতিক শিক্ষাও দিতে হবে। আত্মবিশ্বাসী হওয়ার জন্য অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের উৎসাহ প্রদান করা। অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ না করা। সন্তানদের প্রতি নজরদারি রাখা। সন্তান কার সঙ্গে উঠাবসা, চলাফেরা করে তার উপরও খেয়াল রাখা। মাঝেমধ্যে ভ্রমণ করা এতে মন ভালো থাকে। মহামনীষীদের বই পড়ার অভ্যাস করানো। সবার প্রথমে নিজের জীবনকে ভালোবাসতে হবে। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের কল্যাণে নিজেকে ব্যস্ত রাখা উচিত এবং এভাবেই দূর হবে সমাজ হতে আত্মহত্যার মতো এই জঘণ্য কাজ।

শিক্ষার্থী

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া