মাতৃদুগ্ধের বিকল্প নেই

মাহমুদুল হক হাসান

প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মাতৃদুগ্ধ প্রতিটি শিশুর জন্মগত অধিকার। শিশুর সুস্থ দেহ, পরিপূর্ণ বিকাশ, মানসিক ও প্রতিভার বিকাশে মায়ের দুধের বিকল্প নেই। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো সম্পূর্ণ নির্ভর করে তার মায়ের মন-মানসিকতার ওপর। মাতৃদুগ্ধ পানের মধ্য দিয়ে মা ও শিশুর মধ্যে একটি আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, শিশুদের প্রথম ৬ মাস মাতৃদুগ্ধ পান করালে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জাতীয় পুষ্টিসেবা, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ) প্রতিবছর বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন করে থাকে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, পরিমিত মাতৃদুগ্ধের অভাবে শিশুর নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৫ শতাংশ, ডায়রিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১১ শতাংশ, অপুষ্টি ও অন্যান্য কারণে শিশুদের মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। শিশুরা যেন কোনোভাবেই তাদের মৌলিক অধিকার মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত না হয়, সে ব্যাপারে মায়েদের গুরুত্ব দিতে হবে। জন্মের প্রথম ৬ মাস শুধু মাতৃদুগ্ধ এবং ৭ থেকে ১৪ মাস পর্যন্ত বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুকে অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো যেতে পারে। মাতৃদুগ্ধ পানকারী শিশুদের মননে ও আচরণে মায়ের আচরণের প্রতিফলন সৃষ্টি করে ও আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলে। সম্প্রতি আমাদের দেশের কিছু মা নিজেদের ফিটনেস ধরে রাখতে সন্তানদের তাদের মৌলিক চাহিদা মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত করে কৌটাজাত দুধ খাইয়ে থাকেন, যা শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য তেমন উপকারী নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারের কৌটাজাত দুধে বিভিন্ন ভেজাল মিশ্রিত থাকার ফলে শিশুদের নানা রোগ এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আবার অনেক মায়েরা তাদের চাকরি ও ব্যবসায়িক কাজের মতো অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে শিশুদের মাতৃদুগ্ধ দানে অনীহা প্রকাশ করেন। অথচ বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস- আদালত, রেলস্টেশন, চিড়িয়াখানা, শপিংমলে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করেছে। এমনকি শিশুকে স্তন?্যদানের সুবিধার্থে বাংলাদেশ সরকার ৬ মাস বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটির বিধান রেখেছে। ইউনিসেফের (unicef) এক সমীক্ষা মতে, বিশ্বের সব নবজাত শিশু ৬ মাস শুধু মাতৃদুগ্ধ পান করলে প্রতিবছর প্রায় ১৫ লাখ শিশুর মৃত্যু রোধ করা হয়তো সম্ভব হতো। এমতাবস্থায়, প্রতিটি শিশুই যেন পরিমিত মাতৃদুগ্ধ পান করতে পারে, সে ব্যাপারে শিশুকে স্তন্যদানের উপকারিতা, মানসিক সাপোর্ট ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে এ প্রজন্মের মায়েদের মধ্যে গণসচেতনতা তৈরির পাশাপাশি মায়েদের স্তন্যদানের বিকল্প নেই।

লেখক ও কলামিস্ট