পাতে আমিষের টান

জনস্বাস্থ্যে শঙ্কা

প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

গরুর মাংস অনেকের জন্য দুর্লভ বস্তুতে পরিণত হয়েছে, এখন মাছেও হাত দেয়া যায় না। যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে গরিবের আমিষের উৎস পাঙাশ মাছ ও ফার্মের মুরগিও সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। এভাবে দামের চোটে পাতে আমিষের টান বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রকাশ, বড় বাজারগুলোতে মাসখানেক আগেও হাড়সহ গরুর মাংস কেনা যেত ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। সেই দাম গেছে গত সপ্তাহ তিনেক আগে। এখন কেজিতে খরচ পড়ছে ৭০০ টাকা। তবে পাড়া-মহল্লায় এই দাম আরও বেশি। এ ছাড়া খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। বলাবাহুল্য, গরুর মাংসের এই আকাশচুম্বী দামের কারণে মধ্যবিত্তদের অনেকেই ভিড় করছেন ব্রয়লার মুরগি ও মাছের বাজারে। তবে আগে থেকেই তেঁতে আছে ব্রয়লার আর মাছের বাজার। মাসখানেক আগে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। ধাপে ধাপে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৩৫ থেকে ২৪০ টাকা। ব্রয়লারের এই দাম সোনালি জাতের মুরগিকেও উসকে দিয়েছে। এ জাতের মুরগির দাম আরও বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা। এ ছাড়া দেশি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে। গরু মাংস ও আর মুরগির দামে হতাশ হয়ে ক্রেতারা মাছের বাজারে গিয়ে দামের আগুনে পুড়তে হচ্ছে।

সোজাসাপ্টা কথা, প্রাণীজ আমিষ এখন পাতে তোলা সামর্থ্য অনেক পরিবারই হারিয়েছে। মাছের মধ্যে দামের তালিকায় তুলনামূলক নিচের দিকে থাকা চাষের কই, তেলাপিয়া ও পাঙাশ দাম শুনেই ক্রেতার কপালে ভাঁজ পড়ছে। ব্রয়লার মুরগির অবস্থাও তথৈবচ। মাছ-মাংস থেকে দূরে সরে যারা সবজির বাজারে যাচ্ছেন, তারাও হতাশ। শীতের ভরা মৌসুমে এবার সবজির দাম ছিল অনেক চড়া। সেই রেশ এখনও রয়ে গেছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে এক বছরে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশ, খাসির মাংসের ২১ এবং ব্রয়লারের ৪১ শতাংশ। একইভাবে দাম বেড়েছে গ্যাস-বিদ্যুৎ থেকে সেবা খাতের প্রতিটি পণ্য, চাল-ডাল-তেল থেকে প্রতিটি নিত্যপণ্য। কমেছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আর জীবনের মান। অথচ কারও আয় বাড়ছে না। এতে ব্যবসায়ীরাও যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, তা নয়। বেশি সমস্যায় পড়ছে খুচরা বিক্রেতারা। কারণ তাদের প্রতিনিয়ত ক্রেতার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পাশাপাশি আগের মতো ক্রেতাও আসছে না। কেউ কেউ ব্যবসা বদল কিংবা দোকানও ছেড়ে দিচ্ছে এমন তথ্যও রয়েছে। অর্থাৎ ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই হিমশিম খাচ্ছে, মাঝে লাভের গুড় কে ভোগ করছে, তা জানার আগ্রহ সবার।

মাছ-মাংসের দামে মানুষ উদ্বিগ্ন। সন্তানের পাতে প্রয়োজনীয় প্রাণিজ আমিষ তুলে দিতে না পারার বেদনা প্রায় প্রতিটি পরিবারেরই নিত্যকার হতাশা। উল্লেখ্য, ডাল থেকেও আমিষ পাওয়া যায়। তবে প্রাণিজ আমিষই হচ্ছে প্রথম শ্রেণির আমিষ, যা পাওয়া যায় মাছ-মাংসে। মানুষের শরীরে আমিষের ঘাটতি হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। শিশুদের দীর্ঘ মেয়াদে নানা রোগ দেখা দিতে পারে। পুষ্টিহীনতায় বর্ধন কমে যেতে পারে। সংগত কারণেই প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি পূরণ করতে হলে এসব পণ্যের দাম নাগালের মধ্যে রাখা জরুরি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। আর সেই উদ্যোগ নিতে হবে রাষ্ট্রকেই।