গণভবন আঙিনায় শেখ হাসিনার ফসলি উঠোন

ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া, ট্রেজারার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কৃষি চাষাবাদে অন্যান্য নজির গড়েছেন। বৈশ্বিক খাদ্যসংকট মোকাবিলায় দেশের জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার আহ্বান জানিয়েই ক্ষান্ত হননি। তিনি নিজেও তার সরকারি বাসভবন গণভবনের অব্যবহৃত প্রতি ইঞ্চি জমিকে কাজে লাগিয়েছেন। গ্রামের গেরস্তবাড়ির মতো পুরো গণভবন আঙিনাকে প্রায় একটি খামার বাড়িতে পরিণত করে সৃষ্টি করেছেন বিরল উদাহরণ। গণভবনের বিশাল আঙিনায় হাঁস-মুরগি, কবুতর, গরু পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ধান, শাকসবজি, ফুল-ফল, মধু ও মাছ চাষ করছেন এদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে বেড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তিল-সরিষা পেঁয়াজও চাষ করেছেন তিনি। সূত্র জানায়, গত রোববার মোট চাষের প্রায় অর্ধেক জমির পেঁয়াজ কাটা হয়েছে। এতে ফলন পাওয়া গেছে ৪৬ মণ। বাকি জমিতে আরও ৫০ মণের বেশি পেঁয়াজ পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গ্রাম-বাংলার প্রকৃত সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন তার অমর কবিতাখানি: ‘আমি বাংলার মুখ দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর’। অপরূপ সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি আর লীলাভূমিতে ঘেরা বাংলাদেশ।

এখানে প্রতিনিয়ত প্রকৃতিতে চলে রঙ বদলের খেলা। ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশে প্রতিটি ঋতুরই আছে স্বতন্ত্ররূপ। সহজেই দৃষ্টিগোচর হয় এর বৈচিত্রতা। রাস্তার দু’পাশে যেন অবারিত ফসলের মাঠ। সহজেই দেখা মেলে কোনো কোনো ঋতুতে মাঠ থাকে সবুজ ফসলে ভরপুর। যখন কোনো কোনো ফসল ওঠানোর সময় হয় দেখা যায় হলুদ বিস্তৃর্ণ ভূমি। নদীমাতৃক দেশ বিধায় সব জায়গার মাটিই বেশ উর্বর। নদীগুলোতেও পাওয়া যায় পুঁটি, কই, বোয়াল, শোল, খলসে, ভেটকিসহ নানান ধরনের মাছ। কদম ফুলের স্নিগ্ধ ঘ্রাণে মুগ্ধতার পরশ বুলিয়ে দেয়। দখিনা বাতাসে কদমগাছের সবুজ কচি পাতার আড়ালে ফুটে থাকা কদমফুলের ন্যায় হাজারো সুগন্ধি ফুল যা প্রাণটা জুড়িয়ে দেয়।

সে দৃশ্য অবলোকন করে বহু কবি-সাহিত্যিকের মনে আনন্দের ঢেউ ভেসে যায়। বাতাসে যখন ফসল দোল খায়, সে দৃশ্য দেখে সবার মন আনন্দে মেতে উঠে। আমাদের দেশের কৃষক তার মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা ফসল ফলায়। আর সেই ফসলেই আমাদের জীবন বাঁচে। প্রকৃতপক্ষে কৃষকরাই বড় সাধক। সবচেয়ে খাঁটি বড় নেতা। বাংলার আসল সৌন্দর্য বলতে বাংলার গ্রামীণ সৌন্দর্যকেই বোঝায়। চিরসবুজ অপার সৌন্দর্যের বিলুপ্তি কখনই জাতির কাছে কাম্য নয়। এদেশের বিদেশি পর্যটকরা এসে চোখ খুলে মন ভরে উপভোগ করে এর সৌন্দর্য, মেটায় অন্তরের তৃষ্ণা। এর অনুপম নৈসর্গিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা উপভোগের জন্য বাংলাদেশ যুগে যুগে হাতছানি দিয়েছে কাছের ও দূরের ভ্রমণপিপাসুদের। অনেকেই তাদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতায় প্রশক্তি গেয়েছেন বাংলাদেশের মনভোলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের। এদেশের প্রকৃতি যেন বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যের খনি। এর রৌদ্রময় উজ্জ্বল দিন আর স্নিগ্ধ জোৎস্নাময় রাত, দিগন্তজোড়া ছায়াঘন বন, কত না নদীর রুপালি ঢেউয়ের হাসি ইত্যাদির তুলনা নেই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মূলত প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার বিষয়ের ধারণাটি পেয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের সবুজ বিপ্লবের ডাক থেকে। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও তিনি গণভবন আঙিনায় বাঁশফুল, পোলাওর চাল, লাল চালসহ বিভিন্ন জাতের ধান, ফুলকপি, পালংশাক, ধনেপাতা, পাতাকপি, লালশাক, গ্রামবাংলার জনপ্রিয় বতুয়াশাক, টমেটো, লাউ, শিমসহ প্রায় সবধরনের শীতকালীন শাকসবজি চাষ করেছেন। করোনানামক মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপণ্যের দাম প্রায় আকাশচুম্বী।

এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন। দেশজ উৎপাদন আজ বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে অনেক পণ্য এরই মধ্যে বাইরের দেশগুলোতে রপ্তানি হচ্ছে। গণভবনের অব্যবহৃত প্রতি ইঞ্চি জমিকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন এবং এর দ্বারা দেশের লোকজনকে কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য উৎসাহ জোগিয়েছেন। গ্রামের গেরস্তবাড়ির ন্যায় গণভবন আঙিনাকে প্রায় একটি খামার বাড়িতে পরিণত করে অনেক খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি গণভবনে আঙিনায় হাঁস-মুরগি, কবুতর, গরু পালনের পাশাপাশি ফুলফল, মধু ও মাছ চাষ করেছেন। একটি বিষয় উল্লেখ করার মতো এই যে, এ বছর তার চাষকৃত পেঁয়াজ উৎপাদন হবে ১০০ মণের উপরে। তিনি এগুলো জনগণের কল্যাণে বিলিয়ে দেবেন।

এছাড়াও গণভবনে তিল, মধু, হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ, তেজপাতাসহ বিভিন্ন ধরনের মশলা; আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, বরই, ড্রাগন, স্ট্রবেরিসহ বিভিন্ন ধরনের ফল; গোলাপ, সূর্যমুখী, গাঁদা, কৃষ্ণচূড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলেরও চাষ করছেন প্রধানমন্ত্রী। গরুর খামার, দেশি হাঁস-মুরগি, বিভিন্ন প্রজাতির হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন। এগুলো থেকে প্রাপ্ত জৈবসার জমিতে ব্যবহার করছেন। যা সাধারণত গ্রামের গেরস্ত পরিবারে দেখা যায়। মনে হয় যেন প্রধানমন্ত্রীর গণভবনটি যেন গ্রাম বাংলারই প্রতিনিধিত্ব করছে। বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় দেশের জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার যে আহ্বান দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছেন তা বাস্তবায়নে তিনি নিজেই অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশনে টালমাটাল বিশ্বে খাদ্য ও নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দেয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রায় প্রতিটি বক্তব্যে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করছেন। তিনি সরকারি-বেসরকারি ও দলের সব অনুষ্ঠানে প্রতি ইঞ্চি জমিকে আবাদের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নিজে গণভবন আঙিনার পতিত প্রতি ইঞ্চি জমিকে উৎপাদনের আওতায় এনেছেন এবং জনগণের প্রতি এ আহ্বানকে বাস্তবে রূপদান করে অন্যান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এদেশের আলো-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত। দেশের মাটি-মানুষ, কৃষির সঙ্গে মিশে আছে তার প্রাণ। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ফসলি উঠোনে নানা ধরনের ফসলের আবাদ তারই ছোট একটি দৃষ্টান্ত।