বন্যপ্রাণীর বেচাকেনা

বন্ধ করতে হবে

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

এক গবেষণায় দেখা গেছে বন থেকে ধরে আনা জ্যান্ত প্রাণী দেশের ভেতরে কেনাবেচা ও বিদেশে পাচার হচ্ছে। আবার মৃত প্রাণীর মাংস, হাড়, দাঁত, নখ, চামড়া থেকে শুরু করে রক্ত পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যে প্রাণীর যত দুর্লভ ও বিপন্ন সেই প্রাণী তত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এমন কি মহাবিপন্ন প্রজাতির বেঙ্গল টাইগার, মুখপোড়া হনুমান, লজ্জাবতী বানর, বিষধর সাপ, তক্ষক ও ছোট সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী এসব বাজারে বিক্রি হচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, আমাদের বনের আশপাশে প্রকাশ্য ও গোপনে দুই ধরনেরই বাজার রয়েছে। গবেষণায় আরও জানা যায় যে, বিশ্বে অবৈধ পণ্যের বাজার তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বন্যপ্রাণী।

সারা বিশ্বে জীববৈচিত্র্যের অংশ হিসেবে বন্যপ্রাণী রক্ষা করা জরুরি বিবেচিত। তাদেরকে তাদের বসতি এলাকায় নিরাপদে থাকতে দিতে হবে। এ কথা অনুসরণ করে আমরাও একই কথা বলতে চাই। কোনোভাবেই এইসব প্রাণী বিশেষ করে বিপন্ন প্রায় প্রাণীগুলো রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে যে কিছুই করছে না বা করেনি তা নয়। এক হিসাবে দেখা যায় গত ১ বছরে ৩ হাজার ১১টি পাখী, ১১২টি সাপও ৭৪৭টি অন্যান্য প্রাণী পাচারের সময় উদ্ধার করেছে বন অধিদপ্তর। এই উদ্ধারেই সীমিত থাকলে হবে না। যারা এদের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। তানা হলে এই ব্যবসা চলতেই থাকবে। এসব প্রাণী দেশ থেকে বিদেশে পাচার হয় সীমান্ত দিয়েই। সুতরাং তাদের আটকানো অসম্ভব কিছু নয়। দেশের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। যেমন সেন্টমার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কিছু আইন করা হয়েছে। সেই আইনগুলো সবাই যথাযথ পালন করছে কি-না বা আইনগুলো মানতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কি-না, সে বিষয়েও দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। গবেষণায় পাওয়া যায়, প্রতি বছর শতাধিক বন্যপ্রাণী বেচাকেনা হচ্ছে, শত শত প্রাণী উদ্ধার করাও হচ্ছে, তবে কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। গবেষণায় এতো বলা হয়েছে যে, এ ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত ৪ শতাধিক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন প্রশাসনের উচিত চিহ্নিত এইসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।

এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কেননা, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি মানে পরিবেশের ক্ষতি। এমনিতে সারা পৃথিবীতে পরিবেশের দারুণ ক্ষতি হচ্ছে। পৃথিবী ক্রমেই গরম হয়ে উঠছে। প্রয়োজনের তুলনায় বরফ গলছে বেশি। পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। সারা পৃথিবী এ থেকে মুক্তি পাবার আশায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরও চেষ্টা চালানো দরকার। আমরাও আমাদের মতো করে চেষ্টা করছি। এই চেষ্টা আরও বাড়াতে হবে। পরিবেশ দূষণ যেমন ক্ষতির কারণ, তেমনি বন্যপ্রাণী নিধনও ক্ষতির কারণ হতেই পারে।

জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ একে অপরের সঙ্গে জড়িত। আমরা আশা করি, পরিবেশ রক্ষার সঙ্গে সঙ্গে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করাও আমাদের কর্তব্য। বন বিভাগসহ প্রশাসন এ ব্যাপারে আরও তৎপর হলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান দেশপ্রেমিক সরকার দেশের অন্যান্য বিষয়ের দিকে যেমন নজর দিতে একের পর এক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে ঠিক, তেমনি বন্যপ্রাণী রপ্তানি ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। ঠিক তেমনি বন্যপ্রাণী রপ্তানি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এর মূল ব্যবস্থা হলো বন্যপ্রাণী ব্যবসায়ীদের শাস্তি দেয়া। ব্যবসায়ীরা এগিয়ে না এলে এই ব্যবসা আর চলবে না। প্রাণীরা রক্ষা পাবে। যেহেতু এটা অনেক লাভজনক ব্যবসা, তাই দমন করা একটু কঠিনই হবে। যেমন মাদক ব্যবসা। এতো কিছু করেও মাদক দমানো যাচ্ছে না। আমরা আশা করি, বন্যপ্রাণী রক্ষায় তেমন অসুবিধা হবে না।