গুলিস্তানে বিস্ফোরণ

কারণ অনুসন্ধান ও প্রতিকার জরুরি

প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

পর পর বেশ কিছু অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার গুলিস্তানে বিস্ফোরণ ঘটেছে। রাজধানীর ফুলবাড়িয়া বাস স্ট্যান্ডের বিপরীতে সিদ্দিকবাজার এলাকায় এক ভবনে ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক লোক। আর এখন পর্যন্ত ১৮ জন নিহত হয়েছেন। হতাহতের ঘটনা আরও বাড়তে পারে বলেই প্রতীয়মান। মঙ্গলবার সংঘটিত এ বিস্ফোরণের উদ্ধারকাজ বুধবার এই সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত চলমান রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান ও আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকেল ৫টার আগে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই বিস্ফোরণের ঘটনায় আগুন নিয়ন্ত্রণে ৭টি ইউনিট কাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এর পর এক ভীতিকর ও বীভৎস পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। বিস্ফোরণে পাশাপাশি দুটি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি ভবন সাততলা, আরেকটি পাঁচতলা। এর মধ্যে সাততলা ভবনের বেজমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয় তলা বিধ্বস্ত হয়েছে। আর পাঁচতলা ভবনের নিচতলা বিধ্বস্ত হয়েছে। নিচতলায় সেনেটারি দোকান এবং বাকি চারটি ফ্লোর ব্র্যাক ব্যাংকের অফিস। বিপুল এ বিস্ফোরণে নাগরিক জীবনে আতঙ্ক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়া স্বাভাবিক। আর ভুক্তভোগী পরিবারের জন্য নিঃসন্দেহে এ এক ভয়ানক অভিশাপ। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছি।

উল্লেখ্য, শীত কাটিয়ে গরমকালে অনুপ্রবেশের পর থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়ে চলেছে। আর সাম্প্রতিক সময়ে পরপর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে চলেছে। এমনকি গুলিস্তানের ভয়াবহ বিস্ফোরণের দিনই রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গোডাউনে আগুন লাগে। গত মঙ্গলবার রাত ১১টা ৫৪ মিনিটে এই আগুন লাগে, ১২টা ২৪ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। সুখবর যে, সেখানে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে একই দিন নাটোরের বড়াইগ্রামে আগুনে পুড়ে দুই শিশুসহ এক মায়ের মৃত্যু হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন আরও দু’জন। স্মর্তব্য, এর আগে ঢাকার সায়েন্স ল্যাব এলাকায় একটি ভবনে বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হন। গত শনিবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে বিস্ফোরণ ও আগুন লেগে নিহত হয়েছেন ৭ জন। এছাড়া ছোটখাটো অগ্নিদুর্ঘটনা লেগেই আছে, যা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গুলিস্তান বিস্ফোরণে যথার্থ কারণ এখনও উদ্ঘাটন সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে সেখানে সরকারের সংস্থাগুলো কারণ উদ্ঘাটনে কাজ শুরু করেছে। এদিকে গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারের ক্যাফে কুইন ভবনের বেজমেন্টে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনীর বোম্ব ডিসপোজাল টিম। তাদের মতে, সেখানে বিস্ফোরকের কোনো উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর অনেকটা একই মন্তব্য দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার। অবশ্য সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণগুলোকে সন্দেহজনক মনে করছেন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি)। কারণ যাই হোক, তা উদ্ঘাটন জরুরি।

একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে দৈন্যতার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। এর মধ্যে অগ্নিকাণ্ড কিংবা বিস্ফোরণ যাই বলা হোক না কেন, মানুষের ন্যূনতম স্বস্তিও কেড়ে নিচ্ছে। এর আশু অবসান হওয়া জরুরি। অগ্নিকাণ্ড সংঘটন অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। ঠেকাতে হবে হতাহতের ঘটনা। এজন্য প্রথমেই ব্যাপক জনসচেতনতা ও উদ্যোগ জরুরি। অর্থাৎ এটি একটি সমন্বিত কর্মকাণ্ড। এখানে কোনো রকম গাফিলতি ও ব্যর্থতা প্রত্যাশিত নয়। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আরও উদ্যোগী হবে- এটাই প্রত্যাশা।