ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পোলট্রি খামারের পরিস্থিতি

বাজার স্থিতিশীল করুন
পোলট্রি খামারের পরিস্থিতি

সময় মতো সমস্যা সমাধানে ব্রতী না হলে যা হয়, পোলট্রি শিল্পে তাই ঘটেছে। এ শিল্পে সংকট শুরু হয়ে মুখ্যত করোনা সংক্রমণকালে। বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিআইএ) মতে, ২০২০ সালের মার্চ মাসে মহামারি আঘাত হানার সময় দেশের ৬২ হাজার ৬৫৬টিরও বেশি পোলট্রি খামার বন্ধ হয়ে গেছে; যা মুরগি এবং ডিমের সরবরাহে ঘাটতি তৈরি করেছে। গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়। অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ডিম ও মুরগির মাংসের খুচরা দাম নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘদিন খামারিরা ভালো দাম না পাওয়ার কারণে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। বর্তমানে ১ লাখ ৫৮ হাজার ১৭৯টি খামারের মধ্যে ৯৫ হাজার ৫২৩টি উৎপাদনে রয়েছে। এর প্রভাবে প্রতিদিনের মুরগির উৎপাদন সক্ষমতা ৫ হাজার ২৭৩ টন থেকে কমে ৪ হাজার ২১৯ টনে নেমেছে। অর্থাৎ মাংসের উৎপাদন কমেছে ২৫.৭১ শতাংশ। একইভাবে ডিমের উৎপাদন প্রতিদিন ৬.৬৪ কোটি পিস থেকে কমে ৪.৩২ কোটি পিসে নেমেছে। যেখানে উৎপাদন কমেছে ২৫ ভাগ। অথচ বিয়ে-শাদি, পিকনিকসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের কারণে মুরগি ও ডিমের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী এ সরবরাহ না থাকার কারণেই বাজারে ডিম ও মুরগির দাম বেশি। অধিকন্তু পোলট্রি বাজার অস্থিরও বটে।

খামারিদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ পড়ছে ১৬৭ টাকা, যেখানে খামারি বিক্রি করছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। ঢাকার বাজারে এই মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা পর্যন্ত দামে। বাড়তি দামের কারণে খামারিরা দীর্ঘদিন পরে লাভের মুখ দেখলেও এই দামটি স্বাভাবিক নয় বলে দাবি করা হয়। অন্যদিকে প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ হচ্ছে ১১.৭১ টাকা, যেখানে খামারি লোকসান দিয়ে বিক্রি করছেন ৯.৪৫ টাকায়। ডিমে খামারিরা লোকসান গুনছেন এবং এটাও স্বাভাবিক দাম নয়। এই অবস্থার অবসানের জন্য খামারিরা সরকারের হস্তক্ষেপে ডিম ও মুরগির ‘যৌক্তিক দাম’ নির্ধারণের দাবি করেন। তাদের দাবি, খামারিদের উৎপাদন খরচের সঙ্গে ১০ থেকে ১৫ টাকা এবং প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচের সঙ্গে ২৫ থেকে ৫০ পয়সা পর্যন্ত লাভ রেখে বিক্রির অবস্থা তৈরি করতে পারলে খামারিরা লাভে থাকবে এবং বাজারেও যৌক্তিক দামে মুরগির মাংস ও ডিম বিক্রির পরিবেশ ফিরে আসবে। এদিকে করোনা-পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে মুরগির বাচ্চা, ফিডের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। জাহাজ ভাড়া, ডিজেল, বিদ্যুৎ, পরিবহণসহ সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। পরিস্থিতির কারণে খামারিরা কিছুটা লাভের মুখ দেখলেও অস্বাভাবিক বাজারের কারণে দাম পড়ে যাওয়ার শঙ্কাও তাদের রয়েছে।

সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়, পোলট্রি বাজারে হস্তক্ষেপ করার মতো হাতের উপস্থিতি রয়েছে, যারা এ বাজারটিকে অস্বাভাবিক রাখতে চায়। এতে তাদের ফায়দা। এদের অবশ্যই চিহ্নিত করতে হবে। উল্লেখ্য, দেশের ৮৪ শতাংশ উৎপাদন ক্ষুদ্র খামারিদের নিয়ন্ত্রণে। মাত্র ১৬ ভাগ উৎপাদন রয়েছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল খামারিদের কাছে। আর ক্ষুদ্র খামারিদের পক্ষে সারাদেশে এক হয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নেই। এই অবস্থায় বাজার তদারকির বিষয়টি সামনে চলে আসে। ২০১০ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে প্রধান করে একটা মূল্য নির্ধারণ কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু তা অকার্যকর রয়েছে। দাবি উঠেছে, এই কমিটির উচিত উৎপাদন খরচ বিবেচনায় নিয়ে মাসে অন্তত দু’বার যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেয়া। বিষয়টি আমলে নেয়া হোক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত