আপনাদের ভাবনা

রমজানে ভোক্তার ভোগান্তি কাম্য নয়

জিহাদ হোসেন রাহাত

প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বেশ কিছুদিন ধরে দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোয় উঠে আসছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন দামের খবর। তুলে ধরা হচ্ছে মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষের অবর্ণনীয় কষ্টের কথা। ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কথাও উঠে আসছে এসব সাহসী প্রতিবেদনে।

এতসব সংবাদের পরেও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভাঙা তো দূরের কথা, বরং এদের দৌরাত্ম্য এখন আঙুল ফুলে কলাগাছ। একদিকে বাড়ছে সাধারণ মানুষের হাহুতাশ, অন্যদিকে সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের সৃষ্টি হচ্ছে সন্তোষহীন অবস্থা, আস্থা হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। ফলে ফয়দা লুফে নিচ্ছে অসাধু সিন্ডিকেটগুলো।

প্রকাশ করতে বাধা নেই, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার যখন ২০০৮ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে, তখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অনেকটাই সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতে পেরেছিল তারা। ফলে সে সময়টায় সরকারের ওপর জনগণের আস্থা বেড়ে গিয়েছিল কয়েকগুণ। ফলস্বরূপ ২০১৪ সালের নির্বাচনে জনগণের প্রতিনিধি হয়ে আবারও ক্ষমতায় আসে দলটি। এরপর টানা তিন মেয়াদে সরকার গঠন করে দেশের দৃশ্যমান কিছু উন্নয়ন করলেও লাগামে রাখতে পারেনি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পাগলা ঘোড়াকে। যার কারণে একবেলা না খেয়ে থাকছে, দেশের অনেক দরিদ্র-পীড়িত পরিবার আবার দু’বেলা দু’মুঠো খেলেও তাদের ওই খাবার পান্তাভাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এমতাবস্থায়, এই চিত্র দেখে একজন ছাত্র ও দেশের নাগরিক হিসেবে আমি বলতেই পারি, যার পেটে ভাত নেই তার কিসের উন্নয়ন। গত ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের পর থেকে অসহনীয় মাত্রায় বাড়ছে পণ্যসামগ্রীর দাম। তার ওপর নেই কার্যকর বাজার মনিটরিং। উন্নয়নের রূপকার হিসেবে দেশে আওয়ামী সরকারের ব্যাপক পরিচিতি থাকলেও নেই উন্নয়নের অলংকার। এক্ষেত্রে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ পালন করতে পারে অলংকারের ভূমিকা।

একটা সময় ছিল, যখন একজন চাকরিজীবী টানাপড়নের মাধ্যমে সংসার চালাতে পারতেন, তবে দুঃখের বিষয় হলো- পণ্য-দ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে এখন ঋণ নিতে হচ্ছে অনেককে। এতে করে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে সাংসারিক অশান্তি। বাড়ছে পারিবারিককলহ। এই সংকটের উত্তরণ জরুরি।

আর মাত্র সপ্তাহ দুয়েক পরেই পবিত্র রমজান। আরব দেশগুলোসহ সারা বিশ্বে পবিত্র মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে রোজাদারদের সম্মানে ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ছাড় দেন ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ। বিভিন্ন দেশে সাওয়াবের উদ্দেশ্য রোজাদারদের খাওয়ানো হয় সাহরি-ইফতার। অথচ শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশে রয়েছে তার উল্টো চিত্র। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার পারছে না স্থীর হতে। ফলে বেশি মূল্যে পণ্য কিনে সাধারণ জনগণ দোষ চাপাচ্ছে সরকারের ঘাড়ে। এতে করে নষ্ট হচ্ছে সরকারের ভাবমর্যাদা। অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা কমতে শুরু করেছে। এ সমস্যার উত্তরণ জরুরি। জনগণের কথা বিবেচনায় সরকার কর্তৃক টিসিবিসহ বেশ কয়েকটি খাদ্যবান্ধব প্রকল্প-কার্যক্রম গ্রহণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। এমনকি প্রতি বছর মাহে রমজানে সরকারের তরফ থেকে নেয়া খাদ্য বিতরণ-বিক্রয় কার্যক্রমও সীমাবদ্ধ। ফলে দেশের মোট জনসংখ্যার একটি অংশ বরাবরই বঞ্চিত। দেখা যায়, পণ্য-দ্রব্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণিও দাঁড়াচ্ছে টিসিবির লাইনে, নিচ্ছে ভিজিডির চাল। ফলে অনেক সময় বঞ্চিত হচ্ছে নিম্নবিত্ত ও খেটে-খাওয়া মানুষ। এই সংকটেরও উত্তরণ জরুরি। পণ্য-দ্রব্যের ক্রমাগত এই ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের তরফ থেকে চেষ্টা করা হলেও তা নিয়ন্ত্রণে খেতে হচ্ছে হিমশিম। এর জন্য দায়ী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। জনগণকে আস্থায় নিতে এবং অন্যতম মৌলিক অধিকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে আসন্ন মাহে রমজানের আগেই ব্যবসায় সিন্ডিকেট ভাঙাসহ সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

বাড্ডা, ঢাকা