শিশুর প্রতিভা বিকাশে সহপাঠ্য কার্যক্রম

রিজভান আল হাসান

প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

নব্বইয়ের দশকে কতই না সমৃদ্ধ ছিল আমাদের সংস্কৃতি। ছেলেমেয়েদের দলবেঁধে বিদ্যালয়ে যাওয়া, দলবেঁধে খেলাধুলা করা, সাদা-কালো টেলিভিশনে বাংলা চলচ্চিত্র দেখাসহ আরও কত আয়োজন আমাদের জীবনকে নতুনভাবে বেঁচে থাকার জন্য উজ্জীবিত করত। সে সময়ের বন্ধুত্ব ছিল অটুট। বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ শিকল ভাঙা ছিল দুষ্কর। সবাই মিলে একসঙ্গে খেলাধুলা করা, পুকুরে বা নদীতে গিয়ে গোসল করা, স্বল্প খরচে বনভোজন করা ইত্যাদি ছিল নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার।

সেই সময় অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের যেমন পড়াশোনা করাতেন, তেমনি খেলাধুলারও সুযোগ দিতেন। কারণ খেলাধুলা শুধু শিশুর শারীরিক পরিবর্তনই ঘটায় না, শিশুর ব্যক্তিত্বেরও বিকাশ ঘটায়। বিদ্যালয় থেকে ফিরে বিকাল বেলায় যখন ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করত, তখন অভিভাবকরা তাদের খেলাধুলা দেখতেন এবং তাদের মাঝে যেন কোনো দ্বন্দ্ব না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতেন। কিন্তু সময়ের আবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সেই সংস্কৃতিরও পরিবর্তন এসেছে। এখন আর আগের মতো খেলাধুলা হয় না, নদীতে বা পুকুরে দলবেঁধে গোসল করতে দেখা যায় না, দেখা যায় না একসঙ্গে বসে আড্ডা দিতে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমাদের অভিভাবকরাও এখন উন্নত হয়ে উঠেছেন। তারা এখন ছেলেমেয়েদের শুধু পড়াশোনার জন্যই চাপ দেন, খেলাধুলা যে তার মনন বিকাশে সক্রিয় সৈনিক, তারা তা ভুলে গেছেন। সকাল বেলা প্রাইভেট বা কোচিং থাকে, তারপর বিদ্যালয়ে যাওয়া, তারপর বিকালের দিকে আবারও প্রাইভেট বা কোচিং থাকে। এত চাপের মধ্যে খেলাধুলা করার সময় কখন?

তারপরে অনেক অভিভাবকরা অল্প বয়সেই ছেলেমেয়ের হাতে মোবাইল তুলে দেন। এ কারণে সারাদিন বিভিন্ন কার্টুন চিত্র বা গেইম খেলতে ব্যস্ত থাকে শিশুরা। এগুলো দেখার সময় তারা জ্বালাতন কম করে তাই অভিভাবকরাও খুশি থাকেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা যায়, শিশুরা কার্টুন দেখা বা গেইম খেলা ছাড়া খেতেই চায় না। অনেক শিশু আবার ঘুমের মাঝেও মোবাইল ব্যবহারের নমুনা প্রদর্শন করে। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে অনলাইন গেইম খেলার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু এ ধরনের গেইম শিশুর প্রতিভা বিকাশের অন্তরায়। এখানে যেমন আর্থিক ক্ষতি থাকে, তেমনি মানসিক ক্ষতিও রয়েছে। অনেকে আবার মেগাবাইট ক্রয়ের জন্য চুরিসহ আরও বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়।

অভিভাবকদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত। অনলাইননির্ভর করে শিশুকে গড়ে তুললেই উন্নত অভিভাবক হওয়া যায় না। সন্তানকে সময় দিতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি মাঠে খেলার সুযোগ করে দিতে হবে। তাহলে শিশু যেমন খেলাধুলায় পারদর্শী হবে, তেমনি আরও অনেক প্রতিভা বিকশিত হবে। সে নিজেকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে পারবে। শিশুদের যদি আমরা পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সহপাঠ্য কার্যক্রমে (বিতর্ক, কুইজ, আবৃত্তি, লেখালেখি, গান, অভিনয়, খেলাধুলা ইত্যাদি) পারদর্শী করে গড়ে তুলতে পারি, তবে অচিরেই বাংলাদেশ একটি উন্নত ও আধুনিক দেশ হিসেবে পরিণত হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার পথ আরও বেগবান হবে।

শিক্ষার্থী

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা