মেট্রোরেলের যুগ আর আমরা নারীরা

জাবিন তাসনীম খান

প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সারাবিশ্বের সঙ্গে সঙ্গে নারী ক্ষমতায়নের ব্যাপক প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে বৈকি। মেট্রোরেলের মতো যুগান্তকারী যানবাহনের প্রধান চালক একজন নারী। যার পড়াশোনার বিষয় ছিল কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। বর্তমান নারীবান্ধব সরকারের এটি একটি কালজয়ী পদক্ষেপ। যে দেশে একসময় অধিকাংশ নারী ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কারের জন্য প্রাথমিকের অর্ধেক ধাপ অতিক্রম করতে পারত না, সেখানে এখন মেট্রোরেলের দায়িত্ব একজন নারীর কাঁধে। এটা ভাবলেই আশ্চর্য এক গৌরবে মন ভরে ওঠে। এইসব সাফল্য দেখার পরও যখন পত্র-পত্রিকায় দেখি তারপর বিজ্ঞাপনের পাতায় দেখি রং ফর্সাকারী নানা ক্রীমের চটকদার বিজ্ঞাপন। তখন ভাবি মেট্রোরেলের এই যুগে এসেও কেন, সেই এক বিশাল দল নিজেদের জীবন সতীদাহ প্রথার যুগের মতো কাটাচ্ছে! যেখানে গাত্রবর্ণের দ্বারা নির্ধারিত হয় মেয়েদের ভাগ্য। আমাদের দেশে শুধু বিয়ের বাজারে নয়, চাকরির বাজারেও অনেক সময় যোগ্যতার ভিত্তিতে এগিয়ে থাকে অপেক্ষাকৃত গৌরবর্ণের মানুষরা, বিশেষত নারীরা। তাছাড়া যৌতুক আর এসিড নিক্ষেপের মতো ঘটনা দিনপ্রতি খুচরা একটা দুইটা চলছেই। এছাড়া তো কর্মক্ষেত্রে নারীদের বেতন ভাতার বৈষম্য রয়েছে। অনেক কর্মক্ষেত্রে রয়েছে নারীবান্ধব শৌচাগারের অভাব। নারীদের দিনের একটা দীর্ঘ সময় শৌচাগারের অভাব বোধ করতে হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। ইদানীং আরও একটি ঘটনা চোখে পড়ছে, সেটি হলো বিশ্ববিদ্যালের এক ছাত্রীকে র‍্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন। আমাদের দেশে বিগত দশকগুলোর তুলনায় নারীদের উচ্চশিক্ষার হার অনেকাংশে বেড়ে গেছে। অভিভাবক তাদের কন্যা সন্তানদের বাসা থেকে দূরে ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলে নিশ্চিন্তে পড়তে পাঠাচ্ছেন কারণ এখন দেশে সন্ত্রাসবাদের সূচক বিগত সময়ের তুলনায় নিম্নমুখী। এমন সময়ে যদি এভাবে ছাত্রী নির্যাতনের হার বেড়ে যায়, তাহলে মেয়েদের আবার সেই তিমিরে ফিরে যেতে হবে। কারণ অনেক অভিভাবক তাদের মেয়েদের নিরাপত্তার কথাটি আগে ভাববেন। আমার মনে হয় এমন নারীদের প্রতি এসব বৈষম্য আর নির্যাতন অনেকটাই রুখে দেয়া সম্ভব যদি সরকারের সঙ্গে সঙ্গে আমরা নারীরাও আরেকটু সচেতন হই।

রং ফর্সাকারী ক্রিমের পেছনে পয়সা খরচ না করে, মূল্যবান বই কিনে নিজ অন্তর সমৃদ্ধ করি। নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে নিজেদের মন উজ্জ্বল করি। সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে একত্রে সোচ্চার হয়ে উঠি। কারণ আমরা এর মধ্যেই সতীদাহ প্রথার যুগ পার করেছি, লড়াই করেছি উচ্চশিক্ষা আর ভোট অধিকারের জন্য। সুতরাং অন্যায় ও সব বৈষম্যের বিরোধিতা করে নিজেদের অধিকার আদায়ের লড়াইটা আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়।

শিক্ষার্থী

রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ

মালোপাড়া, রাজশাহী