মাদক কারবারির তালিকা

পৃষ্ঠপোষকদেরও চিহ্নিত করতে হবে

প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মাদকের বিরুদ্ধে সরকার বরাবর জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে আসছে এবং প্রতিশ্রুতি মোতাবেক মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এসব অভিযানে অনেক মাদক কারবারি হতাহত হয়েছে, অনেককে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় যে, মাদকের গডফাদার বা পৃষ্ঠপোষকরা থাকছেন আড়ালে। আদালতের কাঠগড়ায় তাদের যেমন আনা সম্ভব হচ্ছে না, একইভাবে মাদক কারবারির তালিকায় তারা থাকছে উহ্য। সংগত কারণেই মাদক কারবারি ও পৃষ্ঠপোষকদের তালিকার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্বয়ং জাতীয় মাদকবিরোধী কমিটি। তাদের অভিযোগ, আলাদা আলাদা তালিকা করতে গিয়ে আসল কারবারিকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে তথ্যের ভুলে সাধারণ মানুষের নামও কারবারিদের তালিকায় ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। কমিটির সদস্যদের ধারণা, আইন প্রয়োগকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতীয় মাদকবিরোধী কমিটির চতুর্থ সভায় গুরুত্ব সহকারে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে প্রকাশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আইন অনুযায়ী মাদক-সংক্রান্ত অপরাধ সংঘটনে যিনি অর্থ বিনিয়োগ করেন, সরবরাহ করেন বা সহযোগিতা করেন তিনি পৃষ্ঠপোষক বা গডফাদার। অধিকাংশ সময় দেখা যায়, এ ধরনের ব্যক্তির কোনো না কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। কেউ কেউ আবার এলাকার জনপ্রতিনিধিও। যাদের সহযোগিতায় মাদক দূর করার কথা, তারা জড়িয়ে গেলে তখন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার জন্য পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে না। বিষয়টি অনভিপ্রেত।

উল্লেখ্য, নিয়ম অনুসারে প্রতি ৩ মাস পরপর মাদক কারবারিদের তালিকা হালনাগাদ হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাদক ব্যবসার পৃষ্ঠপোষক বা গডফাদারদের কোনো তালিকা হয়নি। হয়নি কোথাও মামলাও। কখনও জানাও যায়নি হাজার হাজার কোটি টাকার এই কারবারিতে মূল নেতৃত্ব দিচ্ছেন কারা? আবার সাধারণ মাদক কারবারিদের তালিকা লক্ষ্য করলেও বিভিন্ন সংস্থার তৈরি তালিকার মধ্যে গরমিল লক্ষ্য করা যায়। দেখা যায়, কোনো তালিকায় কাউকে বড় মাদক কারবারি বলা হচ্ছে, আবার অন্য সংস্থার তালিকায় রাখাই হচ্ছে না তাকে। অনেকে আবার অভিযোগ করেন, ভয় দেখিয়ে নাম ঢোকানোরও; কিন্তু কোনো বাহিনীর কাছেই নেই পৃষ্ঠপোষকদের নাম। সম্প্রতি এরকম গরমিলের কারণে কক্সবাজারে ইয়াবা কারবারিদের নতুন তালিকা নিয়ে বেশ হুলস্থূল হয়েছে। এটা শুধু কক্সবাজার জেলায় নয়। সারা দেশেই বিভিন্ন জেলায় মাদক কারবারিদের এমন তালিকা রয়েছে। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বস্ত করে বলেছেন, তালিকায় নাম এলেই কেউ দোষী হয়ে যাবে না। যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। প্রশ্ন উঠছে, তবুও কেন এই বিশৃঙ্খলা? সমাধানই বা কী? জাতীয় মাদকবিরোধী কমিটির সভায়ও এই প্রশ্ন উঠেছে।

এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, পৃষ্ঠপোষকদের না ধরতে পারলে মাদক ব্যবসা বন্ধ করা কঠিন। কারণ হাজার কোটি টাকার এ কারবার অবশ্যই চুনোপুঁটি দিয়ে হয় না। পেছনে থাকে রাঘববোয়াল। তাদের তালিকাভুক্ত করে আইনের আওতায় না আনলে মাদক ব্যবসা কমবে না। তাই সংশ্লিষ্টদের এই নিয়ে ভাবতে হবে। আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮-এর ৪০ ধারায় বলা রয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি কোনো মাদকদ্রব্য অপরাধ সংঘটনে অর্থ বিনিয়োগ করিলে অথবা অর্থ সরবরাহ করিলে অথবা সহযোগিতা প্রদান করিলে অথবা পৃষ্ঠপোষকতা করিলে তিনি সংশ্লিষ্ট ধারায় নির্ধারিত দণ্ডের অনুরূপ দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’ এই অবস্থায় মাদক পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা আইনি দায়িত্বও বটে।