বৃহত্তর পরিসরে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে ইউক্রেন যুদ্ধ

রায়হান আহমেদ তপাদার, গবেষক ও কলামিস্ট, [email protected]

প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্ব বর্তমানে দুটি বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশ ও ব্রিটেন; অন্যদিকে রাশিয়া, চীন, বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, ইরান, কিউবা ইত্যাদি দেশ। ভারত যদিও নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে, তবে ঐতিহাসিক কারণেই দেশটি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার পক্ষেই থাকবে। পাকিস্তানও তা-ই করবে। আরব ও আফ্রিকার অন্যান্য দেশ, মধ্য এশিয়া ও বাল্টিক অঞ্চলের দেশগুলো পরিস্থিতি বুঝে যে কোনো সময় যে কোনো দিকে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারে। এ সবই নির্ভর করছে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ রুশ আক্রমণের মুখে কতক্ষণ টিকে থাকে তার ওপর। সংঘাত যখন শুরু হয়, তখন কাগজে-কলমে রাশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিধর সামরিক শক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের পরই তাদের অবস্থান। সামরিক শক্তি বিবেচনায় ইউক্রেন বিশ্বে ২২তম, এ হিসেবে রাশিয়া-ইউক্রেনের চেয়ে ১০ গুণ বেশি সুবিধা পাওয়ার কথা। যদিও বিষয়গুলো মূল্যায়ন করা কঠিন; কিন্তু এ যুদ্ধ থেকে দেখা যাচ্ছে যে মতবাদ, প্রশিক্ষণ, নেতৃত্ব ও নৈতিক জোর অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৫ সালে সোভিয়েত আমলের সেনাবাহিনী থেকে পশ্চিমা ধাপের সেনাবাহিনীতে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। এ যুদ্ধে তারই সুফল তারা পাচ্ছে। সম্প্রতি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধ বন্ধে চীন একটি রূপরেখা দিয়েছে। যুদ্ধরত দুই পক্ষকেই সুবিধা দেয়ার কথা বলা হয়েছে বেইজিংয়ের প্রস্তাবে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার চাঁছাছোলা সমালোচনা করে চীন তার স্বঘোষিত শান্তি অন্বেষণের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। এ সপ্তাহে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিন গ্যাং যখন ইউরোপ সফর করছেন, সে সময় বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে ১২ দফা শান্তি পরিকল্পনা উত্থাপন করা হলো। এই সংঘাতের সব কটি পক্ষই তাদের নিজ নিজ পক্ষের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। এ সব পরিকল্পনার সংক্ষিপ্তসার হলো যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে।

ইউক্রেন বলছে, রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তারা প্রতিরোধ করে যাবে এবং ওয়াশিংটন বলছে কোনো ধরনের দ্বিধা ছাড়াই তারা ইউক্রেনকে সহায়তা জুগিয়ে যাবে আর রাশিয়া বলছে তারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শুধু ইউক্রেনীয়দের বিরুদ্ধে নয়, গোটা পশ্চিমের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

এ প্রেক্ষাপটের মধ্যেই চীন শান্তি আলোচনার জন্য একটি রূপরেখা প্রস্তাব দিল। কিন্তু সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় হলো, সেখানে সবকিছুর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্রদের দায়ী করা হয়েছে।

চীনের এই কূটনৈতিক চাল রাশিয়ান কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া ঝাখারোভা বলেছেন, চীনের এ পরিকল্পনার অর্থ হলো ‘ইউক্রেনে পশ্চিমারা যে অস্ত্র ও ভাড়াটে সৈন্যের জোগান দিচ্ছে, তা বন্ধ হওয়া। তিনি আরও বলেন, এই পরিকল্পনার অভিপ্রায় হলো, ‘হিংসার অবসান, ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থানে ফিরে যাওয়া, জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবে যে নতুন সীমানার বিন্যাস তৈরি হয়েছে, তার স্বীকৃতি প্রদান এবং ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ ও নাৎসিমুক্ত করা ও ইউক্রেন ভূখণ্ড থেকে যে ধরনের হুমকি সৃষ্টি হয়েছে, তার অপসারণ। চীনের প্রস্তাবে এই যুদ্ধের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেন কোনো পক্ষকেই দায়ী করা হয়নি। এর পরিবর্তে, সহিংসতা উসকে দেয়ার জন্য সাধারণভাবে পশ্চিমকে ও বিশেষভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে খোলামেলা সমালোচনা করা হয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইউক্রেন আগ্রাসন থেকে কীভাবে সরিয়ে আনা যাবে, সেটা জানা বেশ কঠিন। আমার দৃষ্টিতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোট ইউক্রেন ও ক্রিমিয়াতে রাশিয়ার আগের আগ্রাসন থামাতে যথার্থ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছিল। এ ব্যর্থতা ছিল জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের ব্যর্থতা। জর্জিয়ায় আগ্রাসন ও ক্রিমিয়া অন্তর্ভুক্ত করার পর যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল, তা অনেকটা বাহুতে হালকা করে চাপড়ে দেয়ার মতো একটা ব্যাপার।

এবারে আগ্রাসন শুরুর আগে মাসের পর মাস ধরে রাশিয়া যখন ইউক্রেন সীমান্তে সেনা সমাবেশ করছিল, এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো শাস্তি দেয়ার হুমকি দেয়া ছাড়া কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। কিন্তু সেসব হুমকি পুতিন উপেক্ষা করেছেন। আগ্রাসন যখন আসন্ন হয়ে উঠল, এ সময়ে রাশিয়াকে নিবৃত্ত করার চূড়ান্ত প্রচেষ্টা না চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বরং দূতাবাস বন্ধ করে ও কূটনীতিকদের সরিয়ে আগ্রাসনের সবুজ সংকেত দেয়। ২০০৮ সালে জর্জিয়াতে রাশিয়া আগ্রাসন চালায়। ২০১৪ সালে অবৈধভাবে ক্রিমিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে নেয় মস্কো। ওই বছরই ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সরাসরি সমর্থন দেয় রাশিয়া। এ তিন ঘটনাতে মনে না হলেও ইউক্রেনে গত বছর রাশিয়া যে আগ্রাসন শুরু করেছে তাতে স্পষ্ট যে ২০২৩ সালে এসেও ইউরোপ মহাদেশে যুদ্ধ একটি বাস্তবতা। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সে সময়কার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাটোকে অচল বলে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু আগ্রাসন শুরুর পরে জোটটিই শক্তিশালী হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের মতো নিরপেক্ষ দেশগুলোও জোটটি শুরুর ৭০ বছর পর এসে সদস্য হওয়ার আবেদন করছে পশ্চিমাদের সামরিক সহায়তা, বিশেষ করে নতুন সামরিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় এ ধরনের পাল্টা-আক্রমণের পরিকল্পনা সাজাতে আরও অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে। আবার রাশিয়া সম্প্রতি উলে¬খযোগ্য পরিমাণ ভূমি হারিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে তাদের রিজার্ভ বাহিনী থেকে নতুন করে নিয়োগ এবং পুরোপুরি ভেঙে পড়া লজিস্টিকব্যবস্থা পুনর্র্নিমাণ করতে হবে। যুদ্ধের শুরু থেকেই রাশিয়া বড় আকারের আক্রমণাত্মক অভিযানের ক্ষেত্রে পরিকল্পনাহীনতার পরিচয় দিয়ে আসছে। যদিও শীতকালে দুইপক্ষই যে ধীরে চলো নীতিতে এগিয়েছে এর কারণ হতে পারে, ভবিষ্যতে বড় ধরনের আক্রমণ পরিচালনার জন্য তারা সামরিক রসদ জোগাড়ের পাশাপাশি নতুন প্রস্তুতিও নিচ্ছে।

যাহোক, যুদ্ধের দ্বিতীয় বছরে এসে আমরা এমন সব ঘটনাপ্রবাহ দেখতে চলেছি, যা প্রথম বছরে ঘটেনি। এই যুদ্ধের প্রথম বছরের ঘটনাপ্রবাহ থেকে ছয়টি শিক্ষা বেরিয়ে এসেছে। এ সব শিক্ষা থেকে ধারণা করা যায় এ যুদ্ধের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। ইউক্রেনের জনগণের প্রতিরোধের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে সেটা সত্যি। কিন্তু সঠিক ও পর্যাপ্ত যুদ্ধ অস্ত্র, সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি না থাকলে প্রথাগত যুদ্ধে তারা অনেক আগেই হেরে যেত। তখন হয়তো তাদের দেশজুড়ে গেরিলাযুদ্ধ পরিচালনা করতে হতো।

ইউক্রেনের কাছে এখন হিমার্স রকেটব্যবস্থা, পদাতিক যুদ্ধের উপযোগী যান, ট্যাংক ও যুদ্ধবিমান দেয়ার আলোচনা সবখানেই চলছে। কিন্তু রাশিয়ার তুলনায় অনেক ছোট সামরিক বাহিনী হওয়ায় ইউক্রেনের সব ধরনের সামরিক সহায়তা প্রয়োজন। ট্যাংক দিয়ে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী সাজালেই হবে না, সেগুলোর জন্য পর্যাপ্ত গোলাবারুদের জোগানও দিতে হবে। কেননা, সেগুলো উৎপাদনের সক্ষমতা ইউক্রেনের নেই। দীর্ঘস্থায়ী লড়াইয়ের সক্ষমতা যাতে গড়ে ওঠে, সে জন্য আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের সঙ্গে সঙ্গে পর্যাপ্ত গোলাবারুদের জোগান দিতে হবে ইউক্রেনকে। ইউক্রেনে যুদ্ধরত ও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিয়োজিত বিদেশিদের হতাহতের ভুল তথ্য প্রায়ই প্রকাশিত হয়। গত ২৫ জানুয়ারি তুরস্কের একটি ওয়েবসাইটে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের তথ্যের বরাতে দাবি করা হয়, এ যুদ্ধে এ পর্যন্ত ন্যাটোর কয়েক হাজার সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কয়েকশ’ সেনা আছেন। যদিও এ দাবি তৎক্ষণাৎ নাকচ করেছে ন্যাটো। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, তারা শুধু ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়ছে না, ন্যাটোর বিরুদ্ধেও লড়ছে। পশ্চিমা যোদ্ধাদের আটকের মাধ্যমে রাশিয়ার জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সেই বার্তাই দিতে চায় ক্রেমলিন। মস্কোর পক্ষ থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে পশ্চিমাদের সঙ্গে সংঘাত বলে চিত্রিত করার প্রচেষ্টা রয়েছে।

মস্কো এও মনে করে যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের জনগণও তাদের এই মতের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করে। এ বিশ্বাস থেকেই ২০২২ সালের মার্চ মাসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ¬াদিমির পুতিন বিদেশি যোদ্ধাদের প্রতি ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলমুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। নিউজউইক জানাচ্ছে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর তথ্যমতে, ১৬ হাজার বিদেশি সেনা রাশিয়ান বাহিনীর পক্ষে ইউক্রেনে লড়াই করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ভাগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন এ মাসে তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে ঘোষণা দেন যে, এক কোটির বেশ মার্কিন নাগরিক রাশিয়ার পক্ষে লড়তে তাদের গ্রুপে নাম লিপিবব্ধ করেছে। যদিও ভাগনার গ্রুপ তাদের নতুন নিয়োগকৃত বেশির ভাগ সৈন্য বন্দিদের থেকে নিয়েছে। এরপরও বিদেশি সেনা নিয়োগের ক্ষেত্রে রাশিয়ার ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলেই মনে হয়। রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে নামা বেশির ভাগ ভাড়াটে সেনা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলো থেকে আসা। এই সংঘাতে এসব দেশের ভাড়াটে যোদ্ধারা দুই পক্ষেই লড়ছে বলে সন্দেহ করা হয়। সার্বিয়ান নাগরিকদের অনেকেই সার্বিয়াতে পশ্চিমের যে ঐতিহাসিক ভূমিকা, তাতে ভীষণ ত্যক্ত-বিরক্ত। ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনে রাশিয়ান বাহিনীর পক্ষে কয়েকটি সার্বিয়ান গ্রুপ যুদ্ধ করে আসছে। গত মাসে সার্বিয়ান কর্তৃপক্ষ জানায়, আরও কিছু সার্বিয়ান নাগরিক রাশিয়ার পক্ষে লড়াইয়ে যুক্ত হয়েছে বলে যে প্রতিবেদন পাওয়া গেছে, সেটা তারা তদন্ত করে দেখছে। এদিকে ইরানের তৈরি ড্রোন যাতে রাশিয়ানরা পরিচালনা করতে পারে, সে জন্য ইরানি সেনা ও বিশেষজ্ঞরা ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত অক্টোবর মাসে রাশিয়ান বাহিনীর অবস্থানে হামলায় ১০ ইরানি নিহত হন। রাশিয়ার পক্ষে শত শত সিরিয়ান যোদ্ধা যুদ্ধ করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই যুদ্ধে দুই পক্ষেই আরও ভাড়াটে যোদ্ধার অংশগ্রহণের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে।

২০২২ সালের আগস্ট মাস থেকে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, ইউক্রেনে তাদের দখলকৃত এলাকা পুনর্গঠনের জন্য উত্তর কোরিয়া থেকে ১ লাখ স্বেচ্ছাসেবক আসছেন। এ সংখ্যা অনেকটাই কাল্পনিক। কিন্তু কিয়েভের পক্ষে লড়াই করার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া থেকে হাতে গোনা কয়েকজন ইউক্রেনে গেছেন। এ ছাড়া, অল্প কয়েকজন হলেও মার্কিন যোদ্ধা রাশিয়ার পক্ষে লড়াইয়ে নেমেছে। তাদের সঙ্গে মার্কিন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আফগান কমান্ডাররাও যুদ্ধ করছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দুই দেশের মধ্যকার প্রথাগত যুদ্ধের চেয়ে ভিন্ন একটি যুদ্ধ। বস্তুগত সহযোগিতার অতিরিক্ত দুই পক্ষেই বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার ভাড়াটে সেনা অংশ নিচ্ছেন। যত বেশি ভাড়াটে যোদ্ধা এই যুদ্ধে অংশ নেবেন, এ যুদ্ধ তত বেশি বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া যখন ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করেছিল, তখন বেশির ভাগ সামরিক বিশ্লেষক আশা করেছিলেন, দিনকয়েকের মধ্যে কিয়েভের পতন ঘটবে। কিন্তু এ যুদ্ধ এক বছর পেরিয়েছে এবং শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেনের বাহিনী অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন করে চলেছে। প্রকৃতপক্ষে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এস্পারসহ অনেকে এখন বিস্ময় প্রকাশ করে বলছেন, যুদ্ধ কি তাহলে অচলাবস্থার মধ্যে গিয়ে পড়ল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখন পর্যন্ত অচলাবস্থার খুব কাছে পৌঁছায়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বাইরের দেশগুলোর সহায়তায় এ যুদ্ধ আরও দীর্ঘদিন ধরে চলবে। মাঝেমধ্যে জোয়ার উঠবে, আবার মাঝেমধ্যে ভাটার টানও পড়বে। ইউক্রেন যুদ্ধে এমন অনেক কিছু ঘটবে, যা আগে ঘটেনি।