ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রমজানের আগেই বাজারে উত্তাপ

প্রতিশ্রুতি কেন বাস্তবায়িত হয় না?
রমজানের আগেই বাজারে উত্তাপ

দায়িত্বশীলরা প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষাবধি রমজানে বাজারের উত্তাপ কমানো যায় না। বরং বছরের পর বছর সব কিছু উপেক্ষা করে পাল্লা দিয়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়া যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর মতবিনিময় সভা এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের একাধিক বৈঠকে ব্যবসায়ীরা ‘আশ্বাস’ দিয়েছিলেন, রমজান ঘিরে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না। সেই ‘আশ্বাস’ সভা-সেমিনারেই রয়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতির ছিটেফোঁটাও মিলছে না বাজারে। রমজান শুরু হওয়ার আগেই আরেক দফা বেড়েছে কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম। ইফতারিতে ব্যবহৃত পণ্যের দাম বেড়েছে বেশি। কয়েকটির দাম এতটাই বেড়েছে, যা অনেকের নাগালের বাইরে চলে গেছে। যেমন রমজানে ইফতারি তৈরিতে সাধারণত ছোলা, অ্যাঙ্কর ডাল ও বেসন বেশি ব্যবহার হয়। রোজার দুই সপ্তাহ বাকি থাকলেও এরই মধ্যে বেড়ে গেছে এসব পণ্যের দাম। গত এক মাসে ছোলার দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা। ছোলার সঙ্গে ছোলাবুটের দরও বেড়েছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এ মানের বুট কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। পিছিয়ে নেই অ্যাঙ্কর ডাল। একই সময়ে এ ডাল কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এ ছাড়া বেসনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা।

উল্লেখ্য, রমজানে যাতে নিত্যপণ্যের বাজার টালমাটাল না হয়, সে জন্য গত ১২ ফেব্রুয়ারি এফবিসিসিআই নিত্যপণ্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল। এরপর গত ২৬ ফেব্রুয়ারি একই উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে ভোক্তা অধিদপ্তর। দুটি সভায় ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন, পর্যাপ্ত পণ্য মজুত আছে। রমজানে দাম বাড়বে না। তবে তাদের সেই প্রতিশ্রুতি দেখা যাচ্ছে না বাজারে। বারবার সভা করে প্রতিশ্রুতি দিয়েও কেন ব্যবসায়ীরা রাখেন না তা প্রশ্ন বটে। অন্যদিকে ৪ জানুয়ারি দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভা শেষে বানিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, দেশের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে, সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। তিনি আসন্ন রমজান মাসে দাম বাড়ার কোনো আশংকা নেই বলেই আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে এসব কথামালাই রয়ে গেল, পণ্যের দাম বাড়ানো ঠেকানো গেল না। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক মাসে ছোলার দাম প্রায় ৬ এবং ১ বছরে ২৩ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া অ্যাঙ্কর ডাল এক বছরে কেজিতে দাম বেড়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ। করোনার পর থেকে ভোজ্যতেলের বাজারে শুরু হয় অস্থিরতা। এখনও চলছে সেই ধারাবাহিকতা। বেশিরভাগ সময় সরকার বেঁধে দেয়া দাম উপেক্ষিত হয়েছে বাজারে। গত ছয় মাসে চারবার দাম বাড়ানোর পরও চিনির বাজারের হৈচৈ থামেনি। চিনি আমদানিতে বিশেষ সুবিধা দেয়া হলেও বাজারে দাম কমেনি। আর মাছ-মাংস এখন অনেকটাই স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। মধ্যবিত্তরাও মাছ-মাংস কিনতে গিয়ে দ্বিধায় পড়ছেন।

রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আদৌ আনা সম্ভব হবে কীনা এই নিয়ে সাধারণ মানুষ সন্দিহান। তবুও তাদের আশা সরকার পণ্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানোর সব ধরনের প্রচেষ্টা নিয়ন্ত্রণ করবেন। বাজার তদারকি জোরদার করবে। সাধারণ মানুষের ন্যূনতম স্বস্তি অন্তত নিশ্চিত করবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত