ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রকল্প বাস্তবায়নে শূন্য অগ্রগতি

যথাযথ পর্যালোচনা জরুরি
প্রকল্প বাস্তবায়নে শূন্য অগ্রগতি

সরকার জনস্বার্থে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে। প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণ উপকৃত হয়, পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার সক্ষমতা প্রকাশ পায়। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি সরকারের বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ ঘটে, ক্ষেত্রবিশেষে শূন্য অগ্রগতির বিষয়ও লক্ষ্য করা যায়। সদ্য প্রকাশ, রীতিমতো শূন্য অগ্রগতি নিয়েই অর্থবছর পার করেছে সরকারের ২৩৬টি প্রকল্প। এখানেই শেষ নয়- এক টাকাও খরচ করতে পারেনি, রয়েছে এমন ৯৪টি প্রকল্পও। আবার কিছু টাকা খরচ করতে পারলেও প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি শূন্য। শুধু অফিস ব্যবস্থাপনা এবং ভাড়া করা গাড়ির খরচ জোগান দিয়েছে। এছাড়া ৫৫৪টি প্রকল্পে অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। আইএমইডির ‘২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে প্রকল্প বাস্তবায়নের এমন চিত্র। বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে এমন চিত্র শুধু বিস্ময়ই নয়, বড় ধরনের দায়িত্বহীনতার পরিচয়। এতে বোঝা যায়, কোনো ধরনের জবাবদিহি না থাকায় এমনটি ঘটেছে। অবশ্য প্রকল্পের এমন বেহাল বাস্তবায়ন নিয়ে সংশ্লিষ্টরা অজুহাত দেখাতে কসুর করেননি। আর্থিক সংকটের ধাক্কাসহ ১২ অজুহাত তুলে ধরা হয়েছে। সংগত কারণেই বিষয়টি পর্যালোচনার দাবি রাখে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে যে যুক্তি দেয়া হয়, সেগুলো হলো- অর্থছাড় না হওয়া বা দেরিতে অর্থছাড় হওয়া, ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়া, দরপত্র আহ্বানে দেরি, দরপত্র রেসপন্সিভ না হওয়া এবং প্রকল্পের ঋণ না পাওয়া। এছাড়া দাবি করা হয়, অপ্রতুল বরাদ্দ, মামলাজনিত সমস্যা, ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধন, আরডিপিপি অনুমোদনে বিলম্ব, দরদাতার সঙ্গে চুক্তিতে দেরি এবং কোভিড-১৯ মহামারির ঘটনাও দায়ী। তবুও একসঙ্গে এতগুলো প্রকল্প অবাস্তবায়িত থাকা স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেয়া যায় না। দায় তো কাউকে বহন করতে হয়। এই প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, এসব ঘটনার দায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ও এড়াতে পারে না, তবে মূল দায়-দায়িত্ব হচ্ছে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) এবং ওই সব মন্ত্রণালয়ের। অবশ্যই এমন একটি অভিযোগও রয়েছে, এডিপিতে প্রকল্প গ্রহণে যেমন রাজনৈতিক বিবেচনাসহ নানা দুর্বলতা আছে, তেমনই বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও অদক্ষতা রয়েছে। এমন ঘটনার কারণে হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয় হয়। কিন্তু সেদিকে কারও কোনো নজর নেই। অর্থাৎ এখানে প্রকল্প বাস্তবায়নে গোড়ায় গলদ রয়েছে। এখন সময় এসেছে প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়ার।

প্রকল্প গ্রহণে সরকারের সদিচ্ছার প্রমাণ ঘটে। সংগত কারণেই এগুলো যথাযথভাবে পালন করা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হয়ে পড়ে। পাশাপাশি এটাও বাস্তবতা, প্রকল্প গ্রহণ থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত এই বিভিন্ন পর্যায়ে অনেকে সংশ্লিষ্ট থাকেন। সবার প্রচেষ্টাতেই একটি টেকসই প্রকল্প রচিত হয়। তারপরও বলা যায়, প্রকল্প অবাস্তবায়িত থাকা অবশ্যই কারও না কারও দায় আছে। এজন্য অবশ্যই জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এভাবে বাস্তবায়ন পিছিয়ে থাকলে ব্যয়ও বেড়ে যাবে, যা শেষাবধি জনগণকেই বহন করতে হয়। সংগত কারণেই প্রকল্প বাস্তবায়নের কালক্ষেপণ কাম্য নয়। তাই অগ্রগতি সাধনে অবশ্যই যথাযথ পর্যালোচনা করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত